ঢাকা অফিস : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনো দেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে গণতন্ত্র আনতে পেরেছে কি না প্রশ্ন রেখেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেবে কি না, সেটা আমি বলতে পারবো না। তবে তাদের প্রতি আমার জিজ্ঞেস, নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কোথাও তারা গণতন্ত্র আনতে পেরেছে কি না। মূলত তারা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কোনো দেশে গণতন্ত্র আনতে পারেননি। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে অংশ নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতার ঢাকায় এলে জাতীয় নির্বাচন এবং রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনকে প্রশ্ন করা হয় ‘যুক্তরাষ্ট্র আরো নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে, এমন শোনা যাচ্ছে?’ জবাবে ড. মোমেন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেবে কি না, সেটা আমি বলতে পারি না। তবে তাদের জিজ্ঞেস করেছি, নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কোথাও গণতন্ত্র আনতে পেরেছে কি না। তারা সেটা বলতে পারেনি। আমি জিজ্ঞেস করেছি, তোমরা কম্বোডিয়া, নাইজেরিয়া, হাঙ্গেরি প্রভৃতি দেশে গণতন্ত্রের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছো। কিন্তু কোথাও কি গণতন্ত্র এসেছে? তিনি বলেন, এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানেই যান, অনেক দেশের সরকার প্রধান তার সঙ্গে বৈঠক করতে চান। তারা আমাদের কাছে জিনিসপত্র বিক্রির প্রস্তাব নিয়ে আসেন। যেমন ধরুন, আমরা এখন একটু বৈচিত্র আনতে চাই। আগে আমরা বোয়িং থেকে উড়োজাহাজ কিনতাম। এখন এয়ারবাস থেকে কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে এখন গন্ডগোল। বোয়িং এখন অর্ধেক দামে আমাদের উড়োজাহাজ দিতে চায়।
চীনকে আটকানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্ঠা জ্যাক সুলিভানকে বাংলাদেশে টাকাপয়সা খরচ করার পরামর্শ দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, অন্য দেশগুলোকেও একথা বলেছি। ওয়াশিংটনে গত ২৭ সেপ্টেম্বর জ্যাক সুলিভ্যানের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আমি তাকে বললাম আপনাদের খালি উপদেশ আর হুকুম এবং ভয় দেখাবেন এগুলো দিয়ে চীনকে বাংলাদেশে প্রবেশ আটকানো যাবে না। এটি করতে হলে টাকাপয়সা নিয়ে আসেন। উনি (জ্যাক সুলিভ্যান) আমাকে বললেন যে তিনি চেষ্টা করছেন। তারা বিষয়টি অনুধাবন করেন। তিনি বললেন, আপনি বিষয়টি মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে তুলে ধরেছিলেন এবং আমি বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছি। আমি এজন্য উদ্যোগ নিয়েছি। আমেরিকা ২০০ বিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল তৈরি করতে চায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দেবে বলে। তিনি আরো বলেন, আমরা অন্যান্য বড়লোক দেশগুলোকে বলেছি তোমরা যদি বাংলাদেশে চীনের যাওয়া আটকে রাখতে চাও, তবে শুধু আদেশ এবং সতর্কতা দিয়ে লাভ হবে না। আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না বা উপদেশ দিয়ে লাভ হবে না। তোমরা যদি চীনকে আটকাতে চাও তবে সঙ্গে কিছু টাকাপয়সা নিয়ে আসবে।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, চীন থেকে আমরা ঋণ নিয়েছি মাত্র ৪০০ কোটি ডলার। এটি আমাদের জিডিপির এক শতাংশ। তবে ফলাও করে কিছু প-িত বলেন যে বাংলাদেশ চীনের লেজুড় হয়ে গেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মূলত দুটি ইস্যুতে আলোচনা করতে বাংলাদেশে আসবেন। একটি হলো, রোহিঙ্গা সমস্যা এবং অন্যটি জাতীয় নির্বাচন। এছাড়া উভয়পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। আমরাও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু সরকার চাইলেই ভায়োলেন্স ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে পারে না। এটার জন্য সব দলের দায়িত্ব রয়েছে। সবার আন্তরিকতা থাকলে ভায়োলেন্স ছাড়া নির্বাচন করা সম্ভব।
এক প্রশ্নে জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ভিসামুক্ত ভ্রমণে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি। কলম্বোতে ইন্ডিয়ান ওশান রিম-আইওরার সম্মেলনের সাইড লাইনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা আমার হয়েছে। তাকে বলেছি, আপনারা অনেক ভিসা দেন। কিন্তু ভিসা পেতে এখন দেরি হচ্ছে। মেডিকেল ভিসার ক্ষেত্রেও দেরি হচ্ছে। তখন তিনি জানিয়েছেন- এ বিষয়ে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে আলাপ করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে বলেও জানান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে তিনি না বলেননি। তিনি বলেন, সিলেটে কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সংলাপ হয়েছে। সেখানে দুই দেশের মধ্যে ভিসামুক্ত ভ্রমণের জন্য প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা দুই দেশের মধ্যে ভিসামুক্ত যাতায়াত চাই।
চীনকে ঠেকাতে বাংলাদেশে টাকা নিয়ে আসতে বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী!
৪০
previous post