Home Featured মার্ক জাকারবার্গ ‘অনিরাপদ ফেসবুকের জন্য দায়ী’

মার্ক জাকারবার্গ ‘অনিরাপদ ফেসবুকের জন্য দায়ী’

Mukto Chinta
০ comment ২২৭ views

কাজী মেহেদী হাসান : কেটি হারবাথ সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন। ফেসবুক করপোরেশন যেটি কিছুদিন আগে নাম বদলে মেটা করপোরেশন হয়েছে, তার সাবেক রাজনীতি ও পাবলিক পলিসি বিষয়ক পরিচালক ছিলেন তিনি।গত মার্চ মাসে ফেসবুক থেকে পদত্যাগ করেছেন। এরপর এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র ও রাজনীতিতে যে সব খারাপ প্রভাব পড়ছে তা নিয়ে সরাসরি ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের নেতৃত্বের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন তিনি। যেমনটি করেছিলেন কিছুদিন আগে ফেসবুক থেকে আরেক পদত্যাগকারি ফ্রান্সেস হাউগেন। সম্প্রতি কেটি হারবাথের একটি সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রভাবশালী দৈনিক ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল। যেখানে মিস হারবাথ দাবি করেছেন আগামী ২০২৪ সালের যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ফেসবুকের মাধ্যমে যেন খারাপ প্রভাব না পড়ে সেটা বন্ধ করতে হারবাথ ফেসবুকের কাছে যে প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন তা বাতিল করে দেয়া হয়েছে। ফেসবুক কে নিরাপদ করার তার চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে কোম্পানি থেকে গত বছরের মার্চে পদত্যাগ করেন ৪১ বছর বয়সী কেটি হারবাথ।

ফেসবুকে কেটি হারবাথের কাজ ছিলো ফেসবুকে ঘৃণা, গুজব, মিথ্যা-তথ্যের মতো বিষয়গুলো মুক্ত করে সুস্থ গণতন্ত্রের স্বার্থে রাজনীতির জন্য উপযোগি প্লাটফর্ম করে দেয়া। তবে তিনি বলছেন কাজগুলো তিনি ঠিকভাবে করতে পারেননি। তার দাবি, গত বছরের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলার জন্য ফেসবুক এবং অন্যান্য সোশ্যাল-মিডিয়া প্লাটফর্মগুলি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ফসবুক ও অন্য প্লাটফর্মগুলো চাইলে ঘৃণা, গুজব, সহিংসতার প্ররোচনার পোস্টগুলোর প্রচার ও প্রসার বন্ধে আরও ভালোভাবে যাচাই করে দরকার মতো ব্যবস্থা নিলে এত বড় হামলার ঘটনা থামাতে পারতো। তবে সামাজিক মাধ্যমগুলো তা করেনি।
ফেসবুককে নিরাপদ একটি প্লাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কেটি হারবাথ সবচেয়ে বেশি দায়ী করেছেন, মার্ক জাকারবার্গকে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেয়া সাক্ষাৎকারে হারবাথ বলেন, “আমার মনে হয় না যে এগুলোকে তিনি মূল সমস্যা বলে মনে করেন বা তার এগুলো সমাধানের ইচ্ছা আছে। আমি তার নেতৃত্বে হতাশ, এবং আমি এই সত্যকে ঘৃণা করি যে আমি তার নেতৃত্বে হতাশ”।
বছর দশেক আগে কেটি হারবাথ ফেসবুকে যোগদান করেছিলেন। এর আগে তিনি ইউনিভার্সিটি অব উইন্সকনসিন থেকে সাংবাদিকতায় উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। তার জীবনের লক্ষ্য ছিলো সাংবাদিক হওয়া। তবে লেখাপড়া শেষ করে তিনি প্রথমে রিপাবলিকান পার্টির কম্যুনিকেশন বিভাগে চাকরি পেয়েছিলেন। যেখানে তার কাজ ছিলো ওয়েবসাইটে দলের জন্য প্রতিবেদন লেখাও বøগ লেখা। পরে তিনি পার্টির ডিজিটাল প্রচারণা বিভাগে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।
কয়েক বছর পর যখন হারবাথ ফেসবুকে যোগ দেন পাবলিক পলিসি বিভাগে যাদের কাজ ছিলো ফেসবুককে সুস্থ রাজনীতির বিকাশ ও রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত বিষয় দেখাশোনা করা। সেখানে তিনি পরিচালক পদে উন্নীত হন এবং তার অধীনে ৬০ জনের একটি কর্মী বাহিনী কাজ করতো। তারা বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের ডিজিটাল প্রচার বিভাগের কর্মীদেরও প্রশিক্ষণ দিয়েছেন যেন তারা ফেসবুককে সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করতে পারেন। তারা বেশকিছু দলকে ভালো রাজনৈতিকনীতি তৈরি বিষয়ক প্রশিক্ষণও দিয়েছেন। হারবাথ জানান, পুরো কোম্পানিজুড়ে একটি ধারণা ছিল যে ফেসবুকের বেশি ব্যবহার রাজনীতি ও সরকারকে আরও স্বচ্ছ করে তুলবে এবং জনসাধারণের সুস্থ রাজনৈতিক আলোচনায় জড়িত হওয়ায় ক্ষমতাকে প্রসারিত করবে।
হারবাথ বলেছেন, মেটা (ফেসবুক) দৈনন্দিন ব্যবসায়িক সংকট নিরসনে এতটাই ব্যস্ত যে এটিকে আরও কার্যকর ও স্বাস্থ্যকর প্লটফর্মে পরিণত করার পরিকল্পনাকে অবহেলা করা হচ্ছে।তিনি জানান, ২০২৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে হুমকি ঠেকানোর জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছিল, তার সেই প্রচেষ্টা বাতিল করা হয়েছে। হারবাথ বলেছেন, কেবল ফেসবুক নয়, অন্য সব সামাজিক মাধ্যমগুলোও যদি সংবাদ ও স্পন্সর করা রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডার মতো পার্থক্য গড়ে তুলতে না পারে তাহলে তারা গণতন্ত্রের ক্ষতি করে ফেলবে।
মিসেস থারবাথ এখন ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন যারা কোম্পানিগুলোর খারাপ সিদ্ধান্তের কারণে সৃষ্ট সম্ভাব্য সামাজিক ক্ষতি সনাক্তকরণএবং তা দূর করার জন্য কাজ করছে। ফেসবুক থেকে পদত্যাগকারি কর্মীরা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন। প্রতিষ্ঠানটি এখন সারাবিশ্বের আইনপ্রণেতা এবং থিঙ্কট্যাঙ্কদের এই সামাজিক মাধ্যম সংক্রান্ত বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে।
কেটি হারবাথের সমালোচনা ও পদত্যাগ প্রসঙ্গে মেটা (ফেসবুক) মুখপাত্র অ্যান্ডি স্টোন বলেছেন, “মিসেস হারবাথ এখন বিশ্বব্যাপী কোম্পানিগুলোকে নীতি বিষয়ক সাহায্য করেছেন। আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই এবং তার মঙ্গল কামনা করি।” স্টোন জানান, মেটা ২০২০ সালের নির্বাচনে ফেসবুককে নিরাপদ করতে প্রচুর পরিমাণে বিনিযোগ করেছে এবং যে বিষয়গুলিকে তিনি (হারবাথ) উদ্বেগের কারণ হিসাবে বর্ণনা করেছেন সেগুলি নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে হারবাথ বলেছেন, ফেসবুককে আরও নিরাপদ করার প্রস্তাবগুলো তার সাবেক বস জয় কাপলান বাতিল করে দিতেন। তিনি (কাপলান)অভ্যন্তরীন গবেষক এবং কর্মীদের তৈরি পরিবর্তনের প্রস্তাবগুলো বেশিরভাগ সময়ই গ্রহণ করেনি।
মিসেস হারবাথ বলেছেন যে, ফেসবুকের মাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার করা হচ্ছিল এটা তিনি প্রথম বুঝতে পারেন ২০১৬ সালে, যখন ফিলিপাইন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন এবং যুক্তরাজ্যে ব্রেক্সিট প্রচারণার সময় ছড়িয়ে পড়া ভুল তথ্যে ফেসবুক আচ্ছন্ন ছিলো। প্রথমে তার দায়িত্ব ছিলো ফেসবুককে সরকার ও জনগনের জন্য ইতিবাচক মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলা। পরে তাকে ফেসবুক থেকে অপরাধ প্রবণতা সংক্রান্ত পোস্টগুলি যাচাই দায়িত্ব দেয়া হয়।
সামাজিক মাধ্যমে রাজনীতি ও গণতন্ত্রের জন্য কতটা ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে এ প্রসঙ্গে হারবাথ বলেন, “আমি এখনও বিশ্বাস করি সোশ্যাল মিডিয়া রাজনীতিতে ক্ষতির চেয়েও বেশি ভালো কাজ করেছে, কিন্তু এখন তা ক্ষতির কাছাকাছি, হয়তো এটা ৫২-৪৮ শতাংশ পর্যায়ে এবং দিন দিন ক্ষতির পরিমান বাড়ছে।“
কেন আপনি ফেসবুক ছাড়লেন এই প্রশ্নের জবাব হারবাথ দিয়েছেন প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসের সাথে। তিনি বলেন, ” ফেসবুক ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল। আমার মনে হয়েছে যদি আমি ভেতর থেকে পরিবর্তন করতে না পারি তাহলে আমাকে এমন কোথাও যেতে হবে যেখানে আমি ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য আসলে কিছু করতে পারি।”
হারবাথ স্বীকার করেছেন সামাজিক মাধ্যমগুলো নিরাপদ করার ক্ষেত্রে প্লাটফর্মগুলো ভেতর থেকে ব্যবস্থা না নিলে তা থামানোর অন্য কোনো উপায় নেই। কিন্তু সেই জায়গাটাতেই ফেসবুক অবহেলা করছে। কিছুদিন আগে আরেক পদত্যাগকারী ফ্রান্সেস হাউগেন একইভাবে ফেসবুকের সমালোচনা করেছিলেন। এ কারণে সামাজিক মাধ্যমগুলো প্রতিদিন সমালোচনার মুখে পড়ছে। কিন্ত ভেতর থেকে সংশোধনের খবর খুব কমই আসছে।
গণমাধ্যমবোদ্ধারা বিশ্বাস করেন, মুক্ত ও নিরাপদ গণমাধ্যমের সাথে গণতন্ত্র ও টেকসই উন্নয়নের নিবিড় যোগসুত্র থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রযুক্তির উৎকর্ষতা নতুন প্রজন্ম ও আগামী দিনের গণতন্ত্রের জন্য কতটা হুমকি হয়ে আসছে? মেটা ভার্সের মাধ্যমে যখন পৃথিবী অন্য এক ডাইমেনশনে প্রবেশ করতে যাচ্ছে তখন কি ক্ষতির পরিধি বাড়বে না কমবে?
কাজী মেহেদী হাসান: পিএইচডি শিক্ষার্থী, মাস-কম্যুনিকেশন এন্ড মিডিয়া আটর্স, সাউদানর্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র।

You may also like

Leave a Comment

Muktochinta

Multochinta is a famous news media from New York. 

Subscribe my Newsletter for new blog posts, tips & new photos. Let's stay updated!

All Right Reserved. 2022 emuktochinta.com