রিয়াজ রহমান, ঢাকা : মামলা, হামলা আর গ্রেফতার যাই কিছু চলুক না কেনো- বিএনপি ধীরে ধীরে তাদের আন্দোলনের তীব্রতা আরও বাড়াবে। একইসাথে আন্দোলনের ধরনও তারা পরিবর্তন করবে বলে জানা গেছে। তবে সে আন্দোলন এবার আর কেবল সভা-সমাবেশ আর বিক্ষোভ মিছিলের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে টানা হরতাল-অবরোধের দিকে যাবে বলে বিএনপি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে দলে নেতা-কর্মিদেরকে যথা সম্ভব গ্রেফতার হওয়ার হাত থেকে নিজেদের দূরে রাখতে নিরাপদে এবং আরও বুদ্ধিমত্তার সাথে আন্দোলন চালিয়ে যাবার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক হরতাল এবং অবরোধের রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন করে আবারও ৪৮ ঘন্টার হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি। যদিও দলটির অধিকাংশ নেতাকেই এরই মধ্যে গ্রেফতার করে জেলে আটক রাখা হয়েছে। কিন্তু এসব কর্মসূচির সফলতায় তেমন একটা দূর্বলতা দেখা যায়নি। বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সমমনা সবগুলো দল এবং জোট একই সময়ে এই হরতাল কর্মসূচি পালন করবে। যুগপৎ এর বাইরে থাকা জামায়াতে ইসলামীও দুই দিনের এই হরতাল কর্মসূচি পালন করবে। এসব কর্মসূচির মধ্যেই নির্বাচন কমিশনসহ (ইসি) গুরুত্বপূর্ণ ভবন ঘেরাও এবং অবস্থান কর্মসূচির কথা ভাবছে দলটি।
দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে যদি সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠান থেকে সরে না আসে বা তফসিল প্রত্যাহার না করে তাহলে অসহযোগ আন্দোলন ও স্বেচ্ছা কারাবারণ কর্মসূচিও ঘোষণা করা হতে পারে। সর্বশেষ অসহযোগ কর্মসূচির বিষয়টিও চিন্তায় রয়েছে তাদের। পরিস্থিতি বুঝে একের পর এক কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এতদিন সমমনা দলগুলো বিচ্ছিন্নভাবে কর্মসূচি পালন করলেও এবার সবাই মিলে কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধ্য করতে। এতদিন যুগপৎ কর্মসূচি পালন করলেও এবার বড় বড় কর্মসূচিতে সব সমমনা জোট ও দল বিএনপির সঙ্গে একসঙ্গে মাঠে নামার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। কখন কোন্ কর্মসূচি ঘোষণা হবে- এ ব্যাপারে পর্যায়ক্রমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত কয়েক দিন ধরে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে হাইকমান্ড। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এসব বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ জানিয়েছেন, বিএনপির আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌঁচেছে। জনগণের বিজয় অতি সন্নিকটে। পদত্যাগ করা ছাড়া সরকারের হাতে আর কোনো অপশন নেই। তাই সরকারকে আহ্বান জানাব- টালবাহানা না করে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। আর কোনো ভোট ডাকাতির নির্বাচন বা বিনা ভোটের নির্বাচন বাংলাদেশের জনগণ হতে দেবে না। সমগ্র জাতি আজ আপনাদের ঘোষিত এই একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে। জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একই পথে হাঁটছে জামায়াতে ইসলামীও। কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনসহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মতে, বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব। বিবদমান সব পক্ষকে শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। প্রতিবেশী ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন ও গণতন্ত্রের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান আবার স্পষ্ট করেছে। তাই ‘রাজনৈতিক সমঝোতা’ ছাড়া ইসি ঘোষিত একতরফা নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা ‘আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্ত। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোসহ দেশের জনগণ এই প্রহসনের নির্বাচনী তফসিল কিছুতেই মেনে নেবে না।
অন্যদিকে গত কয়েক দিন ধরে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি সমমনা দলগুলোর শীর্ষনেতাদেরও মতামত নিয়েছেন বিএনপি হাইকমান্ড। নেতাদের বিশ্লেষণ হচ্ছে, তফসিল ঘোষণা করার পর টানা কর্মসূচি দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করতে হরতাল-অবরোধই কার্যকর কর্মসূচি। জেলা পর্যায়ে মহাসড়কগুলোতে পিকেটিং বাড়াবে তারা। হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি ঢাকা কেন্দ্রিক বেশ কিছু বিকল্প কর্মসূচিও দেওয়া হবে। বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের শীর্ষনেতারা বলেন, একতরফা তফসিল ঘোষণা হয়েছে, এর প্রতিবাদে দল থেকে যে কর্মসূচি দেবে, তা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে পালন করতে হবে। কেউ যদি অনুপস্থিত থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।
বিএনপি’র কর্মসূচি চলবেই
১৫২
previous post