বাঙালির চিরন্তন বাঙালিয়ানার ঢংয়ে প্রথমবারের মতো বর্ণিল হয়ে উঠল নিউইয়র্কের ব্যস্ততম টাইম স্কয়ার। সেখানে প্রথমবারের মতো বর্ষবরণে মাতলেন প্রবাসী বাঙালিরা। শতকণ্ঠে সংগীতায়োজনে বরণ করা নেওয়া হলো ১৪৩০ বঙ্গাব্দকে। বৈশাখের প্রথম দিন মানবতার মঙ্গল কামনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা।
সংস্কৃতিপ্রেমীরা ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শতকণ্ঠে গেয়ে বরণ করে নেন বাংলা নতুন বছরকে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেট থেকে এ আয়োজনে যুক্ত হন বাঙালিরা। নিজেকে ইতিহাসের অংশ করতে প্রত্যেকের ছিল স্বতঃস্ফূর্ত প্রয়াস।
এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড আয়োজিত এ আয়োজনের আহ্বায়ক ছিলেন নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসান। মঙ্গল শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
অনুষ্ঠানে একক নৃত্য পরিবেশন করেন লায়লা হাসান। তিনি বলেন, ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে বাঙালিদের সবচেয়ে বড় প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ। ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে এখানে শত শত প্রবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আবার তা প্রমাণিত হয়েছে।
টাইমস স্কয়ারে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা উদ্বোধন করে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, ‘টাইম স্কয়ারের শতকণ্ঠে বর্ষবরণ আয়োজনটি অনবদ্য। প্রবাসজীবনের নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রবাসীদের বিপুল অংশগ্রহণ ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। আমার চাওয়া প্রতিবছর এভাবেই বৈশাখ উদ্যাপিত হোক নিউইয়র্কসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তে।’
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী বাঙালি সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে এবারের পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। সবার অংশগ্রহণে সর্বজনীনভাবে এমন বর্ণাঢ্য আয়োজন আমাদের আগামী প্রজন্মকে বাংলা সংস্কৃতির প্রতি উদ্বুদ্ধ করবে।’
এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের সভাপতি বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, এ বছর পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন ব্যাহত করতে আদালতে মামলা পর্যন্ত করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট এই আয়োজন স্থগিত করার মামলা খারিজ করে দেন। তিনি বলেন, বর্ণাঢ্য এই আয়োজন রমনার বটমূলের আদলে শনিবার জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় সকাল সাতটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত চলবে। এই আয়োজনেও থাকবে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা ও ঈদবাজার। এটি উদ্বোধন করবেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস।
বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হয় নিউইয়র্কে শতকণ্ঠে ১৪৩০ বাংলা বর্ষবরণের আহ্বায়ক লায়লা হাসান প্রীতি সম্ভাষণ নিয়ে। বক্তব্য দেন শতকণ্ঠে বর্ষবরণের পরিচালক মহিতোষ তালুকদার এবং এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের সভাপতি বিশ্বজিৎ সাহা। ঠিক ভোর ৬টা ২০ মিনিটে সূর্যোদয়ের সঙ্গে শতাধিক শিল্পীর অংশগ্রহণে আবহমান বাঙালি সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় বরণ করা হয় নতুন বাংলা বছরকে।