ঢাকা অফিস: দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক। ২০১২ সালে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর গত কয়েক বছরে কারখানার সংস্কার ইস্যুতে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছিল এই খাতে। গত পাঁচ বছরে করোনা-মূল্যস্ফীতি-মুদ্রাস্ফীতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির চাপসহ নানা সঙ্কট মোকাবিলা করেছে দেশ। এসবের মাঝেও পোশাক খাত অর্থনীতির প্রাণ ভোমরা হয়ে থেকেছে। অন্যসব খাতের পতন হলেও এই খাতের অগ্রযাত্রা থামেনি। আর এর সবই সম্ভব হয়েছে, শ্রমিকদের অক্লান্ত শ্রম ও অমানবিক জীবনের বিনিময়ে গত অর্থবছরে ৮৪ শতাংশ রফতানি আয় হয়েছে এই খাত থেকে।
শুধু তাই নয়, গত পাঁচ বছরে ৩৩ থেকে ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি শিল্পে পরিণত হয়েছে এটি। নতুন বাজারে প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি রফতানি হয়েছে। কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিলে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে সরকার নিম্নতম মজুর বোর্ড গঠন করে। যারা গত ২২ অক্টোবর বোর্ডের চতুর্থ সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরি দাবি করে প্রস্তাব দেন। তার বিপরীতে মালিকপক্ষ প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ১০ হাজার ৪০০ টাকার মজুরি প্রস্তাব দেয়। পরের দিন ২৩ অক্টোবর থেকেই পোশাক শ্রমিকরা তাদের মজুরি বা বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবি নিয়ে আন্দোলন নামেন। গাজীপুর-আশুলিয়া-সাভার-মিরপুরসহ গার্মেন্টস অধ্যুষিত এলাকায় শ্রম অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। গত সোমবার দুজন শ্রমিক নিহত হন। তারপর গত মঙ্গলবার আন্দোলন আরও সহিংস হয়ে উঠলে বিজিএমইএ সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, মালিকেরা চাইলে কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন, এররপরই থেকে একে একে কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন মালিকেরা। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে শ্রমিকরা। এছাড়া দীর্ঘ বিরতি পর আবারও অস্থির দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য। বিশেষ করে শিপমেন্ট জটিলতায় সময়মতো পণ্য না পেলে বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে অর্ডার বাতিল করতে পারে বলে শঙ্কায় গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা।
এদিকে শ্রমিক আন্দোলনের মুখে ১০ হাজার ৪০০ টাকার পরিবর্তে নতুন মজুরি প্রস্তাব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালিকপক্ষ, যদিও প্রস্তাব কত টাকার হবে, সেটি তারা জানায়নি। তবে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মজুরি চূড়ান্ত হবে। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে নতুন মজুরি কাঠামো চূড়ান্ত হবে। নিম্নতম মজুরি বোর্ডের গত বুধবারের সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। অপরদিকে শ্রমিক আন্দোলনের মুখে গাজীপুর ও আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধের সংখ্যা বেড়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক থাকলেও গাজীপুর ও আশুলিয়ায় কমপক্ষে ৪২১টি কারখানা বন্ধ রয়েছে। অন্যান্য এলাকা হিসেব করলে এই সংখ্যা ৫শ’র ওপরে।
এর আগে বাংলাদেশে ২০১৮ সালে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি আট হাজার টাকা ঘোষণা করা হয়। শ্রম আইন অনুযায়ী, প্রতি পাঁচ বছর পর পর নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে শ্রমিকদের বেতন পুনরায় নির্ধারণ করার নিয়ম রয়েছে। পোশাক শ্রমিকদের মজুরি কত হবে তা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে এখন আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে সর্বনিম্ন মজুরি ২৩ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
একে অযৌক্তিক দাবি বলে উল্লেখ করেছে বিজেএমইএ। সংস্থাটির পক্ষ থেকে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ১১ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
গাজিপুর-আশুলিয়ার অর্ধেক কারখানা গত মঙ্গলবার থেকে বন্ধ। গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশতাধিক কারখানা আজ শুক্রবার পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে নোটিশ দিয়েছে। গতকাল ছয়টি কারখানার শ্রমিকেরা সকালে কাজে এলেও ঘণ্টাখানেক পর কাজ বন্ধ করে তারা কারখানা থেকে চলে যান।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের মজুরি পুনর্র্নিধারণের জন্য গত ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে। তবে এই সময়ে ন্যূনতম মজুরির ন্যায্য দাবিতে চলা আন্দোলন আগের মতোই থাকবে। ইন্ড্রাস্টিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল এবং বাংলাদেশে শ্রমিক ফেডারেশন এর সভাপতি আমিরুল হক আমিন একথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তারা আশা করছেন এই সময়ের মধ্যই নতুন মজুরি নির্ধারণ করার ঘোষণা আসবে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক নেতা বলেন, কারখানা বন্ধ করা, হামলা-মামলা ও গ্রেফতারে আন্দোলন দমানো যাবে না। শ্রমিকরা তাদের ন্যূনতম মজুরি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবে।
এমনিতেই বিশ্ব মন্দার কারণে সঙ্কটের মধ্যে গার্মেন্টস শিল্প। রফতানি আয় ধরে রাখা এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের কাছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় বিদেশি ক্রেতারা পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘায়িত হলে আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মৌসুমের অর্ডার কমে যেতে পারে বলে শঙ্কায় বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা বিদেশিদের কাছে ভয়ের সঞ্চার করে। অর্ডার আমরা ঠিক মতো সরবরাহ করতে পারবো কিনা, সেটা তারা চিন্তা করে। সময়মতো পাঠাতে না পারলে তাদের ব্যবসায় সমস্যা হবে। ফলে তারা এমন পরিস্থিতিতে অর্ডার কমিয়ে দেয়। তাই আমরা চাই, দেশের স্বার্থে যেন অস্থিরতা না থাকে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে নিজেদের অর্ডার বাড়াতে তৎপর ভিয়েতনাম-কম্বোডিয়ার মতো প্রতিযোগী দেশগুলো। এ অবস্থায় দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ধস ঠেকাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সহনশীল হওয়ার আহ্বান ব্যবসায়ীদের।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের চেয়ারম্যান এস এম আবু তৈয়ব বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের অর্থনীতির জন্য খুব ক্ষতিকর হবে। এমনিতেই পোশাক শিল্প প্রতিযোগিতায় জর্জরিত। এর মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসায় ব্যাঘাত ঘটলে বিষয়টি দুঃখজনক হবে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) সারোয়ার আলম বলেন, গাজীপুর শহরের আশপাশের এলাকা ছাড়াও কোনাবাড়ি, কাশিমপুর ও কালিয়াকৈরে ৩৮৬টি পোশাক কারখানা আমার জানা মতে বৃহষ্পতিবার বন্ধ রয়েছে। কারখানা বন্ধের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে ৩০ থেকে ৩৫টি পোশাক কারখানার ছুটির নোটিশ পেয়েছি। আবার কিছু কারখানায় গতকাল সকালে কাজ শুরু হলেও পরে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে পোশাক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে মিরপুরে রাস্তায় বিক্ষোভ করছেন পোশাক শ্রমিকরা। বিক্ষোভের মধ্যে পুলিশের বাধা। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে কয়েক ঘণ্টা সংঘর্ষ চলে। পরবর্তীতে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়ে মাঠ দখলে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ নিয়ে চতুর্থ দিনের মতো আন্দোলন করছেন তারা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে মিরপুর ১০-১১ নম্বর পর্যন্ত সড়কে কয়েক হাজার শ্রমিক অবস্থান করছিলেন। অ্যাপোলো ফ্যাশন, অ্যাপোলো বিডি, কনকর্ড, ডেকো অ্যাপারেলস, টিউলিপ, আজমত ফ্যাশনসহ নামে কয়েকটি গার্মেন্টসের শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন।
প্রথমে আন্দোলনরত শ্রমিকরা একটি মিছিল নিয়ে মিরপুর ১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের দিকে যান। পরে মিরপুর ১১ নম্বর পূরবী সিনেমা হলের সামনে এসে সড়কে অবস্থান নেন। আরেকটি মিছিল সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরের দিকে যায়।
পোশাক শ্রমিকরা জানান, গত মঙ্গলবার সকালে ঘটনার সূত্রপাত হয় পল্লবীতে ইপিলিয়ন নিটওয়্যারস লিমিটেডের একটি কারখানার কর্মীদের আটকে রাখা কেন্দ্র করে। অন্য কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলনে ইপিলিয়নের কর্মীরা যুক্ত হতে পারেন, এমন আশঙ্কা থেকে তাদের বের হতে দেয়া হচ্ছিল না।
কারখানাটির আশপাশের এলাকায় লাঠিসোঁটা নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অনুসারীরা শ্রমিকদের ভয় দেখাচ্ছিলেন। এ নিয়ে ইপিলিয়নের কর্মীদের সঙ্গে তাদের প্রথমে বাগবিতন্ডা হয়। এর জেরে পোশাককর্মীদের ওপর তারা হামলা করেন। এদিকে পোশাক কারখানায় অপ্রীতিকর অবস্থা প্রতিরোধে গতকাল বৃহষ্পতিবার থেকে আশুলিয়া-সাভার, টঙ্গি-গাজীপুর-কোনাবাড়ী, আব্দুল্লাহপুর, মিরপুর, রামপুরা এলাকায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, কারখানা বন্ধ থাকলে বা কাজ না করলে শ্রমিকরা মজুরি পাবেন না। বিজিএমইএ’র সভাপতির এ হুমকিতে শ্রমিকরা আরও নড়েচড়ে বসেছেন। তারা বলছেন, তাদের ন্যায্য দাবির আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতেই এ ধরনের হুমকি দিয়েছেন মালিকপক্ষ। এখন উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতার চেষ্টা করা চলছে।
আমাদের গাজীপুর জেলা সংবাদদাতা মো. দেলোয়ার হোসেন এবং সাভার সংবাদদাতা সেলিম আহমেদ জানান, গাজীপুরে গত ১০ দিন ধরে শ্রমিকরা তাদের বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর, মৌচাক, কোনাবাড়ি কাশিমপুর ভোগড়া বাইপাসসহ বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক কারখানা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। শ্রমিককের এ আন্দোলনের ঘটনায় পুলিশের গুলিতে রাসেল হাওলাদার নামে এক গার্মেন্টস শ্রমিক মারা যায়। সে ভোগড়া বাসন সড়ক এলাকায় অবস্থিত ডিজাইন ফ্যাশন নামক কারখানার শ্রমিক ছিলেন।
গত এক সপ্তাহের শ্রমিক আন্দোলনে গাজীপুর জেলার সফিপুর পুলিশ বক্সে আগুন, মৌচাক পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা, ভোগড়া বাইপাস সড়কে পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনায় গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানায় এবং গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি ও বাসন থানায় দুই সহগ্রাধিক শ্রমিকের নামে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় কোনাবাড়ি থানা পুলিশ ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে।
অপরদিকে কোনাবাড়ি কাশিমপুর এলাকায় একটি কারখানায় শ্রমিকদের দেয়া আগুনে পুড়ে অপর এক শ্রমিক মারা যায়। শ্রমিকদের আন্দোলনের এই ঘটনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগকৃত কারখানাগুলো বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও একাধিক গার্মেন্টস কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ি এলাকায় অনন্ত গ্রুপের একটি কারখানায় শ্রমিকদের দেয়া আগুনে এক শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় কোনাবাড়ি থানায় মামলা হলে পুলিশ গত বুধবার ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার গাজীপুর মহানগরীর নাওজোড় এলাকায় শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করতে চাইলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাদেরকে সরিয়ে দেয়। বর্তমানে পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে এবং বেশিরভাগ গার্মেন্ট শ্রমিক তাদের নিজ কর্মস্থলে যোগদান করেছেন।
গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি এলাকার অন্যতম বড় কারখানা তোষুকা ফ্যাক্টরি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ আছে। এর আগে এই কারখানা কর্তৃপক্ষ অনিবার্য কারণ দেখিয়ে প্রদান ফটকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ থাকার নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্ধ থাকা কারখানার এক কর্মকর্তা জানান, শ্রমিক আন্দোলনের কারণে কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।
গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ি এলাকার তোষুকার গ্রুপের মিটিং সেকশনের শ্রমিক শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের বেতন দেয়া হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এই টাকায় আমাদের সংসার চলছে না। ঘর ভাড়া দেয়ার পর যা থাকে তা দিয়ে কোনো রকমে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি। সাধারণভাবে বেঁচে থাকার জন্য এখন আমাদের দাবি সর্বনিম্ন বেতন ২৩ হাজার টাকা দিতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলতে থাকবে।
বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক জোটের নেতা মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, শ্রমিকদের মজুরি বোর্ড নিয়ে সরকার কাজ করছে। এখনো সেটি চূড়ান্ত হয়নি। যখন মজুরি চূড়ান্ত করে ঘোষণা দেয়া হবে তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিব সেটি মানবো কি মানবো না।
এদিকে, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে টানা তিন দিন শ্রমিক অসন্তোষের পর শান্ত আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চলে খোলেনি অধিকাংশ পোশাক কারখানা। তবে একটি কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে। নতুন করে আরো কয়েকটি কারখানা ছুটি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে শিল্প পুলিশ বলছে পরিস্থিতি শান্ত স্বাভাবিক। বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টার দিকে আশুলিয়ার কাঠগড়া উত্তরপাড়া এলাকার ফ্যাশন গ্লোব গ্রুপের এআর জিন্স নামের কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছে, সকাল আনুমানিক ১০ টার দিকে হঠাৎ কিছু শ্রমিক একত্রিত হয়ে কাঠগড়ার উত্তরপাড়া এলাকার ফ্যাশন গ্লোব গ্রুপের এআর জিন্স কারখানায় হামলা চালায়। এসময় তারা কারখানার শ্রমিকদের বের করে আন্দোলনে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এআর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেডের পার্কিং করা একটি প্রাইভেটকার ও একটি নোয়া গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ ব্যাপার ফ্যাশন গ্লোব গ্রুপের কর্মকর্তা মো. লিটন বলেন, আমাদের কারখানা স্বাভাবিকভাবে চলছিল। সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে আমাদের কারখানার পাশের আগামী অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিকরা হঠাৎ করে কারখানায় হামলা চালায়। পরে বাধ্য হয়ে শ্রমিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে আজকের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে, বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়ক ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আন্দোলনকারী কোনো শ্রমিককে দেখা যায়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে রাস্তার পাশের বিভিন্ন কারখানার মূল ফটকে নোটিশ টাঙ্গিয়ে দিয়ে একদিনের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হলেও সেসব কারখানা বৃহস্পতিবারও বন্ধ ছিল। সড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে।
আশুলিয়া এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজিবির লে. কর্নেল রেজাউল কবির বলেন, আশুলিয়ায় আমাদের ১০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন রয়েছে। আজসহ তিন দিন ধরে বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। নিয়মিত বিজিবি টহল কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা সজাগ রয়েছি।
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, গত তিন দিনের তুলনায় পরিস্থিতি ভাল। অনেক ফ্যাক্টরিতে কাজ হচ্ছে। আবার কিছু কিছু ফ্যাক্টরি ছুটি দিয়ে দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গত ৩ দিন ধরে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের বেশকিছু পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও আন্দোলন করেছে। তখন পুলিশের সাথে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে শিল্প পুলিশসহ থানা পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতায় শঙ্কিত গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা।