Home 3rd Featured বিদায় আবদুল হামিদ, সোমবার শপথ নেবেন নতুন রাষ্ট্রপতি

বিদায় আবদুল হামিদ, সোমবার শপথ নেবেন নতুন রাষ্ট্রপতি

Mukto Chinta
০ comment ৬৩ views

বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে সোমবার শপথ নেবেন মো. সাহাবুদ্দিন। এদিন বেলা ১১টায় তাকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করার প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের উত্তরসূরি হচ্ছেন মো. সাহাবুদ্দিন। নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতির শপথ নেওয়ার পর আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হবে পরপর দুই মেয়াদে ১০ বছর শেষ করে ইতিহাস সৃষ্টিকারী মো. আবদুল হামিদকে। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু হবে তার বিদায় অনুষ্ঠান। এই প্রথম কোনো রাষ্ট্রপতিকে এত বড় আয়োজনে বিদায় দেওয়া হচ্ছে। ঐতিহাসিক এই সময়টিকে স্মরণীয় করে রাখতে বিদায়ি সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। নতুন রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত এবং বিদায়ি রাষ্ট্রপতিকে বিদায় জানাতে এখন প্রস্তুত বঙ্গভবন।

শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ১ হাজার ২৩৮ জনকে আমন্ত্রণপত্র দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতির শপথ অনুষ্ঠান বঙ্গভবনে হয়ে থাকে। রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, শপথ অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের আপন বিভাগের। অতিথিদের দাওয়াত দেওয়া থেকে শুরু করে প্রটোকলসংক্রান্ত সার্বিক দায়িত্ব দেখভাল করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বঙ্গভবনকেন্দ্রিক অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা ও আপ্যায়নের নেতৃত্ব দেয় আপন বিভাগ। রাষ্ট্রপতিকে শপথবাক্য পাঠ করান স্পিকার। প্রস্তুতির প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মহড়ার আয়োজন করে চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। শপথ গ্রহণের পরপরই কার্যভার গ্রহণসংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

জানা গেছে, নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শপথ নেওয়ার পর আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হবে মো. আবদুল হামিদকে। পরপর দুই মেয়াদে ১০ বছর শেষ করে ইতিহাস সৃষ্টি করে বঙ্গভবন ত্যাগ করছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালের ২০ মার্চ তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হন। একই বছর ১৮ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেন তিনি। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে পুনরায় নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। ২৪ এপ্রিল দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্ণ হবে তার।

এদিকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদায় অনুষ্ঠান ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রাজকীয় বিদায়ের জন্য প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ। বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল গ্রাউন্ডে বিদায়ি গার্ড অব অনার প্রদানের মধ্য দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে। ক্রেডেনশিয়াল গ্রাউন্ডে গার্ড অব অনার এবং প্রধান ফটকে স্যালুট গার্ড প্রদান করবে প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড রেজিমেন্ট। অন্যদিকে অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে সাবেক রাষ্ট্রপতিকে বহন করবে সুন্দর সাজানো গাড়ি। বঙ্গভবনের সব কর্মকর্তা দুই দলে ভাগ হয়ে গাড়ির সামনে দড়ি ধরে দাঁড়াবেন। তারপর গাড়ি সামনে অগ্রসর হবে। বঙ্গভবনে দীর্ঘ অবস্থানের সমাপ্তি শেষে আবদুল হামিদ বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর (এসএসএফ) তত্ত্বাবধানে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে একটি ভিভিআইপি মোটর শোভাযাত্রায় নিকুঞ্জ এলাকায় তার নতুন বাসভবনের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন।

আবদুল হামিদ এক সময় লালমাটিয়ার বাসায় থাকতেন। তবে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষে রাজধানীর নিকুঞ্জের বাসায় থাকবেন বলে জানা গেছে। ১২ মার্চ বঙ্গভবনের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মো. হামিদ জানান, ঢাকায় থাকলেও মাসে অন্তত ১০-১২ দিনের জন্য হলেও হাওড়ে যাবেন তিনি। আইনানুযায়ী অবসরে যাওয়ার পর সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসাবে আরও কিছু সুবিধাও পাবেন আবদুল হামিদ। তিনি একজন ব্যক্তিগত সহকারী ও একজন অ্যাটেনডেন্ট (সাহায্যকারী) পাবেন। দাপ্তরিক ব্যয়ও পাবেন। এই বার্ষিক ব্যয়ের অঙ্ক সরকার নির্ধারণ করবে।

একজন মন্ত্রীর প্রাপ্য চিকিৎসা সুবিধার সমপরিমাণ চিকিৎসা সুবিধাদি পাবেন সাবেক রাষ্ট্রপতি। সরকারি অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বিনামূল্যে সরকারি যানবাহন ব্যবহার, আবাসস্থলে একটি টেলিফোন সংযোগ পাবেন এবং সরকার নির্ধারিত সীমা পর্যন্ত বিল পরিশোধ থেকে অব্যাহতি দেবে। সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসাবে একটি কূটনৈতিক পাসপোর্টও পাবেন আবদুল হামিদ। তিনি দেশের ভেতর ভ্রমণকালে সরকারি সার্কিট হাউজ বা রেস্টহাউজে বিনা ভাড়ায় অবস্থান করতে পারবেন। আইনানুযায়ী চিকিৎসা সুবিধা, কূটনৈতিক পাসপোর্ট এবং দেশের ভেতরে সরকারি সার্কিট হাউজ বা রেস্টহাউজে বিনা ভাড়ায় অবস্থানের সুবিধা মো. আবদুল হামিদের স্ত্রীও পাবেন।

এদিকে, আলোচনার বাইরে থাকা মুক্তিযোদ্ধা ও মাঠপর্যায়ের রাজনীতিবিদ মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা শহরের শিবরামপুরের জুবিলী ট্যাংকপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাকনাম চুপ্পু। পিতা শরফুদ্দিন আনছারী, মাতা খায়রুন্নেসা। তার ছোটবেলা কেটেছে পাবনা শহরেই। শহরের পূর্বতন গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে রাধানগর মজুমদার একাডেমিতে ভর্তি হন চতুর্থ শ্রেণিতে। সেখান থেকে ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাশের পর পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হয়ে জড়িয়ে পড়েন ছাত্র রাজনীতিতে। এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাশ করে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহিদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি নেন।

মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ আহ্বানে ১৯৬৬ সালে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত অনেকবার বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য লাভ করেন তিনি। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের পদে থাকা মো. সাহাবুদ্দিন মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ছাত্রলীগের সক্রিয় কাজের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। ১৯৭২ সালে পাবনার নগরবাড়ী ঘাট জনসভা এবং পাবনা স্টেডিয়ামের জনসভায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বক্তব্য শুনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে বুকে জড়িয়ে আশীর্বাদ করেন এবং হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসেন।
মো. সাহাবুদ্দিন পাবনা জেলার আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সভাপতি এবং পাবনা জেলা বাকশালের যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসাবে মাঠপর্যায়ের রাজনীতিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ছেষট্টির ৬-দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠিত হলে তিনি পাবনা জেলা কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মনোনীত হন।

কর্মজীবনের শুরুর দিকে পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন সাহাবুদ্দিন। ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) পরীক্ষা দিয়ে বিচারক হিসাবে যোগ দেন। ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুইবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন তিনি। বিচারালয়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন শেষে জেলা ও দায়রা জজ হিসাবে ২০০৬ সালে অবসরে যান মো. সাহাবুদ্দিন। এর মধ্যে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান পদেও দায়িত্ব পালন করেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তখনকার বিচারক সাহাবুদ্দিন। বিচারক জীবনের ইতি টানার পর আবারও তিনি আইন পেশায় ফেরেন। ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী হিসাবে কাজ করার সময় সরকার তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব দেয়। ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন নবনির্বাচিত এ রাষ্ট্রপতি।

বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে সাংবাদিকতা পেশায়ও যুক্ত ছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন। বিচার বিভাগে যোগ দেওয়ার আগে ১৯৮০ থেকে দুই বছর দৈনিক বাংলার বাণীতে সাংবাদিকতা করেন। পাবনা প্রেস ক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির সদস্য ছিলেন তিনি। রাজনীতি, বঙ্গবন্ধু এবং নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন বিষয়ে তিনি নিয়মিত কলামও লিখতেন। ব্যক্তিগত জীবনে সাহাবুদ্দিন এক ছেলের বাবা। তার স্ত্রী রেবেকা সুলতানা যুগ্মসচিব ছিলেন। বর্তমানে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক অ্যাডভাইজারের পাশাপাশি ফ্রেন্ডস ফর চিলড্রেন অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

You may also like

Leave a Comment

Muktochinta

Multochinta is a famous news media from New York. 

Subscribe my Newsletter for new blog posts, tips & new photos. Let's stay updated!

All Right Reserved. 2022 emuktochinta.com