Home 2nd Featured নির্বাচনের আগ মুহূর্তে দেশজুড়ে অঘোষিত ‘ক্র্যাকডাউন’

নির্বাচনের আগ মুহূর্তে দেশজুড়ে অঘোষিত ‘ক্র্যাকডাউন’

টার্গেট বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মিরা

Mukto Chinta
০ comment ১১৬ views

আহমেদ ইকবাল, ঢাকা: যদি বিশেষ কোনো অবস্থার সৃষ্টি না হয় তাহলে আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে এখন আর কোনো সন্দেহ নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর এবং উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্রগুলোর বারংবার আহবান সত্বেও সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন যে হচ্ছে না সেটাও নিশ্চিত। তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের কাছে ভোটের সুষ্ঠুতা প্রমাণের জন্য এখন বিএনপি নেতা-কর্মিদের বা সরকার বিরোধীদের জেলের ভেতরে রাখাটাই সবচেয়ে উত্তম পন্থা বলে ভাবছে সরকার। সেই অনুযায়ীই এখন সবকিছু করা হচ্ছে। বিরোধী শিবির যাতে নির্বাচনকে নিরুৎসাহিত না করতে পারে সে জন্য নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে সরকার সারাদেশে অঘোষিত একটি ক্র্যাকডাউন বা ‘সন্ত্রাস বিরোধী’ অভিযান পরিচালনা করার কথা ভাবছে। তবে সেই অভিযানের মূল টার্গেট বিএনপি এবং সমমনা দলগুলোর নেতা-কর্মিরা। পুলিশ প্রশাসনের কাছে এরই মধ্যে এই বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিএনপি’র একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন, সারাদেশে কোনো কারণ ছাড়াই তাদের দলের নেতা-কর্মিদের বাড়ি বাড়ি রাতের বেলা অভিযান চালানো হচ্ছে। দরজা-জানালা ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। যাকে পাচ্ছে তাকেই আটক করে নিয়ে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো হচ্ছে। আর যাদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই মামলা ছিলো সেসব মামলার কোনো ভিত্তি না থাকলেও সবাইকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি কোনো ফয়সালার ভিত্তিতে বিএনপি নির্বাচনে যায় হলেও যাতে বিএনপি প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ না নিতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আর কোনো নেতা নির্বাচন করতে চাইলেও যেনো তার পক্ষে কোনো কর্মি এমনকি নির্বাচনী এজেন্টও না পাওয়া যায় সেই লক্ষ্য নিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা উপর মহল থেকে যেভাবে নির্দেশ পেয়েছেন সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের কাছে চাকুরী রক্ষা করাটাই এখন কঠিন হয়ে উঠেছে। ওই কর্মকর্তা জানান, পুলিশের অনেক অফিসারই এখন আর বিনা কারণে কারো বাসা-বাড়িতে অভিযান চালাতে চান না। কারণ তারা নিজেদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে প্রতিনিয়তই গালমন্দ শুনছেন বিনা কারণে সাধারণ মানুষকে আটক করার জন্য।
বর্তমানে ব্যাপকহারে ধরপাকড় এবং মামলা মোকদ্দমা চললেও সেটা নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে আরো ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। তার আগে নেতা-কর্মিদের বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোর রায় ঘোষণার কাজও চলছে পুরোদমে। নি¤œ আদালতে আইন মন্ত্রণালয়ের এক মন্ত্রীর নির্দেশে যথাসম্ভব সব মামলার রায় এবং সাজা দেয়ার বিষয়ে চাপ দেয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সেই মোতাবেক রাতের বেলাতেও আদালত বসিয়ে কোনো রকম স্বাক্ষী প্রমাণ ছাড়াই বাসে আগুন, পুলিশের উপর হামলা, বা অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করার অপরাধের কথা বলে সাজা দেয়া হচ্ছে।
গনহারে এবং সঠিক তদন্ত না করে মামলা করা এবং ট্রায়াল শুরু করার কারণে অনেক নেতা যারা মারা গেছেন তাদেরকেও সাজা দেয়া হচ্ছে। অথচ ওই নেতা বা কর্মি মারা গেছেন দুই তিন বছর আগে। এদিকে আদালত প্রতিবেদকদের তথ্য অনুযায়ী গত দুইমাসে কয়েক হাজার নেতা-কর্মিকে সাজা দেয়া হয়েছে বিভিন্ন মেয়াদে। আর গত তিন দিনেই সাজা দেয়া হয়েছে বিএনপি’র চার শতাধিক নেতা-কর্মিকে।
বিএনপি নেতারা তাদের কর্মিদের কাছ থেকে হাজার হাজার অভিযোগ পাচ্ছেন বিনা কারণে তাদেরকে হয়রানী করার বিষয়ে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, বিএনপিকে হামলা, মামলা দিয়ে শেষ করে দেয়ার নীল নকশা নিয়ে এগুচ্ছে সরকার। কিন্তু কোনো ভাবেই বিএনপিকে শেষ করা যাবে না। কারণ বিএনপি জনগনের দল। তিনি দলের নেতা-কর্মিদেরকে যথা সম্ভব নিজেদেরকে নিরাপদে রেখে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাবার পরামর্শ দিয়েছেন। সরকার নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত তারা বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে না বলেই তার বিশ্বাস। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত সামনে আরও কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি আসতে পারে বলে জানিয়েছেন। ইতিমধ্যেই টানা হরতাল অবরোধ চলছে।
বিএনপি’র সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট জয়নুল আবেদীন মেসবাহ জানিয়েছেন, সাজানো মামলায় বিএনপি নেতা-কর্মিদের জেলে ঢুকানোর জন্য নানা ষড়যন্ত্র চলছে। সেই মোতাবেক স্বাক্ষী প্রমাণ ছাড়াই শত শত নেতা কর্মিকে সাজা দেয়া হচ্ছে। এমনকি মামলার নথি চেয়েও তা পাওয়া যাচ্ছে না। এটা মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন বলেও তার অভিযোগ।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। উচ্চ আদালত পুরনো মামলার বিচার শেষের নির্দেশনা দিলেও আদালত অন্য মামলা বাদ দিয়ে রাজনৈতিক মামলা বেছে নিয়েছেন। দ্রুত গতিতে মামলার বিচার কাজ শেষে করতে একদিন পরপর শুনানি হচ্ছে। টানা শুনানি হওয়ার নজিরও আছে। সাক্ষীদের ফোন করে ডেকে আনছে রাষ্ট্রপক্ষ। তিনি বলেন, রাতেও শুনানি হচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মহসিন রশিদ বলেন, এসব মামলায় কোনো নিরপেক্ষ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়নি। পুলিশের সাক্ষ্য নিয়েই মামলার সাজা দেয়া হয়। এমনকি ফৌজদারি কার্যবিধিতে বর্ণিত বিচারিক প্রক্রিয়াগুলোও অনুসরণ করা হচ্ছে না। সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী জেডআই খান পান্না বলেন, বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে যেভাবে সাজা হচ্ছে, এটা যদি সবসময় সব ক্রিমিনাল ও সত্যিকারের অপরাধীদের বেলায় হতো তাহলে খুশি হতাম। এমন গতি থাকলে দেশে কোনো মামলার জটই থাকতো না। একটি বিষয় পরিষ্কার তা হলো ট্রায়াল ছাড়া কাউকে সাজা দেয়ায় কোনো আইন নেই।
উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত নেতাদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের এক উপদেষ্টা, একজন ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব একজন, সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক চারজন, নির্বাহী কমিটির সদস্য তিনজন, যুব ও স্বেচ্ছাসেবকদলের পাঁচ শীর্ষ নেতা এবং জেলা পর্যায়ের কয়েকজন সিনিয়র নেতা আছেন। সাজা হয়েছে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব (৪ বছরের সাজা), ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান (৪ বছরের সাজা) যুগ্মমহাসচিব হাবিব-উন- নবী খান সোহেল (২ মামলায় সাড়ে ৩ বছর), তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল (২ মামলায় সাড়ে ৩ বছর), স্বেচ্ছাসেবক-বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু (দেড় বছর), গ্রামসরকার-বিষয়ক সহ-সম্পাদক বেলাল আহমেদ (৪ বছরের সাজা), সহপ্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম (৪ বছরের সাজা), নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম (আড়াই বছরের সাজা), হাবিবুর রশিদ (২ বছরের সাজা), আকরামুল হাসান (২ বছরের সাজা), যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব (২ মামলায় সাড়ে ৪ বছরের সাজা), যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু (২ বছরের সাজা), স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান (২ বছরের সাজা), যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান (৩ বছরের সাজা), সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার (একাধিক মামলায় সাজা), রংপুর জেলা বিএনপি’র সদস্যসচিব আনিসুর রহমান লাকু (১০ বছরের সাজা) ও মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব এডভোকেট মাহফুজ উন নবী ডন (১০ বছরের সাজা), রাজশাহী জেলা বিএনপি সভাপতি আবু সাঈদ চাঁদসহ যুবদল, ছাত্রদল এবং অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম জাহাঙ্গীর, বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির স্বেচ্ছাসেবক-বিষয়ক সহ-সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল (ছয় বছর ৯ মাস), স্বেচ্ছাসেবকদলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানকে সাজা দেয়া হয়েছে।
যাদের সাজা হয়েছে তারা আর নির্বাচনের আগে আর জামিন পাচ্ছেন না এটা নিশ্চিত। তা ছাড়া অন্য আরও অনেককে সাজা দেয়ার প্রক্রিয়া চুড়ান্ত বলে জানা গেছে।

You may also like

Leave a Comment

Muktochinta

Multochinta is a famous news media from New York. 

Subscribe my Newsletter for new blog posts, tips & new photos. Let's stay updated!

All Right Reserved. 2022 emuktochinta.com