Home নিউইয়র্ক কমিউনিটিতে স্বঘোষিত এক ‘অ্যাটর্নী’র প্রতারণা

কমিউনিটিতে স্বঘোষিত এক ‘অ্যাটর্নী’র প্রতারণা

Mukto Chinta
০ comment ৩৬৮ views

মুক্তচিন্তা রিপোর্ট : নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে অনেক ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা অনেক পরিশ্রম করে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তারা অনেকের জন্য আদর্শ হতে পারেন। প্রবাসের প্রথম জীবনে বহু বাধা-বিপত্তি উত্থান-পতন পেরিয়ে তারা সামনের দিকে এগিয়ে গেছেন। তাদেরকে কমিউনিটির মানুষ সম্মানের চোখেই দেখে। কিন্তু তার উল্টো চিত্রও রয়েছে চোখের সামনেই। যারা দ্রæত সময়ে নিজের জীবনে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে বেছে নিয়েছেন বাঁকা পথ। আর্থিক প্রয়োজন এক সময় ফুরিয়ে গেলেও প্রতারণা করতে করতে সেটা তার ‘নেশা’য় পরিনত হয়েছে। এ ধরণের বহু প্রতারক কমিউনিটিতে থাকলেও আজকে থাকছে এমন এক ব্যক্তির কথা যিনি প্রতারনায় সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন।

আজকের পর্বে থাকছে স্বঘোষিত একজন অ্যাটর্নী, সাংবাদিক, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী, শিক্ষক, মানবাধিকারকর্মি এবং জাতিসংঘ কর্মকর্তা, সমাজসেবকের ঘটনা। তার নাম মোস্তাকুর রহমান। কখনো সে স্যূট টাই পরা সুদর্শন স্মার্ট ব্যবসায়ী, কখনো তিনি মাথায় টুপি পরা ধার্মিক । যিনি অন্যকে ‘টুপি পরাতে’ ওস্তাদ। বাংলা ইংরেজি মিলিয়ে অনেক তথ্যবহুল কথা বলেন। মনে হবে যেনো তিনি নিজেই এক চলমান অভিধান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কিংবা হিলারী ক্লিনটন সবাইকে তিনি তার ঘনিষ্ট বলেও দাবি করেন। মোস্তাকুর রহমানের বক্তব্য অনুযায়ী তার অধীনে অন্তত ৩০ জন অ্যাটর্নী কাজ করেন। ম্যানহাটন, ব্রঙ্কস , জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকায় তার রয়েছে একাধিক অফিস। সেখানে কর্মরত আছেন অসংখ্য কর্মচারি। যদিও তিনি প্রতারনার অভিযোগে ২০১৮ সালে একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে সেটা অস্বীকার করে বলেছেন, ‘কার এত বড় ক্ষমতা তাকে গ্রেফতার করবে ? একজন অ্যটর্নীকে কি গ্রেফতার করা এত সহজ ? পুলিশ তার সাথে বসে আড্ডা দেয় বলেও জানায়। একাধিক ব্যাক্তি তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন। অবশ্য তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে অর্থ নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
ইতিপূর্বে বহু মানুষ তার কাছে প্রতারিত হওয়ায় সে গ্রেফতার হবার পরে কিছুদিনের জন্য সে নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলেন। কিন্তু নতুন করে তিনি আবারও প্রতারণা শুরু করেছেন বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। তার প্রতারণা থেকে ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, সমাজসেবক, বিপদগ্রস্থ মানুষ কেউ রেহাই পায়নি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ‘মোস্তাকুরের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে কমিউনিটি একজন পেশাজীবি প্রতারকের হাত থেকে রেহাই পেতো।’ তার মিষ্টি কথায় অনেকেই তার হাতে তুলে দিয়েছেন কষ্টার্জিত হাজার হাজার ডলার। প্রতারিত হয়ে অনেকেই বিভিন্ন মহলে ধর্না দিচ্ছেন সমাধানের আশায়। কিন্তু তাকে কে খুঁজে পায় ? আজ নিউইয়র্কে তো কাল মিশিগান। মিশিগান থেকে ক্যালিফোর্নিয়া। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে বোস্টন। যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশী বসবাস করে এমন কোনো এস্টেট নেই যেখানে তার প্রতারনার ঘটনা নেই।
কখনো তিনি এমডি রহমান তপন, আবার কখনো এমডি মোস্তাকুর রহমান। নতুন কোনো প্রতারনায় ব্যবহার করেন কাজী এমডি কালাদুর আলী। আছে আরও অনেক নাম। কখনো তিনি সোস্যাল ওয়ার্কার কখনো , কখনো আবার সাজেন ব্যাংক কর্মকর্তা, কখনো বা ইন্সুরেন্স কর্মকর্তা। তিনি একাধিক বিজনেস কার্ড ব্যবহার করেন। যেখানে তার অনেক পদবী রয়েছে। তার মধ্যে লেখা রয়েছে, রহমান ইমিগ্রেশন এ্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট সার্ভিস, রহমান ফ্যামিলি ল’ সার্ভিস ইনক, রহমান সিভিল এ্যান্ড ক্রিমিনাল ল সার্ভিস ইনক, রহমান ব্যাংকিং এ্যান্ড ইন্সুরেন্স ল সার্ভিস ইনক, রহমান কন্সট্রাকশন এ্যান্ড হাউজিং সার্ভিস ইনক, রহমান লেবার ল সার্ভিস ইনক ইত্যাদি। পদবীও রয়েছে অসংখ্য। তার একটি বিজনেস কার্ডে দেখা যায় তিনি পদবী লিখেছেন, সিইও-রহমান ল গ্রæপ এলএলসি, প্রজেক্ট ডাইরেক্টর সেন্টার ফর হিউম্যান এ্যান্ড ফান্ডামেন্টাল রাইটস এলএলসি। এটার পাশে লেখা রয়েছে ‘এ ইউনাইটেড নেশনস প্রজেক্ট টু হেল্প দ্য পুওর পিপল বাই ল, ফুড এ্যান্ড শেল্টার।’ অফিসের ঠিকানা রয়েছে ৪০৫ লেক্সিংটন এভিনিউ, নবম তলা, ম্যানহাটন। শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা বলা হয়েছে, এমএসএস ইকোনমিকস, এমবিএ কানাডা, এলএলএম ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, স্টুডেন্ট অব পিএইচডি (ল) ।
ভ‚ক্তভোগীদের দাবি, প্রতারণার মাধ্যম হিসেবে সে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সাবেক ফরেইন সেক্রেটারি হিলারী ক্লিনটন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আরও অনেককে ব্যবহার করেন নানা কায়দায়। বিভিন্ন পত্রিকায় তিনি তার ছবির পাশে বাইডেন বা হিলারির ছবি ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন দেন। তারপরে নামেন শিকার ধরতে। আর এভাবেই অনেক শিকার তার কাছে ধরা দেয়। তাদের মতে প্রতারক রহমান ক্যালিফোর্নিয়া, শিকাগো, বাফেলো, মিশিগান ছাড়াও শুধুমাত্র নিউইয়র্কেই অন্তত শতাধিক প্রতারণা করেছেন বিভিন্নজনের সাথে। এখন তিনি নিউইয়র্কের ব্রঙ্কস এলাকাতে শিকার খুঁজে বেড়াচ্ছেন। অনেকের সাথে প্রতারণাও করে চলেছেন। গত কয়েক বছর ধরেই মোস্তাকুর রহমান তার প্রতারনা বিনা বাধাতেই চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান ভ‚ক্তভোগীরা। কিন্তু সম্প্রতি সে আরও কয়েকজনের কাছে টোপ দিয়েছে মিথ্যা প্রলোভনে অর্থ আদায়ে। তখনই তার পুরনো প্রতারণার কথা সামনে চলে এসেছে।
নিউইয়র্কে মোস্তাকুরের প্রতারণার শুরু হয় জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সাবেক সভাপতি রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী বেলাল চৌধুরীর সাথে প্রতারণার মধ্য দিয়ে। বেলাল চৌধুরী বলেন, মোস্তাকুর রহমানের কাছে প্রতারনার শিকার হয়েছেন তিনি। বেলাল চৌধুরী নিজেই জানিয়েছেন তার প্রতারিত হবার ঘটনা। তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের এক সকালে রিয়েল এস্টেট সেলসপারসন মোহাম্মদ হোসাইন বেলাল প্রতারক মোস্তাকুর রহমানকে আমার কাছে নিয়ে আসেন। জ্যামাইকা হিলসাইডের একটি রেস্টুরেন্টে মোহাম্মদ হোসাইন বেলাল, মোস্তাকুর এবং আমি বসে কথা বলি। আমার সাথে সেদিনই মোস্তাকুরের প্রথম পরিচয়। তখন মোহাম্মদ হোসাইন বেলাল , আমাকে বলে যে, মোস্তাকুর একটি বাড়ি কিনবে আপনার কাছ থেকে। সিঙ্গাপুর থেকে তার টাকা আসবে। কিন্তু টাকা আসতে একটু দেরি হচ্ছে। কিন্তু একটা জরুরী দরকারে এখনই তার কিছু টাকার দরকার। তখন বেলাল চৌধুরী বলেন ‘এই মুহুর্তে আমার কাছে টাকা নেই।’ সাথে সাথেই মোস্তাকুর একটি চেকবই বের করে আমার হাতে ২৫ হাজার ডলারের একটি চেক লিখে দেয়। একইসাথে মোস্তাকুর মোহাম্মদ বেলালের দিকে উদ্দেশ্যে করে বলেন ‘ ভাই আপনি কেনো চেক দেয়ার আগেই টাকা দিতে বলছেন ? নতুন পরিচয় তাই আগে চেক দিয়ে টাকা চাওয়া উচিত।’ মোহাম্মদ হোসাইন বেলালই টাকা দেয়ার জন্য বেলাল চৌধুরীকে তাগাদা দেয়।’ সেই টাকা থেকে বেলাল হোসাইনও তিন হাজার ডলার নিয়েছে বলে বেলাল চৌধুরী অভিযোগ করেছেন। অথচ সেই টাকা বেলাল চৌধুরীতো পায়ইনি বরং তাকে থানা পুলিশ ঘুরতে হয়েছে মোস্তাকুরকে হুমকির অভিযোগে।
বেলাল চৌধুরী আরও অভিযোগ করে বলেন, মোস্তাকুরের এই প্রতারণার পেছনে ভৈরব সমিতির সাবেক সভাপতি রিয়েল এস্টেট সেলস এজেন্ট বেলাল হোসাইনও দায়ী। আর দায়ী বলেই একাধিকবার তার নিজের মুখে এই অর্থ বেলাল হোসাইন নিজেই পরিশোধ করবে বলে বেলাল চৌধুরীকে আশ্বাস দিয়েছেন। অনেক দেন দরবার আর ঘরোয়া বিচার সালিশের পরও বেলাল চৌধুরী নিজের টাকাতো পাইনি বরং মোস্তাকুর উল্টা বেলাল চৌধুরীতে থানা পুলিশ ঘুরিয়েছেন হুমকি দেয়ার মিথ্যা অভিযোগ এনে। বেলাল চৌধুরী ছাড়াও আরও অনেকের কাছ থেকে মোস্তাকুর একই কায়দায় অর্থ নিয়েছেন ভ‚য়া চেক দিয়ে। তারা কেউই আর অর্থ ফেরত পায়নি।
মোস্তাকুর রহমান স্থানীয় কয়েক ব্যক্তির মধ্যস্ততায় বেলাল চৌধুরীর ২৫ হাজার ডলার ফেরত দেয়ার জন্য টিডি ব্যাংকের একটি চেক দেন । কিন্তু সেই চেক ব্যাংকে ভাঙ্গাতে গিয়ে জানতে পারেন ওই ব্যাংকে তার কোনো একাউন্টই নেই।
বেলাল চৌধুরীর অর্থের বিষয়ে সেলস এজেন্ট মোহাম্মদ হোসাইন বেলালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এখানে আমার কোনো দোষ নেই। আমি কোনো প্রতারণাও করিনি। বেলাল চৌধুরী একজন বিনিয়োগকারী খুঁজছিলো বলেই তার কাছে মোস্তাকুরকে নিয়ে গিয়েছিলাম। মোস্তাকুর একটি বাড়ি কিনবে বলে সে আমার কাছে এসেছিলো। সেই সূত্রে তার সাথে পরিচয়। মোস্তাাকুরের কাছ থেকে টাকা নেয়ার কথাও তিনি অস্বীকার করেন। যখন এই প্রতারণার ঘটনা ঘটে তখন বেলাল হোসাইন রিয়েলটর শরাফ সরকারের সাথে কাজ করতেন। কিন্তু প্রতারণার এই অভিযোগ উঠার পর থেকেই তিনি অনত্র চলে যান।
কমিউনিটিতে বাড়ি বা জমি কেনা-বেচা নিয়ে এসব প্রতারনার বিষয়ে জানতে চাইলে শরাফ সরকার জানান, বাড়ি বা জায়গা কেনার ব্যাপারে আগে খোঁজ খবর নিয়ে তার পরে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। বাড়ি বা জমি কেনার জন্য যার সাথে ডিল করছেন তার প্রকৃত লাইসেন্স আছে কিনা সে বিষয়েও বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নেয়া জরুরী।
বেলাল হোসাইন এখন এক্সিট রিয়েলটি প্রাইমে সেলস পারসনের কাজ করেন। এ বিষয়ে জানার জন্য এক্সিট রিয়েলটির কর্ণধার জামান মজুমদারকে ফোন করলে তিনি বলেন, বেলাল তার ওখানে কাজ করেন। তবে আর্থিক কোনো প্রতারণার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না । তবে তিনি মনে করেন, যাদের প্রকৃত লাইসেন্স আছে তারা প্রতারণা করেন না। তাদের প্রতারণা করার প্রয়োজনও হয় না। তবে অর্থের লেনদেন করার আগে সবাইকে আরও সতর্ক হবার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
মোস্তাকুর ক্যালিফোর্নিয়া, মিশিগানসহ আরও কয়েকটি স্টেটে একই ধরনের কাজ করতেন বলে বহু অভিযোগ পাওয়া গেছে। সে আসলে বাড়ি কিনেও না, বিক্রিও করে না। তার কোনো লাইসেন্সও নেই বলে অভিযোগকারীরা জানান। কিন্তু যেখানে ক্রেতা সাজার দরকার সেখানে নিজেকে ক্রেতা হিসেবে পরিচয় দেন। আর ক্রেতার সন্ধান পেলে নিজে বিক্রেতার পরিচয় দেন। অর্থ হাতিয়ে নিতে যেখানে যেটা সুবিধা হয় সেটাই বলেন। কোথাও বাড়ি কেনার কথা বলে অর্থ নেন, কোথাও অর্থ নেন বাড়ি বিক্রির কথা বলে। কখনও মধ্যস্ততার নামে হাতিয়ে নেয় অর্থ।
এদিকে বেলাল চৌধুরীর সাথে এ ঘটনার পরও থেমে থাকেনি মোস্তাকুর। সে হিলসাইডের ১৬৯ স্ট্রিটে মানবাধিকার নেত্রী, কমিউনিটি এ্যাক্টিভিস্ট মাজেদা এ উদ্দীনের সাউথ এশিয়ান ফান্ড ফর এডুকেশন, স্কলারশিপ এ্যান্ড ট্রেইনিং অফিসের অনেকগুলো কম্পিউটার চুরি করে বিক্রি করে দেয় অভিযোগ করেছে মাজেদা এ উদ্দীন। এর মধ্যে চারটি কম্পিউটার বিক্রির সময় মাজেদা এ উদ্দীনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেফতার করা হলেও বাকী কম্পিউটারগুলো আজ অবধি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে মাজেদা এ উদ্দীন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি চাই এ ধরনের প্রতারকদের কঠোর সাজা। তারা আমাদের কমিউনিটির জন্য বোঝা হয়ে দেখা দিয়েছে। বিচার ব্যবস্থা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মাজেদা এ উদ্দীন । তিনি বলেন, আজ অবধি আমি কোনও বিচার পাইনি। পুলিশ মোস্তাকুরকে ধরে নিয়ে যাবার পর মামলার কি হলো তাও জানি না।
জ্যামাইকার হায়দার আলী নামের স্বাভাবিক চলাফেরায় অক্ষম এক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, স্ত্রী’র গ্রীন কার্ড করে দেয়ার নাম করে তার কাছ থেকে কয়েকমাস আগে মোস্তাকুর দুই দফায় দেড় হাজার ডলার নিয়েছেন। কিন্তু এখন এই টাকা ফেরত চাইলে তাকে ডিপোর্ট করে দেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন হায়দার আলী।
এ বিষয়ে মোস্তাকুরের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অর্থ নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এসব উল্টা পাল্টা রিপোর্ট করলে ভেজালে পড়বেন। এসব করে আগেও কেউ আমার হাত থেকে বাঁচতে পারে নাই। আপনিও পারবেন না। আপনার মতো অনেক সাংবাদিক আমার কথায় চলে। তিনি বলেন, নিউইয়র্কের অনেক সাংবাদিক আমার কাছ থেকে সুবিধা নেয়। ’ এর পরক্ষনেই তিনি আবার ফোন করে সবার টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি একজন অ্যটর্নী। আমাকে গ্রেফতার করা অত সোজা না। তার অধীনে ৩০ জন অ্যটর্নী আছেন জানিয়ে বলেন, ‘ আমি ‘ওয়ার্ল্ড ক্রাইম রিপোর্ট’ নামের একটি পত্রিকা বের করছি শিগগিরই সেখানে সবার বিরুদ্ধে লেখা হবে।’ এই পত্রিকাটি জাতিসংঘের অর্থায়নে বের করা হবে বলে জানান।
পরের দিন এই প্রতিবেদককে তিনি আবারও ফোন করেন। ফোন করে বুঝানোর চেষ্টা করেন তার সাথে খুব উঁচু পর্যায়ের এবং ক্ষমতাশালী মানুষের সাথে চলাফেরা। তার আত্মীয় স্বজনরাও দেশে এবং বিদেশে অনেক বড় মাপের মানুষ। এ সময় তার পত্রিকার অর্থায়ন নিয়ে আবারও জানতে চাইলে বলেন, ‘এটা গোয়েন্দা পত্রিকা।’ তিনি পরিস্কার করে বলেন, ‘এটা যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোয়েন্দা সংস্থার পত্রিকা।’ পাশাপাশি তিনি মাজেদা এ উদ্দীনসহ কয়েকজন সাংবাদিককে বকাঝকা করেন। পরে অবশ্য তিনি বারবার অনুরোধ করেন কিছু না লেখার জন্য।
এর আগেও তিনি হায়দার আলীর মতোই আরও অনেকের কাছ থেকে হাজার হাজার ডলার প্রতারণা করে নিয়েছেন। কিন্তু আইনের ফাঁক গলে তিনি দিব্যি তার অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। শামসুল হক নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকেও তিরি এর আগে গ্রীন কার্ড, সোস্যাল সিকিউরিটি করে দেবার নাম করে পাঁচ হাজার ডলার নিয়েছেন। অনেক চেষ্টা করেও তিনি আর টাকা উদ্ধার করতে পারেননি।
মোস্তাকুর বিভিন্ন পত্রিকায় জো বাইডেন, হিলারী ও শেখ হাসিনার সাথে নিজের ছবি জুড়ে দিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। কিন্তু কারো বিজ্ঞাপনের বিল দিতেন না। পরে সাংবাদিকরা বুঝতে পারে সে আসলে একজন প্রতারক।

You may also like

Leave a Comment

Muktochinta

Multochinta is a famous news media from New York. 

Subscribe my Newsletter for new blog posts, tips & new photos. Let's stay updated!

All Right Reserved. 2022 emuktochinta.com