Home Featured ঢাকায় গোপন বন্দিশালা !

ঢাকায় গোপন বন্দিশালা !

Mukto Chinta
০ comment ৪৪০ views

রোমান চৌধুরী : পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গত ১০ ফেব্রæয়ারি তিনি বলেছেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের অধীনে গঠিত গুম বিষয়ক ওয়াকিং গ্রæপের তালিকায় থাকা বাংলাদেশের ৭৬ জন নিখোঁজ ব্যক্তির মধ্যে ৮-৯ জনের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর বেশি কিছু তিনি না বললেও সাধারণ মানুষের সন্দেহের তীর এখন সরকারের বিশেষ বাহিনীর দিকেই। তাদের প্রশ্ন, তাহলে কি গুম হওয়া ব্যক্তিদের হারিস চৌধুরীর মতোই ঢাকা শহরের কোথাও কোনো গোপন বন্দিশালায় আটক করে রাখা হয়েছে।
প্রায় একযুগ আগে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভিন্নমতের মানুষের উপর শুরু হয় নানা দমন-পীড়ন। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক এমনকি সাধারণ মানুষও তাদের কাছ থেকে রেহাই পায়নি। ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিকদলগুলো এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেও সরকার সেদিকে কোনো নজর দেয়নি। কিন্তু বিশেষ বাহিনী র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে সবচেয়ে বেশি। এলিট এই বাহিনী সন্ত্রাস দমনের জন্য গঠন করা হলেও পরে তাদেরকে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। এই অভিযোগ যখন তীব্র হতে থাকে তখন যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবকে তাদের দেয়া ক্যাপাসিটি বিল্ডিং সহায়তা বন্ধ করে দেয় ২০১৪ সাল থেকে। এর আগে পরে বিশ্ব মিডিয়ায় র‌্যাব ও বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা জারির খবর প্রকাশ হয় একাধিকবার। ২০২০ সালেও ইউএস সিনেটের উভয় দলের একটি পক্ষ র‌্যাবের সিনিয়র অফিসারদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও বাংলাদেশ সরকার এ নিয়ে চিন্তা না করে তারা এটা বন্ধ করারর জন্য পরামর্শক নিয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্রে। অবশ্য এতে কোনো ফল হয়নি। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশের একাধিক সিনিয়র র‌্যাব কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর সরকারের উচ্চ মহল নড়েচড়ে বসে।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে তথ্য পেতে যুক্তরাষ্ট্র একা নয়, বরং ইউরোপের অনেক দেশ এমনকি জাতিসংঘ খুবই সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করছে। এ অবস্থায় পররাষ্ট্রসচিবের দেয়া বক্তব্য ‘ গুম হওয়াদের ৮-৯ জনের সন্ধান পাওয়া গেছে। আরও কয়েকজনকে দেশে ও দেশের বাইরে পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন।’
একজন অবসরপ্রাপ্ত সহকারী আইজিপি নাম প্রকাশ না করে বলেন, প্রকৃতপক্ষে সরকার গুম হওয়া ব্যক্তিদের আটক করে নিজেদের হেফাজতে রেখেছে। তারা সব ধরনের প্রচলিত আইন উপেক্ষা করে হয়তো তাদেরকে কোনো গোপন বন্দিশিবিরে আটক করে রেখেছে।
তার ধারণা অনেককে বাংলাদেশে এবং অনেককে পার্শ্ববর্তী দেশে আটক করে রাখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনান্য দেশ আরও বেশি চাপ দিলে সবাইকেই জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব বলেও তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে সোস্যাল মিডিয়ায় এয়ারপোর্ট এলাকার কিছু ভবন ও তার আশেপাশের এলাকার ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানে তীর চিহ্নিত করে দেখানো হয়েছে গোপন বন্দিশালার কথা। একজন ব্যক্তি সম্প্রতি মুক্তি পেয়ে কোনো রকমে বর্ডার পার হয়ে একটি দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন এয়ারপোর্ট এলাকার ওই বন্দিশিবিরে আরো অনেকেই আটক আছেন। তারা সবাই তার সাথেই ছিলো। কিন্তু কেউ কাউকে দেখতে পেতো না। সরকারের একটি বিশেষ বাহিনীর সরাসরি ত্বত্ত¡াবধানে সেখানে রাজনৈতিক নেতা ও ভিন্নমতের মানুষদের বছরের পর বছর আটক করে রাখা হয় তথ্য আদায়ের নামে। তাদেরকে আদালতেও তোলা হয় না। পরিবারকেও জানানো হয় না।
বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরীকেও গত ১৪ বছর ধরে ওই বন্দিশালাতেই আটক করে রাখা হয়েছিলো বলে অনেকেই মনে করছে। একটি সূত্র জানিয়েছে বন্দিদের এমন ইনজেশন পুশ করা হয় যেটাতে ওই ব্যক্তি একটা নির্দিষ্ট সময় পরে শুধু নিজেকে চিনতে পারে। আর কাউকে সে চিনে না। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার হাতেও বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক নেতা আটক আছে বলে সূত্র জানায়।
ধারণা করা হচ্ছে বিএনপি নেতা ইলয়াস আলী, চৌধুরী আলম, ব্রিগেডিয়ার আজমীসহ আরও আরও অনেকেই ওই আন্ডারগ্রাউন্ড গোপন বন্দিশালায় আটক আছেন।
প্রশ্ন উঠেছে, পররাষ্টসচিব যে বললেন, ৮-৯ জনের সন্ধঅন পাওয়া গেছে এবং আরও অনেককে দেশে বিদেশে পাওয়া যাবে। তিনি কোন সংবাদের ভিত্তিতে এ কথা বলেছেন। আর যাদের সন্ধ্যান পাওয়া গেছে সেই ৮-৯ জন এখন কোখায় আছেন ? তাদের নাম কি ? এখনই তাদের নাম প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন গুম হওয়াদের আত্মীয়-স্বজনরা।

 

 

You may also like

Leave a Comment

Muktochinta

Multochinta is a famous news media from New York. 

Subscribe my Newsletter for new blog posts, tips & new photos. Let's stay updated!

All Right Reserved. 2022 emuktochinta.com