Home Featured বিশ্ব দুইভাগে বিভক্ত : পারমানবিক বোমা প্রস্তুত

বিশ্ব দুইভাগে বিভক্ত : পারমানবিক বোমা প্রস্তুত

Mukto Chinta
০ comment ৩০০ views

শামস সুমন : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কেন্দ্র করে সারাবিশ্ব এখন স্পষ্টতই দুইভাগে বিভক্ত। রাশিয়া এবং পশ্চিমা বিশ্ব এখন প্রকৃত মিত্রের খোঁজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কোন দেশ কার পক্ষে আর কে বিপক্ষে তা নিয়েও চলছে বিশ্লেষন। কিন্তু এরই মধ্যে বিশ্ববাসী পারমানবিক যুদ্ধের গন্ধ খুঁজে পাচ্ছে। কারণ সারাবিশ্বে যে পরিমান নিউক্লিয়ার ওয়েপন বা পারমানবিক বোমা মজুদ রয়েছে সেগুলোর সক্রিয়তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ৬ হাজার ২৫৭ টি পারমানবিক বোমা রয়েছে। তার মধ্যে সক্রিয়ভাবে ১ হাজার ৪৫৮ টি বোমা প্রস্তত রয়েছে, ৩ হাজার ৩৯টি বোমা সক্রিয় থাকলেও সেগুলো প্রস্তত নয়। আর ১ হাজার ৭৬০ টি বোমার কার্যকারিতা নেই বললেই চলে। এগুলো বহু বছর ব্যবহার না হবার কারণে নিজস্ব ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মোট পারমানবিক বোমার সংখ্যা ৫ হাজার ৫৫০ টি। এই সংখ্যা রাশিয়ার চেয়ে ৭০৭ টি কম। একইভাবে , ১ হাজার ৩৮৯ টি বোমা সক্রিয় থাকলেও সেগুলো প্রস্তত নয়। এই সংখ্যাও রাশিয়ার চেয়ে ৬৯ টি কম। অন্যদিকে ১ হাজার ৮০০ টি বোমার কার্যকারিতা নেই বললেই চলে। এই সংখ্যা আবার রাশিয়ার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ টি বেশি। এগুলোও বহ বছর ব্যবহার না করার কারণে কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া ছাড়াও চীনের হাতে আছে ৩৫০ টি পারমানবিক বোমা। চীন এখনও পারমানবিক বোমার সম্প্রসারণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অনান্য দেশের মধ্যে ফ্রান্সের ২৯০ টি, যুক্তরাজ্যের ২২৫ টি, পাকিস্তানের ১৬৫ টি, ভারতের ১৫৬ টি, ইসরাইলের কাছে ৯০ টি এবং উত্তর কোরিয়ার কাছে অজ্ঞাত সংখ্যক নিউক্লিয়ার ওয়েপন বা পারমানবিক বোমা রয়েছে। তবে উত্তর কোরিয়ার কাছে ৪০ থেকে ৫০ টি বোমা আছে বলে ধারণা করা হয়।
এই পরিসংখ্যানে বুঝা যায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র শক্তিগুলোর চেয়ে রাশিয়া সমর্থিত রাষ্ট্রগুলোর কাছেই এই মারনাস্ত্র সবচেয়ে বেশি পরিমানে রয়েছে। তবে অনেক দেশ গোপনে এই বোমার উন্নতিকরণ এবং সম্প্রসারণ চালিয়ে যাচ্ছে। সারাবিশ্বে এখনও ১৩ হাজারেও বেশি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড মজুদ আছে যুদ্ধের জন্য। আর সারাবিশ্বে যে পরিমান পারমানবিক বোমা মজুদ আঝে তার ৯০ ভাগই যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার কাছে। আর দুটি দেশই হচ্ছে একে অপরের চরম শত্রæ।
তাছাড়াও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ও সীমান্ত সমস্যার কারণে বিভিন্ন দেশের সাথে একে অপরের রয়েছে বিরোধ। ফলে কখন কে আক্রমনের শিকার হয় সেই ভয় থেকেও মাঝে মধ্যেই কোনো কোনো দেশের বিরুদ্ধে পারমানবিক বোমা বানানোর অভিযোগের কথা শোনা যায়। আর তাই জনসমক্ষে প্রকাশিত তথ্যই সঠিক হিসেব বলে মেনে নেবারও কোনো সুযোগ নেই। কারণ ফেডারেশন অব আমেরিকান সাইস্টিস্টের মতে, রাশিয়ার হাতে যে যেসব অস্ত্র আছে তার বেশিরভাগই কৌশলগত পারমানবিক অস্ত্র। এগুলো রকেট ধরনের ব্যালাস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র। এসব অস্ত্র বহু দূর থেকেও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। তাদের হাতে এমন অনেক পারমানবিক অস্ত্র রয়েছে যেগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে স্বল্প দূরত্বে বা যুদ্ধ জাহাজের জন্য ব্যবহার করার জন্য। রাশিয়ার পারমানবিক অস্ত্রগুলো সামরিক ঘাঁটিতে মোতায়েন করা রয়েছে বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

যদিও বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তিগুলো ১৯৬৮ সালের ১ জুলাই নন প্রলিফেরেশন ট্রিটি বা পারমানবিক বোমার অসম্প্রসারণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তিটি এনপিটি নামে বহুল পরিচিত। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীনসহ অনেকগুলো দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও বেশি পারমানবিক অস্ত্রের মালিকরাই সব সময়ই একে অপরকে অবিশ্বাসের চোখে দেখে। এই অবিশ্বাস থেকেই বছরের পর বছর ধরে তারা নিউক্লিয়ার ওয়ারহেডগুলো পাহাড়া দিয়ে রাখছে নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে।
আর সে কারণেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এই ক্রান্তিকালে বিশ্বের পারমানবিক অস্ত্রের মালিক দেশগুলো ওয়ারহেডের রেড বাটন হাতের মুঠোয় নিয়ে বসে আছে। সন্দেহ আর অবিশ্বাস থেকেই যে বিশ্বে শুরু হতে পারে নতুন আরেক পারমানবিক যুদ্ধ সেটা নিয়ে এখন আর সন্দেহের সুযোগ কম।


রাশিয়া কর্তৃক আক্রান্ত দেশ ইউক্রেনের হাতে এখন কোনো নিউক্লিয়ার ওয়েপন না থাকলেও এক সময় তার দেশেই ছিলো পাঁচ হাজারেরও বেশি নিউক্লিয়ার ওয়েপন। নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির আওতায় সেগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয় অথবা প্রস্তত বন্ধ করে দেয়া হয় অনেক আগেই। এক সময় ইউক্রেনেই ছিলো সবচেয়ে বেশি অস্ত্র তৈরির কারখানা। কিন্তু ইউক্রেনের সেইদিন অতীত। যে কারণে রাশিয়া সহজেই তাকে আক্রমন করতে সাহস করেছে।


এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সারা পৃথিবী এখন দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নের্তৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো দেখতে চাচ্ছে তাদের প্রকৃত বন্ধু রাষ্ট্র কারা ? সেটা তারা কুটনৈতিকভাবে বুঝার চেষ্টা করলেও রাশিয়া সরাসরি তার শত্র দশেরে তালিকা প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে জাতিসংঘের আনীত যুদ্ধের নিন্দা প্রস্তাবের পেক্ষ ভোট না দিয়ে যারা নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেছে তারা মূলত পশ্চিমা বিশ্বের নীতির বিরুদ্ধেবই তাদের মত দিয়েছে। ভোট না দেয়ার মানেই হচ্ছে ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্বের নীতির বাইরে থাকা। অন্তত ৩৫ টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিলো। যার মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানও রয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়া যাদেরকে শত্রু রাষ্ট্র বলে আখ্যায়িত করেছে  , সেই সব দেশের তালিকায় রয়েছে, আলবেনিয়া, অ্যান্ডোরা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো, আইসল্যান্ড, কানাডা, লিশটেনস্টাইন, মাইক্রোনেশিয়া,  মোনাকো, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া, সান মারিনো, উত্তর মেসিডোনিয়া, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান, ইউক্রেন, মন্টেনেগ্রো, সুইজারল্যান্ড ও জাপান। এ ছাড়া ব্রিটিশশাসিত জার্সি দ্বীপপুঞ্জ, অ্যাঙ্গোলা, ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, জিব্রালটার এলাকাও রয়েছে শত্রু দেশের তালিকায়।
জাতিসংঘ উত্থাপিত নিন্দা প্রস্তাবের বিপক্ষে যারা ভোট দিয়েছে সেই দেশগুলো হলো বেলারুল, সিরিয়া, ইরিত্রিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং রাশিয়া নিজে। ইউক্রেনের পক্ষে ভোট না দেয়ায় লিথুনিয়া বাংলাদেশে টিকা দিবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে যুদ্ধকালীন সময়ে রাশিয়ার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার অভিযোগ এনে ভারতের বিরুদ্ধেও বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এভাবেই একটি যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সারাবিশ্ব এখন দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।

 

You may also like

Leave a Comment

Muktochinta

Multochinta is a famous news media from New York. 

Subscribe my Newsletter for new blog posts, tips & new photos. Let's stay updated!

All Right Reserved. 2022 emuktochinta.com