Home Featured পিটার হাস : প্রিয়-অপ্রিয় এক রাষ্ট্রদূত

পিটার হাস : প্রিয়-অপ্রিয় এক রাষ্ট্রদূত

Mukto Chinta
০ comment ১১২ views

আলমগীর হোসেন, ঢাকা : লাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস এই মুহুর্তে সর্বমহলে ব্যাপক পরিচিত একটি নাম। সাধারণত তাকে সবাই হাস নামেই চিনে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে রাজনীতি সচেতন এমন কোনো মানুষ নেই যিনি পিটার হাসের নাম শুনেননি। সামনা-সামনি না দেখলেও পত্রিকায় তার ছবি বা টিভিতে কথা শুনেছেন। মানবাধিকার এবং বাক স্বাধীনতা নিয়ে তার অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশের মানুষের বিশাল একটি অংশ তাকে ভালোবাসে। সরকারবিরোধী মানুষের কাছে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়ও। তারা তাকে দারুন পছন্দ করে এবং ভালোবাসে । তবে সরকার সমর্থকদের কাছে বিষয়টা একেবারেই উল্টো। সরকারের একাধিক মন্ত্রী সরাসরি তার সমালোচনাও করেছেন বহুবার। সবকিছু মিলিয়ে পিটার হাস বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রিয় এবং অপ্রিয় দুটোই। যদিও কোনো দলের পক্ষে বা বিপক্ষে তার তার দেশের যে কোনো অবস্থান নেই সেটা বারবার পরিস্কার করেছেন তিনি।

‘পিটার ডি হাস’ এই মুহুর্তে বাংলাদেশে অতি পরিচিত নাম। যারা নিজের ভোট নিজে দিতে চায়, দিনের ভোট দিনেই দিতে চায়, বাকস্বাধীনতার পক্ষে থাকতে চায়, নির্ভাবনায় নিজের মতামত তুলে ধরতে চায়, সর্বোপরি মুক্ত গনতন্ত্রের চর্চা করতে চায় তাদের কাছে তিনি এখন দেবদূতের মতো আবির্ভাব হয়েছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কর্মব্যস্ত এই মানুষটি প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের কাছে বলতে চেষ্টা করছেন যে, একটি অবাধ নির্বাচনই কেবল উন্নত রাষ্ট্রের নিশ্চয়তা দিতে পারে, গনতন্ত্রক সুসংহত করতে পারে।

বাংলাদেশে নিয়োগ পাবার পরেই রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের কাছে পরিচয়পত্র হস্তান্তর করেন।

ঢাকায় নিযুক্ত বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ১৭তম রাষ্ট্রদূত তিনি। মৃদুভাষী কিন্তু করিৎকর্মা এই রাষ্ট্রদূত তার রাষ্ট্রের পক্ষে পরিস্কার ভাষায় কথা বলতে পছন্দ করেন। মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে তার বক্তব্য খুবই স্পষ্ট।

রাষ্ট্রপতি ভবণে পরিচয়পত্র দেয়ার পরে ফটোশেসন।

২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাষ্ট্রদূত হিসেবে বাংলাদেশে তার মনোনয়ন নিশ্চিত করা হয়। সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ২০২২ সালের ১৫ মার্চ তিনি বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদের কাছে তার পরিচয়পত্র তুলে দেন। যে সময় তিনি রাষ্ট্রদূত্রের দায়িত্ব নেন, সেই সময়টি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নানা কারণে অনেকটা শীতল। কারণ তার যোগদানের আগেই ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ক্রসফায়ার ও গুমের অভিযোগে কয়েকজন র‌্যাব কর্মকর্তার উপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়। র‌্যাব বাংলাদেশের এলিট ফোর্স হিসেবে পরিচিত। বিশ্বের প্রায় সব মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দীর্ঘদিনের অভিযোগ ‘র‌্যাব বাংলাদেশের ভিন্নমতের মানুষকে বিনা বিচারে গুলি করে হত্যা ও গুমের সাথে জড়িত।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা বলছেন পিটার হাস।

এসব বিষয় নিয়েই পিটার ডি হাসের পূর্বসূরী রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা, মার্শা বার্নিকাট ও পিটার মিলার অনেকটা অপদস্ত হয়েই বিদায় নেন বাংলাদেশ থেকে। ড্যান মজিনা সারাদেশ ঘুরে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলতে পছন্দ করতেন। সে কারণে তিনি খুবই আলোচিত ছিলেন। মার্শা বার্নিকাটের বিরুদ্ধে সরকারী দল সোচ্চার ছিলো এবং সরকারের পক্ষ থেকে নানাভাবে নিগৃহীত করা হয়। তার গাড়িতেও হামলা করে সরকার সমর্থক যুবলীগ কর্মিরা। পিটার মিলারের বিদায়ও সুখকর হয়নি। কারো কারো সাথে প্রধানমন্ত্রী বিদায়কালে দেখা দিতেও রাজী হননি।

স্ত্রীর সাথে পিটার হাস।

পিটার হাস যখন নিয়োগপ্রাপ্ত হন, সে সময় তাকে নিয়ে রাজনৈতিক মহলে উৎসুক্যের সৃষ্টি হয় নানা কারণে। কারণ তার আগের রাষ্ট্রদূতদের অভিজ্ঞতা সুখকর ছিলো না। যদিও তারা সেটা প্রকাশ্যে কখনো স্বাীকার করেননি। তবে এই পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন কঠিন হলেও পিটার হাস একজন অভিজ্ঞ ক‚টনীতিক হওয়ার কারণে অল্প সময়েই মধ্যেই তিনি মানুষের মনের ভাষা বুঝতে সক্ষম হন। তিনি আগামী নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার ব্যাপারে তার আগ্রহের কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি মানবাধিকার রক্ষা এবং বাকস্বাধীনতা নিয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলতে শুরু করেন। এসব কথা তিনি যখন বলতে শুরু করেন, সেই মুহুর্তে বাংলাদেশের অন্যতম বিরোধী দল সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারতো না, সমাবেশও করলেও বাধা দেয়া হতো।

পররাষ্ট্র বিটের সাংবাদিকদের সাথে একটি অনুষ্ঠানে।

 

তবে পিটার হাস স্বাধীনভাবে অহিংস রাজনীতির পক্ষে কথা বলতে শুরু করলে বিরোধী নেতা-কর্মিদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হতে শুরু করেন। এখন তিনি এরই ধরাবাহিকতায় বিরোধীমতের মানুষের কাছে একজন প্রিয় মানুষে পরিনত হয়েছেন। তবে সরকারপক্ষ তার বিরুদ্ধে শুরু করে নানা সমালোচনা। দেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সরকারদলীয় এমপি কারো সমালোচনা থেকে তিনি বাঁচতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় অভিযোগ তুলে বলেছিলেন, ‘ মার্কিন দূতাবাস স্বাধীনতা বিরোধীদের আশ্রয়স্থল।’

তরুণদের মাথে একটি বিশেষ মুহুর্তে পিটার হাস।

পিটার হাস বাংলাদেশে গুম হওয়া মানুষদের আত্মীয়দের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ এর ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে কথা বলতে মহাখালীর একটি বাড়িতে গেলে সরকার সমর্থকরা ক্ষিপ্ত হয়। এমনকি তার গাড়িতেও হামলা করার চেষ্টা করে। পরে অবশ্য পিটার হাসের নিরাপত্তা রক্ষীদেরও প্রত্যাহার করে নেয় সরকার।

আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল পিটার হাসের সাথে দূতাবাসে দেখা করেন।

পিটার হাস এ নিয়ে পরররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সাথে একাধিকবার দেখা করেও তার নিরাপত্তা ফিরে পাবার কোনো আশ্বাস পাননি। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকেও হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ করা হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু তারপরও হাসের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি। উপরন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ তারা আমাদের উপরে স্যাংশন দিয়ে আবার নিরাপত্তা চায় কেনো?’

বিএনপি প্রতিনিধি দল পিটার হাসের সাথে দূতাবাসে দেখা করেন।

পিটার ডি হাসের জন্য বাংলাদেশের অগুনতি মানুষের ভালোবাসা রয়েছে, গনতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, সুষ্ঠু ভোটের নিশ্চয়তাসহ গুম-খুন বন্ধ করার পক্ষে কথা বলার জন্য। পিটার হাস একাধিকবার বলেছেন, তার দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং তিনি নিজেও কোনো দলের পক্ষে বা তাদেরকে ক্ষমতায় আনার জন্য কোনো ভ‚মিকা রাখছে না। এসব কারণে তিনি লাখো-কোটি বাংলাদেশীর কাছে একজন প্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিনত হয়েছেন। সরকার এবং সরকার সমর্থক মানুষের কাছে তিনি সমভাবেই অপ্রিয় এসব কথা বলার জন্য।

একটি অনুষ্ঠানে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে কথা বলছেন পিটার হাস।

তবে তৃতীয় একটি পক্ষ মনে করে, বাংলাদেশে একটি অবাধ নির্বাচনে যদি যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান থেকে সরে যায় কিংবা পিটার হাস কথা বলা বন্ধ করে দেয় তাহলে বুঝতে হবে তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে আসলেই পিটার হাস বাংলাদেশে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন, বাক স্বাধীনতা রক্ষা এবং গুম, খুন বন্ধের জন্যই এত উদ্বিগ্ন কিনা সেটা দেখার জন্য আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।

 

 

 

You may also like

Leave a Comment

Muktochinta

Multochinta is a famous news media from New York. 

Subscribe my Newsletter for new blog posts, tips & new photos. Let's stay updated!

All Right Reserved. 2022 emuktochinta.com