বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনের দর্শকদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে এখনও জনপ্রিয় অভিনেতা বা অভিনেত্রীদের টানেই নাটক দেখতে আসেন বলে মন্তব্য করেছেন আরণ্যক নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতা, নাট্যনির্দেশক মামুনুর রশীদ।
দর্শককে নাটকের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ভাবনায় নাট্যচর্চা ও নাট্যভাবনা দর্শকের কাছে পৌঁছাচ্ছে কি না তা নিয়ে বিস্তর ভাবনার অবকাশ রয়েছে। অতিরিক্ত কোরিওগ্রাফি ও গানে ভরপুর বহু মঞ্চনাটক মানের দিক থেকে নিচু ও অশ্লীল বলেও মনে করেন তিনি।
শনিবার (৮ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে থিয়েটার ফ্যাক্টরি আয়োজিত ‘সাম্প্রতিক থিয়েটার : নতুন দর্শক সৃষ্টির উপায়’ শিরোনামে মুক্ত আলোচনায় নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ এসব কথা বলেন।
আরণ্যক নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতা, নাট্যজন মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে মুক্ত আলোচনায় যুক্ত হন নাট্যনির্দেশক আজাদ আবুল কালাম, সুদীপ চক্রবর্তী, কামাল বায়জীদ, ইউসুফ হাসান অর্ক, কাজী রোকসানা রুমা, মুক্তনীল, মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, রেজা আরিফ, সাইফ সুমন, সামিনা লুৎফা নিত্রা।
আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফুল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহীন সামাদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। মুক্ত আলোচনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন থিয়েটার ফ্যাক্টরির অলোক বসু।
মামুনুর রশীদ বলেন, দর্শক বাড়ছে না নাটকের, তারা গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ। টকশো করে, লেখালেখি করে, আবেদন-নিবেদন করেও লাভ হচ্ছে না। তারা এখন হলিডে অডিয়েন্স হয়ে গেছেন। আরণ্যকের ‘’রাঢ়াঙ’ নাটকের শোতে চঞ্চল চৌধুরী থাকলে হল উপচে পড়ে দর্শকে। শুধু এখানে নয়, কলকাতায় নাটক দেখতে গিয়ে দেখলাম, সেখানেও দর্শক স্টার ওরিয়েন্টেড। যেসব নাটকে দেবশঙ্কর আর গৌতম হালদার অভিনয় করছে, তখন শো হাউসফুল।
তিনি বলেন, নাটকের পারফেক্ট ফরম নেই, কোন নাটক কোন দর্শকের ভালো লাগবে তা বলা মুশকিল। তবে সাম্প্রতিক নাট্যচর্চা, এর বিষয়ভাবনা উপস্থিত দর্শকের কাছে কতটুকু পৌঁছাল কি পৌঁছাল না, সে নিয়ে ভাবনার অবকাশ রয়েছে।
অতিরিক্ত কোরিওগ্রাফি ও নাটকে ভরপুর বহু নাটকে দর্শককে ঠকানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মামুনুর রশীদ।
মামুনুর রশীদ বলেন, কিছু নাটক ভালো লাগে অতি কোরিওগ্রাফি ও গানের জন্য। শত শত রজনি মঞ্চস্থ হয়েছে, এমন নাটকও রয়েছে যার মান শুধু নিচু না একই সঙ্গে অশ্লীলও।
অভিনেতা ও নির্দেশক হিসেবে দর্শকের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে তিনি বলেন, ‘দর্শক নাটকের অবিচ্ছেদ্য অংশ। লাইট, সাউন্ড, সেট সবকিছুর পর দর্শকের সঙ্গে অভিনেতাদের যে মিথস্ক্রিয়া তাতেই গড়ে ওঠে একেকটি নাটক। দর্শক নাটকের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতি রাতে আমরা যখন মঞ্চে অভিনয় করতে যাই, তখন আমাদের সামনে থাকে রহস্যময় দর্শক। কোনো দর্শক যদি অভিনয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তবে বলতে হয় সেই দর্শকের নাটক নিয়ে ন্যূনতম ধারণা রয়েছে, তিনি মানসম্মত দর্শক।’