বিতর্কিত নানান কর্মকান্ড এবং শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণের কারনে মাত্র এক মেয়াদেই মেয়র পদের দৌড়ে ছিটকে পড়লেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। তার স্থলে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও তার চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ। সাদিক আব্দুল্লাহ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিজেকে তুমুল আলোচনায় রেখেও নৌকার মাঝি হতে না পারার কারণ নিয়ে নগরীতে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নানানভাবে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করেন মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ। ফলে এবারের নির্বাচনে নৌকাকে জেতাতে মনোনয়ন না পাওয়া সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ কী ভূমিকা পালন করবেন- তা নিয়েও চলছে আলোচনা।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর পক্ষে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। নেত্রী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহকে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছেন। এখন আমরা নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো। স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ে অদূরদর্শিতা ছিল কি না- জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
আরেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিস উদ্দিন শহীদ বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগ কাউকে প্রার্থী করে পাঠায়নি। তবে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে সমর্থন দিয়েছিল। আমাদের প্রার্থী পছন্দ সঠিক ছিল। তবে নেত্রী এখন যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন, আমরা তাকে বিজয়ী করতে কাজ করবো।
যদিও কমিটির বাইরে আওয়মী লীগের বর্ষীয়ান কয়েকজন নেতা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, সাদিক আব্দুল্লাহর রাজনৈতিক অপরিপক্বতার কারণে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ সাদিক আব্দুল্লাহর আজ্ঞাবহ হতে গিয়ে কেন্দ্রের বার্তা ধারণ করেনি। যে কারণে বরিশাল মহানগরের প্রার্থিতা নির্বাচন আর কেন্দ্রের মনোনয়নে ভিন্নতা এসেছে। সাদিক আব্দুল্লাহ মনোনয়ন না পাওয়ার কারণ খোঁজ করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি যুক্তিও দিয়েছেন এসব নেতারা।
তবে মনোনয়ন বোর্ডে থাকা বর্ষীয়ান দুই নেতা জানিয়েছেন, নগরীর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ রাখতে গিয়ে খোদ আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভাজন এবং প্রশাসনের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধই সাদিক আব্দুল্লাহর মনোনয়ন দৌড়ে বাদ পড়ার কারণ। যেহেতু তার দলের পদ-পদবি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি, তার অর্থ সাদিক আব্দুল্লাহর সুযোগ রয়েছে অবস্থান পুনরুদ্ধারের। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের এই দুই জ্যেষ্ঠ নেতা গণমাধ্যমে তাদের নাম প্রকাশ করার অনুমতি দেননি।
ঠিক কি কারণ মনোনয়ন হারিয়েছেন তা সুনির্দিষ্ট করে কেউ না বললেও যেসব কারণে সাদিক আব্দুল্লাহ সমালোচিত ছিলেন তা এখন আলোচনায় উঠে আসছে।
যেভাবে আলোচনায় সাদিক আব্দুল্লাহ
ছাত্ররাজনীতি বা অন্য কোনো অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির মাধ্যমে এই অঙ্গনে যাত্রা শুরু হয়নি সাদিক আব্দুল্লাহর। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি শুরুর লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি ৪০/৫০ জন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মী নিয়ে কুয়াকাটা ভ্রমণে যান তিনি। পরের দিন ৩০ জানুয়ারি রাতে কুয়াকাটার হোটেল সি ভিউয়ের ১ নম্বর কক্ষে গুলিবিদ্ধ হন সফরসঙ্গী বরিশাল জেলা মৎস্য আড়তদার সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল (বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক)। গুলিবিদ্ধ টুটুলের একটি পা কেটে ফেলতে হয়। কে কীভাবে গুলি করেছে টুটুলকে তা আজ পর্যন্ত জানা যায়নি। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, একই কক্ষে অবস্থান করছিলেন সাদিক আব্দুল্লাহ। এর পরপরই দেশব্যাপী আলোচনায় চলে আসেন সাদিক।
২০১৪ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য শওকত হোসেন হিরণের মুত্যুর পর দলে তৎপরতা বাড়ান সাদিক আব্দুল্লাহ। শওকত হোসেন হিরণের স্ত্রী জেবুন্নেছা আফরোজ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে মহানগর আওয়ামী লীগের পুনর্গঠিত কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন সাদিক।
২০১৮ সালে মেয়র নির্বাচিত হয়ে দলের অভ্যন্তরে হিরণপন্থিদের বিরুদ্ধে এক ধরণের অভিযান চালানো শুরু করেন। হামলা, মারধর ও মামলা দিয়ে হিরণপন্থিদের রাজনৈতিক অবস্থান পুরোপুরি নষ্ট করে দেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মহানগরের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর তিনি আরও বেসামাল হয়ে পড়েন এবং নগরীর কোনো কিছুই তার মতামত ছাড়া হতে দিতেন না।
সরকারি বিধান ভেঙে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ কালী বাড়ি নিজের বাসায় সিটি করপোরেশনের অফিশিয়াল কাজ করতেন। কাজের জন্য নগর ভবনের কর্মকর্তাদের ডেকে নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত বসিয়ে রাখতেন। তার ডাকে সাড়া না দিলে কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করা হতো। করপোরেশনের কর্মকর্তাদের গণমাধ্যমে কথা বলায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন তিনি। একই সঙ্গে নিজের পছন্দমতো গণমাধ্যম ছাড়া অন্য কোনো গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন না। তবে নিয়মিত তিনি ফেসবুক লাইভ করেন। সাদিক আব্দুল্লাহ নিজে স্বীকারও করেন নগর ভবনে গিয়ে অফিস না করার কথা।
সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের সময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া থাকলেও সাদিক আব্দুল্লাহ এসে তা পরিশোধ করে নগর ভবনকে গতিশীল করেন। কিন্তু নগর ভবনে সাদিক আব্দুল্লাহর পাশাপাশি কর্তৃত্ব চালাতেন তার অনুসারী ছয়জন দলীয় নেতা। এরা হলেন- জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত, আতিকুল্লাহ মুনীম, মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্না, ১৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজিব হোসেন খান, ২১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ সাইদ আহম্মেদ মান্না এবং মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এদের বাইরে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারও কথা বলার সুযোগ নেই। সাদিক আব্দুল্লাহ বিভিন্ন অভিযোগে আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ না দিয়ে সিটি করপোরেশনের ৪০ জনের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেছেন। ২০২১ সালে ১০ জন কাউন্সিলর মেয়রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নেন।
২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি মেয়রের সাদিক আব্দুল্লাহর আপন মামা মফিজুল ইসলাম কামালের বিউটি রোডের নির্মাণাধীন ভবন নোটিশ ছাড়া ভেঙে ফেলা হয়। ২০১৯ সালের অক্টোবরে কলেজ রোড এলাকার একটি দোতলা ভবন নোটিশ না দিয়ে ভাঙতে যায় সিটি করপোরেশন। ওই ভবনের মালিক সাবেক কাউন্সিলর বলে জানা গেছে। এ নিয়ে ওই বছর সংবাদ সম্মেলনও করেন মেয়র। সর্বশেষ ২০২৩ সালের এপ্রিলে বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান খানের ঘর ভাঙতে বুলডোজার পাঠিয়ে তোপের মুখে পড়ে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। শাহজাহান খান অভিযোগ করেন, কোনো নোটিশ ছাড়াই বুলডোজার নিয়ে হামলা করতে আসে সিটি করপোরেশন। এছাড়া সাগরদীতে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসীম উদ্দিনের নির্মাণাধীন ভবন নোটিশ ছাড়া ভেঙে দেওয়া হয় বলে তিনিও অভিযোগ করেন।
১৯৪২ সালে জেলা পরিষদের ৩০ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বরিশাল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব কার্যালয় ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি মাঝরাতে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় সিটি করপোরেশন। এ সময়ে কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে ছিলেন না বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ী এবং ক্লাব সদস্যরা। ক্লাব গুঁড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে সিটি করপোরেশন পূর্বে থেকে কোনো নোটিশ দেয়নি বলে জানান ক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুল আলম গুলজার ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আহসান কবির হাসান। তারা জানান, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নগর ভবন কর্তৃপক্ষ একটি ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া ক্লাবকে ধ্বংস করে দিয়েছে। যদিও এই ঘটনার দুইদিন পরে ফেসবুক লাইভে দুঃখ প্রকাশ এবং ক্লাবের জন্য নতুন স্থান দেওয়ার আশ্বাস দেন মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ।
২০২১ সালের ১৮ আগস্ট রাতে সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনওর বাসভবনের সামনে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের ব্যানার অপসারণে গেলে ইউএনও মুনিবুর রহমান তা দিনে করার জন্য বলেন। এ নিয়ে বাদানুবাদে ইউএনওর বাসভবনে হামলা চালায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ। মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং একপর্যায়ে ইউএনওর নির্দেশে গুলিবর্ষণ করেন আনসার সদস্যরা। এ নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন মেয়র এবং পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। এছাড়া ২০২৩ সালে জেলা পরিষদ নির্বাচনের দিন জিলা স্কুল কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে দলবলসহ কেন্দ্রে ঢুকতে এবং ফেসবুক লাইভ করতে বারণ করলে ইউএনও মুনিরুজ্জামানকে ‘স্টুপিড’ বলেন মেয়র। যে ভিডিও ভাইরাল হয়।
২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি পুলিশের হাতে আটক ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ হাওলাদারকে ছাড়িয়ে নিতে এবং সোহাগের দায়ের করা অভিযোগ মামলা হিসেবে নেওয়ার দাবিতে নগরীর কাউনিয়া থানা ঘেরাও করেন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। ওইদিন মামলা নিতে দেরি করায় রূপাতলী ও নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া বন্ধ করে দেওয়া হয় ঢাকা-বরিশালসহ ১২টি রুটের লঞ্চ চলাচল। চাপের মুখে পুলিশ মামলা নিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। ওই বছরের মে মাসে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবুর নেতৃত্বে এয়ারপোর্ট থানা ঘেরাও করে ছাত্রলীগ-যুবলীগ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এয়ারপোর্ট থানায় দায়ের হওয়া চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার রিপন বিশ্বাসকে ছাড়িয়ে আনতে থানা ঘেরাও করেন তারা।
রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড শ্রমিক নেতা কাওছার হোসেন শিপন এবং নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল ছাত্রলীগের আহবায়ক রইজ আহম্মেদ মান্না এবং লঞ্চ টার্মিনাল পরিমল চন্দ্র দাসকে দিয়ে দখলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। রূপাতলীতে শ্রমিক নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদকে তার কার্যালয়ে মারধর করেন ছাত্রলীগ নেতা রইজ আহম্মেদ মান্না, সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত, আতিকুল্লাহ মুনীমসহ কয়েকজন বলে অভিযোগ করেন সুলতান মাহমুদ। এছাড়া ২৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইদুর রহমান জাকির, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুর রহমান মনিরের নেতৃত্বে বাসায় ঢুকে কুপিয়ে জখম করে আরিফুর রহমান সুমন মোল্লাকে। মেয়রের নির্দেশে এই হামলা চালানো হয় বলে দাবি করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী সুলতান মাহমুদ ও সুমন মোল্লা। এ ঘটনায় ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলাও করেন সুমন মোল্লা।
এছাড়াও সাদিক আব্দুল্লাহ দায়িত্ব গ্রহণের পর বালু পরিবহন, বাড়ির নকশার অনুমোদন বন্ধ করে দেন। কয়েকগুন বাড়িয়ে দেন হোল্ডিং ট্যাক্স। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দিয়ে সড়কে ময়লা ফেলে আন্দোলন ও ঝাড়-মিছিল করানোরও ঘটনা ঘটান। শোক দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় সাবেক যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করানো হয়। এ নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে কথাও বলেন মেয়র। তিনি নেতাকর্মীদের ‘ঘরের মধ্যে ঘর না তোলার আহ্বান জানান।’ স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সাদিক আব্দুল্লাহর বিরোধিতা করে মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্যান্য প্রার্থীরা দলের হাই কমান্ডের কাছেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। যাতে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর জনবিচ্ছিন্নতা, আওয়ামী লীগে বিভাজন সৃষ্টি, উন্নয়ন করতে না পারা, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে দূরত্ব এবং বাসিন্দাদের ওপর অস্বাভাবিক কর আরোপের বিষয়টি তুলে ধরেন।
বলপ্রয়োগ করে নগরী নিয়ন্ত্রণ, জনবিচ্ছিন্ন আচরণ এবং প্রশাসনের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধে জড়ানোই কাল হয়েছে সাদিকের বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরিশালের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম।
তিনি বলেন, তাদের দলের হাই কমান্ড কি জন্য তাকে মনোনয়ন দেননি সেটি হাই কমান্ড বলতে পারবেন। নগরবাসী হিসেবে আমি মনে করি প্রচণ্ড রকমের জনবিচ্ছিন্ন ছিলেন মেয়র। তাকে দিনে কোনো নাগরিক পেতেন না। রাতে পাওয়া যেত। ট্যাক্স বাড়িয়ে মানুষের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছিলেন। তার মেয়াদকালে ১ টাকাও উন্নয়ন ফান্ড সংগ্রহ বা তহবিল গঠন করতে পারেনি। নগরীর কোনো উন্নয়ন তিনি করতে পারেননি। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় দিনের পর দিন অন্ধকারে থাকতে হয়েছে নগরবাসীকে। যাকে তার পছন্দ হতো না তাকে নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করতেন। অর্থাৎ একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ কর্তা হতে গিয়ে নৈরাজ্য চালিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ৭ প্রার্থী ফরম কিনেছিলেন। গত শনিবার (১৫ এপ্রিল) মনোনয়ন বোর্ডের সভায় বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহকে সরিয়ে তার আপন চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহকে দলীয় মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোশন নির্বাচন।
২০১৮ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এক লাখ ১১ হাজার ৯৫৬ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।