পৃথিবীতে তৈরি হওয়া এ যাবৎকালের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট ‘স্টারশিপ’ সোমবার তার প্রথম মনুষ্যবিহীন যাত্রা শুরু করতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করেছে।
স্থানীয় সময় সোমবার সকালে মেক্সিকো উপসাগরের তীরবর্তী যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বোকা চিকা থেকে এটি উৎক্ষেপণের কথা ছিল। তার পর এটির ওপরের অংশটি পূর্ব দিকে যাবে এবং পৃথিবীর প্রায় পুরো চারপাশ জুড়ে একবার প্রদক্ষিণ করে সাগরে নেমে আসবে।
প্রায় ১২০ মিটার বা ৪০০ ফিট উঁচু এই বিশালকায় রকেটটি তৈরি করেছে মার্কিন উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের স্পেসএক্স কোম্পানি।
মানুষের তৈরি সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী এ রকেট উৎক্ষেপণের সময় যে উর্ধমুখী চাপ বা ‘থ্রাস্ট’ তৈরি হবে, তার পরিমাণ এ পর্যন্ত যত রকেট তৈরি হয়েছে – তার প্রায় দ্বিগুণ।
কিন্তু উৎক্ষেপণের কয়েক মিনিট আগে জানানো হয়, রকেটটি তরল গ্যাসের জ্বালানির সঠিক চাপ রক্ষা করে এমন একটি ভালভ ‘জমে গিয়েছিল’ এবং ঠিকমত কাজ করছিল না। তাই কোন রকম ঝুঁকি না নিয়ে উৎক্ষেপণ পিছিয়ে দেবারই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এক টুইট বার্তায় ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এটি আবার উৎক্ষেপণের চেষ্টা করা হবে।
বিশ্বের এ যাবৎকালের বৃহত্তম রকেট উৎক্ষেপণ দেখতে বোকা চিকায় কয়েক হাজার লোক জড়ো হয়েছিল। আরো বহু লক্ষ মানুষে বসেছিলেন পৃথিবীর নানা প্রান্তে টিভির সামনে।
কিন্তু এটি শুধু বৃহত্তম রকেটই নয়, প্রথম পুনর্ব্যবহারযোগ রকেটের প্রথম পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণও বটে। এটি ব্যর্থ হলে মানুষের অন্য গ্রহে যাওয়া এবং বসতি স্থাপনের একটি বাহন তৈরির এই উদ্যোগ এক বড় ধাক্কা খেতো।
তাই স্পেসএক্স এ নিযে তাড়াহুড়ো করে কোন অকারণ ঝুঁকি নিতে রাজি নয়।
সম্ভবত তাই উৎক্ষেপণের আগেই ইলন মাস্ক সবার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন – মানুষ যেন এই প্রথম উৎক্ষেপণ থেকে খুব বেশি কিছু আশা না করেন।
কারণ এসব রকেটের প্রথম যাত্রায় কিছু না কিছু একটা সমস্যা দেখা দেওয়া মোটেও অস্বাভাবিক নয়।
টুইটারের একটি ইভেন্টে ইলন মাস্ক বলেন, এটি হচ্ছে একটি বিশালকায় এবং অত্যন্ত জটিল রকেটের প্রথম উৎক্ষেপণ, তাই এটি হয়তো না-ও ঘটতে পারে। আমরা খুব সতর্ক থাকবো। যদি কোন কিছু নিয়ে আামদের উদ্বেগ থাকে আমরা এই উৎক্ষেপণ স্থগিত করে দেবো।
সোমবারের এ যাত্রায় রকেটটিতে কোন মানুষ আরোহী বা ক্রু হিসেবে ছিল না।
ইলন মাস্ক আশা করছেন স্টারশিপের মাধ্যমে রকেট ব্যবসাকে তিনি সম্পূর্ণ পাল্টে দেবেন।
কারণ, এই রকেট তৈরি হয়েছে এমনভাবে যে তা পুরোপুরি এবং দ্রুত আবার ব্যবহার করা যাবে।
ইলন মাস্কের স্বপ্ন হলো – অন্য গ্রহে মানুষের বসতি স্থাপন করতে যাবার উপযোগী রকেট তৈরি করা – যা বার বার ব্যবহার করা যাবে এবং একেকবারে ১০০-র বেশি মানুষকে মঙ্গলগ্রহে নিয়ে যেতে পারবে।
এর উপযোগী করেই বানানো হয়েছে এই স্টারশিপ রকেটযানকে।
এই রকেট এখন তৈরি, এবং এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ যদি সফল হয় – তাহলে তা হবে এক বিরাট অগ্রগতি।
রকেটটির দুটি অংশ – একটি হচ্ছে ‘সুপার হেভি’ নামে তরল গ্যাসের জ্বালানিচালিত রকেট – আর অপরটি হলো ‘স্টারশিপ’ নামের মহাকাশযানটি – যা এই ‘সুপার হেভি’র ওপর বসানো থাকবে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা