মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন এক জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। শনিবার ফেসবুক পেজে শেয়ার করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের সকল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের নিবিড় কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে গত ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া দ্বি-পাক্ষিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে নতুন কর্মী নিয়োগের উপর চার বছর পূর্বে জারিকৃত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়।
পরবর্তীতে ২ জুন ২০২২ ঢাকায় অনুষ্ঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবার পর দুই দেশের সংশ্লিষ্ট অফিস সমুহে প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্কিং হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার স্থাপন পূর্বক আনুমানিক আগস্ট ২০২২ মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশি নতুন কর্মী নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়।
সর্বশেষ তথ্য মোতাবেক মালয়েশিয়ার মানব সম্পদ মন্ত্রনালয়ের অধীনস্ত লেবার ডিপার্টমেন্ট ৮,৭২৭ টি নিয়োগের ডিমান্ডের বিপরীতে ৩,৫৮,৮৯২ জন বাংলাদেশি নতুন কর্মী নিয়োগের অনুমোদন প্রদান করেছে এবং ইতোমধ্যে ১,৩৪,৫৯৫ জন নতুন কর্মী মালয়েশিয়ায় এসে পৌঁছেছে।
বাকী প্রায় ২,২৫,০০০ বাংলাদেশি কর্মীর আগমন প্রক্রিয়াধীন আছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে মালয়েশিয়ায় আনুমানিক মোট পাঁচ লাখ নতুন বাংলাদেশি কর্মীর কর্মসংস্থান হবে বলে বাংলাদেশ হাইকমিশন আশা করছে।
এদিকে, মালয়েশিয়ায় আসার পর কিছু বিদেশি কর্মী সঠিক কাজ পাচ্ছেনা বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া ও ব্যক্তিগত সোর্স থেকে জানা গেছে। তার মধ্যে কিছু বাংলাদেশি কর্মীও সমস্যায় পড়েছে বলে বাংলাদেশ হাইকমিশন অবহিত হয়েছে।
এ বিষয়ে, হাই কমিশন নিজস্ব উদ্যোগে এবং মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষের সহায়তায় তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহন করে সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নিয়েছে এবং কিছু সংখ্যক কর্মীদের কাজ প্রদানে নিয়োগকর্তাকে বাধ্য করতে সমর্থ হয়েছে, বাকী কর্মীদের নতুন নিয়োগকর্তার অধীনে নিয়োগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
মালয়েশিয়ায় বিদেশী কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়াটির বিষয়ে সর্বসাধারনের জ্ঞাতার্থে কিছুটা আলোকপাত করা প্রয়োজন বলে বাংলাদেশ হাইকমিশন মনে করে। মালয়েশিয়া সরকারের বিদেশি কর্মী নিয়োগের অনুমোদন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হলে একজন কর্মীও কর্মহীন হবার কথা নয়।
কারন, মালয়েশিয়ায় সারা দেশব্যাপী লেবার ডিপার্টমেন্টের শাখা-প্রশাখা রয়েছে। একমাত্র তারা যদি সঠিক যাচাই-বাছাই করে বিদেশি কর্মী নিয়োগের আবেদন অনুমোদন করেন তাহলেই বিদেশি কর্মীদের সঠিক চাকুরী, কর্ম পরিবেশ, আবাসন ও মজুরি নিশ্চিত হবে।
তাছাড়াও, মালয়েশিয়ার আইন অনুযায়ী দেশী-বিদেশী সকল কর্মীর আইনগত সকল অধিকার নিশ্চিতের দায়িত্ব লেবার ডিপার্টমেন্টের ওপর এবং সে লক্ষ্যে উক্ত প্রতিষ্ঠানকে সাংগঠনিক ও আইনগত ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। কোন দেশের দূতাবাসের পক্ষেই শতভাগ যাচাই-বাছাই করে কর্মী নিয়োগের ডিমান্ড সত্যায়ন করা সম্ভব নয়।
এক্ষেত্রে, দূতাবাসকে আবশ্যিকভাবে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের উপর নির্ভর করতে হবে। এটা বাংলাদেশসহ সকল সোর্সিং কান্ট্রির দূতাবাসের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
বাংলাদেশ দূতাবাস আনুমানিক ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সঠিক আছে কি-না সে সংক্রান্ত কাগজ-পত্র যাচাই বাছাই করে ডিমান্ড সত্যায়ন করে থাকে। বাকী আনুমানিক ৫ ভাগ ডিমান্ডের বিপরীতে দূতাবাস নিয়োগকর্তার অফিস/প্রজেক্ট সাইট ইত্যাদি ভিজিট করে সত্যায়ন করে থাকে। শতভাগ প্রজেক্ট /ফ্যাক্টরী তথা হাজার হাজার নিয়োগ প্রতিসঠান সরেজমিনে ভিজিট করা দূতাবাসের পক্ষে বাস্তবিকভাবেই অসম্ভব।
মালয়েশিয়ার লেবার ডিপার্টমেন্টের পক্ষেই একমাত্র সম্ভব। তাই, মালয়েশিয়ার লেবার ডিপার্টমেন্টের ছাড়পত্রের উপর আস্থা রেখে শ্রমিক প্রেরন করাটাই যুক্তিসংগত এবং অন্যান্য সকল শ্রমিক প্রেরনকারী দেশ এটাই করছে।
তাছাড়া, শতভাগ প্রজেক্ট দূতাবাস কর্তৃক ভিজিট করে ডিমান্ড সত্যায়ন করতে হলে কর্মী আগমনের গতি এতই ধীর হবে যে, যেটা কারও কাছেই গ্রহনযোগ্য হবেনা। অপরদিকে, প্রতিযোগী দেশসমুহ সেই সুযোগ গ্রহনের কারনে বাংলাদেশ তার যথাযথ সুফল থেকে বঞ্চিত হবে।
তবে, এক্ষেত্রে ডিমান্ড সংগ্রহকারী বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সীসমুহ তাদের মালয়েশিয়ার সহযোগী এজেন্সির মাধ্যমে নিয়োগকর্তার সঠিকতা এবং বিদেশী শ্রমিক নিয়োগের সক্ষমতা যথাযথভাবে যাচাই করার পর শ্রমিক প্রেরনের কার্যক্রম গ্রহন করলে শ্রমিকদের কর্মহীনতার ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ দূতাবাসকে কুটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে সতর্ক করেছে যাতে দূতাবাস কোন প্রজেক্ট সাইট/ কোম্পানী সরেজমিনে যাচাই করতে না যায়।
কূটনৈতিক পত্রে তারা জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার যে কোন কোম্পানী পরিদর্শনের একমাত্র এখতিয়ার মালয়েশিয়ার লেবার ডিপার্টমেন্টের। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময়ে অনুষ্টিত দ্বিপাক্ষিক সভায়ও বিষয়টি বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে এবং কর্মী নিয়োগের ডিমান্ডের যথার্থতা নিশ্চিতের দায়িত্ব মালয়েশিয়ার সরকারের বলে মালয়েশিয়ার মানব সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উচ্চতর প্রতিনিধি কর্তৃক বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনকে কোম্পানী ভিজিট থেকে বিরত থাকার জন্য পুনরায় বলা হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় আসার পর কাজ না পাওয়া কর্মীর সংখ্যা মোট আগত কর্মীর তুলনায় খুবই কম এবং এটি এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রনযোগ্য সীমার মধ্যে রয়েছে। শুধু বাংলাদেশী কর্মীদের ক্ষেত্রেই হচ্ছেনা- নেপাল, মিয়ানমার সহ অন্যান্য অনেক দেশের শ্রমিকও এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছে।
বাংলাদেশি কর্মীদের নতুন নিয়োগকর্তার অধীনে নিয়োগ প্রদানের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে যাতে এই পরিস্থিতির অবনতি না হয় সে বিষয়ে মালয়েশিয়ার সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে যাতে করে বৈধভাবে আগত একজন বাংলাদেশী কর্মীও মালয়েশিয়াতে বিড়ম্বনার শিকার না হয়।
এক্ষেত্রে, কর্মীদের স্বার্থ সংরক্ষনের লক্ষ্যে সকল প্রকার চ্যালেঞ্জকে বিবেচনায় রেখে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন শ্রমিক নিয়োগের ডিমান্ড সমুহের অনুমোদনের সত্যতা এবং নিয়োগকারীর সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কিছু কোম্পানী সরেজমিনে তদন্তের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ কার্যক্রম পরিচালনায় হাইকমিশনের অভ্যন্তরীন ব্যবস্থাপনায় কোন প্রকার শিথিলতাকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে না।
এই মহৎ কার্যক্রমে বাংলাদেশ হাইকমিশন সকল সচেতন মহল এবং সকল অংশীজনের যথাযথ দায়িত্ববোধ, পূর্ন আন্তরিকতা ও সহায়তা প্রত্যাশা করে হাইকমিশন।