লন্ডনে বিএনপির অসুস্থ চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য ‘অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া।
ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ‘লন্ডনে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। এত অশালীন, কুরুচিপূর্ণ, দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর মতো দায়িত্বশীল জায়গা থেকে দিতে পারেন সেটা আমরা ভাবতে পারি না। তার বক্তব্যে প্রমাণ হয়েছে এদেশের মালিক একজন। এদেশে শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ নেই। বিচার বিভাগ তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি আইন আদালতের তোয়াক্কা করেন না। বেগম জিয়ার চিকিৎসার নিয়ে যে কথা তিনি বলেছেন তাতে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ফুটে উঠেছে। মঙ্গলবার বিকালে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
‘খালেদা জিয়ার ৮০ বছর বয়স হয়েছে, অসুস্থ তো হবেনই, সময় হয়ে গেছে এতো কান্নাকাটি করে লাভ নেই’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, কতটা অমানবিক হলে এ ধরনের কথা তিনি বলতে পারেন? খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে বিএনপির পরবর্তী সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা তো জোর করে তাকে বিদেশে নিয়ে যেতে পারি না। এখনকার চিকিৎসা যেভাবে হচ্ছে সেইভাবেই চালিয়ে যাবো।
বেগম জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে শর্ত দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো শর্ত সাপেক্ষে তিনি বিদেশে যাবেন না এটা পরিবার থেকে বলে দেওয়া হয়েছে। বেগম জিয়াকে হাসপাতালে রেখে কেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখেও বিএনপির কোনো নির্বাচন যাবে না। এটা একেবারেই পরিষ্কার কথা।
আমরা বিশ্বাস করি জনগণের আন্দোলনে সরকারের পতন হবে। তখন খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা পাবেন। এসময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে প্রতিহিংসা থেকে বিরত থেকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। এই জন্যই আমরা গণতন্ত্রের ভাষায় কথা বলি। আশা করি সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু প্রমুখ।
অন্যদিকে, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনি আর কোনো সুযোগ নেই। আইনি বিষয়টি এখন অতীত ও পুরোপুরি বন্ধ। এখন একমাত্র পথ হচ্ছে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া।
তিনি যদি দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চান, সেটা খালেদা জিয়া’র বিষয়, আমার নয়। খালেদা জিয়ার বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক নয়, এটি আইনি বিষয়। বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী। এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও আইনসচিব গোলাম সারোয়ার উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনটি করা হয় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। গত মঙ্গলবার মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, ‘আইনমন্ত্রী এক সময় বলেছিলেন দন্ড স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকতে দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের নেই। অথচ তার কিছুদিন পর খালেদা জিয়া বাসায় এসেছিলেন।’ আইনমন্ত্রী বলেন, ফখরুলের এই বক্তব্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কোথাও এমন কথা আমি বলিনি। তিনি বিএনপি মহাসচিবকে সত্য কথা বলার আহ্বান জানান। আইনমন্ত্রী এরপর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার আইনি কোনো সুযোগ আছে কি না- প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে ফেলেছেন। পুনরায় এ ক্ষমতা প্রয়োগের আর কোনো সুযোগ নেই। রাষ্ট্রপতির কাছে তিনি ক্ষমা চাইতে যাবেন কি না সে পরামর্শ আমি দিতে চাই না। তবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ছাড়া আর কোনো সুযোগ নেই। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হলে খালেদা জিয়াকে দোষ স্বীকার করে আবেদন করতে হবে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া সাংবিধানিক অধিকার। খালেদা জিয়া চাইলে ক্ষমা চেয়ে সাজা মওকুফ করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে পারেন। আ স ম আবদুর রব ও হাজি সেলিম দন্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পরও তাদের দুজনকে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে সরকার- এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, আ স ম আবদুর রবকে মুক্তি দেওয়া হয় সামরিক শাসন চলাকালে। তাকে ফৌজদারি কার্যবিধির ক্ষমতাবলে মুক্তি দেওয়া হয়নি। আর হাজি সেলিমের দন্ডাদেশ বহাল থাকার পর তিনি আপিল করেন। আপিল করার পর হাইকোর্ট বিভাগ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে। তিনি ওই সময়ের আগেই দেশে চলে আসেন। আইনমন্ত্রী আরও বলেন, খালেদা জিয়ার ব্যাপারে আইনে কোথাও বলা নেই বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার। তাকে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়। তাতে বলা আছে, বিদেশে যেতে পারবেন না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক নয়, এটি আইনি বিষয়। তিনি বলেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি। তার বিদেশে যাওয়ার সময় কোনো শর্ত ছিল না। তাকে অনুমতি নিতে হয়নি।
খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অশালীন বক্তব্যের নিন্দা ফখরুলের
মুক্তি পেতে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে বললেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক
৩৫