Home 2nd Featured রাজনীতিতে অশনি সংকেত

রাজনীতিতে অশনি সংকেত

Mukto Chinta
০ comment ৫৭ views

রবিউল ইসলাম, ঢাকা : আন্দোলনরত প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মধ্যে আলোচনার সব পথ আপাতত বন্ধ হয়ে গেছে। কেউ কারো দাবি মানতে নারাজ। আলোচনার পথও রুদ্ধ। বিএনপি’র শীর্ষ সব নেতাই এখন সরকারের কারাগারে। আর আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচনের পথে। এরই মধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার তোরজোরে রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।


নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অধীনে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বহুদিন ধরেই রাজপথে আন্দোলন করে আসছে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। আওয়ামী লীগ গত দেড় দশক ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলেও মাত্র এক বছর আগে থেকে বিএনপি সভা-সমাবেশ করার অনুমতি পাচ্ছে। তার আবার বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর নজরদারীর কারণে। গত বছরের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কয়েকজন র‌্যাব কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। বিনা বিচারে হত্যা, খুন, গুম এবং ক্রসফায়ার নামক অনৈতিক হত্যা বন্ধের জন্য চাপ দিতে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। প্রায় একই সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে জাতি সংঘের পক্ষ থেকেও নিন্দা জানানো হয়। এরপর আরও কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় বাংলাদেশ সরকারের নাম প্রকাশ না করা বহু কর্মকর্তা ও সমর্থকদের উপর।  এসব নিষেধাজ্ঞাই মূলত বিএনপিকে নির্বিঘেœ সভা-সমাবেশ করার পথ সুগম করে দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখ বিএনপি ঢাকায় একটি বড় মহাসমাবেশ করে যেখানে লাখ লাখ কর্মি-সমর্থকরা জড়ো হয়। এই সমাবেশ বন্ধ করতে নানাভাবে চেষ্টা করে পুলিশ। সমাবেশের দিন বেশ কয়েকটি বাসে আগুন ধরানো হয়। পুলিশসহ বিএনপি সমর্থকদের কয়েকজন নিহত হবার ঘটনাও ঘটে। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশ আবারও হার্ড লাইনে যায়। শুরু হয় গণ গ্রেফতার। এই গ্রেফতার অভিযানে বিএনপির প্রায় সব শীর্ষ নেতাকেই গ্রেফতার করা হয়। এখনও যারা গ্রেফতারের বাইরে আছেন তাদেরকেও সহসাই জেলে ঢুকানো হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। আন্দোলন দমনে নেতা-কর্মিদের গণহারে গ্রেফতারেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়টিতেও তালা মেরে দেয়া হয়।
বিএনপি’র অন্তত ১৯ হাজার নেতা-কর্মিকে গত এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রেফতার করার পাশাপাশি ৩০ হাজারেরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। আর এই সুযোগেই নির্বাচন কমিশন বিএনপি’র তালাবদ্ধ অফিসে একটি চিঠি পাঠায় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে। অথচ তার মাত্র এক সপ্তাহ আগেই নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিলো ‘এই মুহূর্তে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই।’  আর এখন বিএনপির প্রায় সব নেতা যখন জেলের ভেতরে তখন বলছে ‘নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সুষ্ঠুু পরিবেশ বিরাজ করছে।’ বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেছেন, সরকার ও আওয়ামী লীগ সমস্যা সমাধানের সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে। তারা চায় আগের মতোই স্বৈরাচারী কায়দায় আরও একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন। যেখানে মানুষ তার ভোট নিজের ইচ্ছামতো দিতে পারবে না। তিনি আবার বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিবে না। একইসাথে খালেদা জিয়াসহ আটক সকল নেতা-কর্মিকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।’


এর আগে সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমরা কারো সাথে কোনো সংলাপে বা আলোচনায় বসবো না। তবে হ্যাঁ, যদি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন সংলাপে বসে তাহলে আমিও সংলাপে বসবো বিএনপির সাথে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই কথার পর স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আওয়ামী লীগ আর সমঝোতার পথে নেই। তারা একতরফা আরও একটি নির্বাচনের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনও সেই প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে।
অন্যদিকে বিএনপি’র সব নেতাদের গ্রেফতার করা হলেও হরতাল-অবরোধ চলছেই। নতুন করে আরও ৪৮ ঘন্টার অবরোধের ডাক দেয়া হয়েছে। আগামীতে টানা হরতাল আর অবরোধের কর্মসূচি আসবে বলে জানা গেছে। এরই সাথে বিএনপি’র নিষ্ক্রিয় নেতা কর্মিরাও এখন সক্রিয় হচ্ছেন এবং আন্দোলনে একাত্ব হচ্ছেন। যে সব নেতা দল ছেড়ে গিয়েছিলেন তারাও এখন সক্রিয় হয়ে বিএনপির পক্ষে কথা বলতে শুরু করেছেন। এর ফলে আগামীতে রাজনৈতিক অস্থিরতা যে আরও বাড়বে তা নিয়ে আর কোনো সন্দেহ নেই।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির সাথে জনগন নেই। তারা কেবল সন্ত্রাস করে নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছে। তিনি পুলিশ দিয়ে বিএনপির সন্ত্রান দমনের ঘোষণা দেন।
অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতায় টাকার বিপরীতে ডলারের দাম দেড় বছরে প্রায় দ্বিগুন হয়ে এখন ১২৫ টাকা হয়েছে। চলতি মাসেই দেড়’শ টাকা হতে পারে বলে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন। আর নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ডলারের দাম বেড়ে দেড়’শ ডলার হবার আশঙ্কা রয়েছে। জিনিসপত্রের দামও হু হু করে বাড়ছে। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ তো রয়েছেই। দেশে বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভও কমে যাচ্ছে পাল্লা দিয়ে। দুই বছর আগে যেখানে ডলারের মজুদ ছিলো ৪৮ বিলিয়ন ডলার সেখানে এখন মজুদ নেমে এসেছে মাত্র ১৯ বিলিয়ন ডলারে। কিন্তু রিজার্ভের বাস্তব চিত্র নাকি আরও কম।
সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি অবাধ নির্বাচনের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব বহুদিন থেকেই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে। কিন্তু সেদিকেও সরকার কোনো ইতিবাচক মনোভাব দেখায়নি। জাতিসংঘও একই মত প্রকাশ করেছে বারবার। বিরোধীমত দমনে সরকার ও পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের অনেক দেশ সেসব নিয়েও তেমন আগ্রহ দেখায়নি সরকার। এখন সবকিছু উপেক্ষা করে বিগত নির্বাচনগুলোর মতোই আরও একটি নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। আর তাই সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন এখন অনিশ্চিত যাত্রায় রয়েছে বলে অভিজ্ঞদের মতামত। সবকিছু বিশ্লেষণ করে সামনে রাজনীতিতে অশনি সংকেত দেখছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা।

You may also like

Leave a Comment

Muktochinta

Multochinta is a famous news media from New York. 

Subscribe my Newsletter for new blog posts, tips & new photos. Let's stay updated!

All Right Reserved. 2022 emuktochinta.com