রাশেদ খান, ঢাকা: গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের পর থেকে বিএনপি’র প্রথমসারির সব নেতাকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিগত দেড় দশকে সরকারের মামলা, হামলা আর নির্যাতনের মধ্যেও সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি’র সাফল্য কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। এই আন্দোলনে সরকার পদত্যাগের কোনো আভাসও দেয়নি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়েও ইতিবাচক মনোভাব দেখায়নি। তারপরও বিএনপি যে জনগনের দল সেটা প্রমাণ করতে পেরেছে বারবার লাখো মানুষের সমাবেশ ঘটিয়ে। তবে সবকিছুর পরও রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে এখন বিএনপি কি করবে? কোন পথে যাবে বিএনপি? আন্দোলন বন্ধ করে দিবে নাকি সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যাবে? বিএনপি নেতারা বলছেন, এর একটিও তারা করবে না। বরং সরকার পতনের চুড়ান্ত আন্দোলনই তারা চালিয়ে যাবে। সরকারের পদত্যাগেই নিহিত রয়েছে সব সমাধান।
গত বছরের ডিসেম্বরে সরকার পতনের আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকায় যে সমাবেশ বিএনপি করেছিলো সেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ অংশ নিয়েছিলো। নিজেদের দায়িত্বে তারা সমাবেশের কয়েকদিন আগেই ঢাকায় হাজির হয়েছিলো। একই ধরণের চিত্র দেখা গিয়েছিলো বিভাগীয় সমাবেশগুলোতেও। সেখানে তারা নিজেরা রান্না করে খেয়ে দু’দিন আগে থেকেই সমাবেশস্থলে হাজির হতো। এই সমাবেশগুলোর আগে বিএনপি জনপ্রিয়তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই বলার চেষ্টা করেছেন, ‘বিএনপি একযুগ ক্ষমতার বাইরে থেকে শেষ হয়ে গিয়েছে। কিংবা কেউ কেউ বলেছেন, নেতা-কর্মিরা হতাশ হয়ে পড়েছে। তাদের ডাকলে আর সমাবেশে আসবে না। অনেকেই বলতেন, জেল-জুলুম আর মামলা-মোকদ্দমায় বিএনপি আর আগের মতো শক্তিশালী নেই।’ বিএনপি’র এক দফা, ২৭ দফা, ১০ দফা ঘোষণায় এ নিয়ে নানা সমালোচনাও হয়েছে। অনেকেই বলেছেন, বিএনপি বিভ্রান্তিমূলক কর্মসূচি দিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মিদের হতাশ করে ফেলেছে। এসব মন্তব্য বা ভাবনা ছিলো সমালোচকদের। কিন্তু সব সমালোচনার উর্ধ্বে উঠে বিএনপি কর্মিরা বারবার প্রমাণ করেছে, যখন যে দফাই ঘোষণা করা হোক না কেনো তাতে কিছু আসে যায় না। বিএনপি ডাকলে তারা সব সময়ই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তত। আর এসব কথা মাথায় রেখেই বিএনপি এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি এবং সরকারের পদত্যাগে তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ বিএনপি মনে করছে তারা লম্বা সময় ধরে সরকারকে নানাভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছে যে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ছাড়া তারা আর নির্বাচনে যাবে না। আর সেই দাবি না মানা হলে কঠোর আন্দোলনে যেতে তারা পিছপা হবে না। অনেক সময় নিয়েও সরকার যখন তাদের দাবি মানেনি তারা তখন কঠোর আন্দোলনের পথই বেছে নিয়েছে।
বিগত দেড় দশকে বিএনপি’র আন্দোলনের ধরন এবং জোর নিয়ে যত সমালোচনাই হোক না কেনো সময় শেষে তারা এটা প্রমাণ করেছে যে জনগনের নিরাপত্তা এবং শান্তির কথা চিন্তা করেই কঠোর কর্মসূচি থেকে বিরত ছিলো। সরকারের শেষ সময়ে এসেও যখন তারা তাদের দাবিকে অগ্রাহ্য করেছে তখন দেশ ও জনগনের স্বার্থেই অবরোধ বা হরতালের মতো কর্মসূচি দিতে বাধ্য হচ্ছে। জনগন এটা বুঝতে পেরেছে যে, বিএনপি অবরোধ আর হরতাল না দিলে সরকার কোনো দাবিই মানবে না। আর সে কারণেই বিগত ২৯ তারিখের হরতাল এবং পরবর্তী দুইদিনের অবরোধ সাধারণ মানুষ গ্রহণ করেছে। কারণ হরতাল ও অবরোধে দেশের কোথাও উল্লেখ করার মতো যান চলাচল করেনি। বিএনপি এবার জনগনকে সাথে নিয়েই তাদের সমর্থনে আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা আমীর খসরু গ্রেফতার হওয়ার আগে টেলিফোনে জানান, ‘বিএনপি এখন সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের পথে। সরকার পতন আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলেই তারা রাজপথ ছাড়বে। তার ভাষায় দেশের সব মানুষকে গ্রেফতার করেও সরকারের পতন ঠেকানো যাবে না। দলের একজন কর্মি জেলের বাইরে থাকতেও তারা তাদের দাবি আদায়ে পিছ পাঁ হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই কেবল এই আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটবে। সরকারের পদত্যাগেই সমাধান। ’
অন্যদিকে বিএনপির বিগত দিনের আন্দোলনে অন্যতম আরও একটি সাফল্য হচ্ছে বিশ্বের গনতন্ত্রকামী সব দেশই এখন বিএনপির দাবির সাথে একমত। কারণ তারাও বাংলাদেশে একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। বাংলাদেশে যে বাকস্বাধীনতা নেই সেটা তারাও বলে, বাংলাদেশে যে যার ভোট সে দিতে পারে না সেটাও তারা বিশ্বাস করে। সুতরাং বিএনপি’র সব নেতা গ্রেফতার হলেও তাদের দাবির সাথে একমত হয়েই বিদেশীরাই এখন কথা বলবে। কারণ গনতন্ত্র রক্ষার জন্য একটি নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সবারই দাবি।