আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপি মহাসচিবসহ ২৩ কেন্দ্রীয় নেতাকে গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্র নাম না প্রকাশ করার স্বার্থে গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এছাড়া ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বাধীন তরুণ গ্রুপকে নিয়েও অস্বস্তিতে আছে সরকার। এ পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে এই গ্রুপের অন্তত দুই হাজার নেতাকর্মীর গতিবিধি গোয়েন্দা নজরদারিতে আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে- নজরদারিতে থাকা ২৩ কেন্দ্রীয় নেতার মধ্যে রয়েছেন- মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এজেডএম জাহিদ হোসেন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নিতাই রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাখাওয়াত হাসান, অনিন্দ ইসলাম, ড. মঈন খান, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম আজাদ, আব্দুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, শামছুর রহমান, শিমুল বিশ্বাস, মিজানুর রহমান মিনু, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু প্রমুখ। এছাড়া এই তালিকায় আছেন সাবেক-বর্তমান প্রায় ৩৫০ জনপ্রতিনিধি।
সূত্র জানায়, যাদের গোয়েন্দা নজরদারিতে আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তারা ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত সময়ে তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। ওই সময়ে তারেক রহমান সারা দেশে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নয়টি মতবিনিময় সভা করেছেন। সভায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিএনপির চলমান অন্দোলনে নেতাকর্মীদের হত্যা, তারেক রহমানসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, সরকার পতনের একদফা আন্দোলন জোরদার প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা হয়।
এসব সভায় যেসব প্রস্তাব উঠে আসে সেগুলোর একটি সারমর্ম তৈরি করেছে সরকারের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা। সংস্থাটি প্রায় ৩০টি প্রস্তাবকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যতীত নির্বাচনে না যাওয়া, তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও হয়রানি বন্ধে কেন্দ্রীয় নেতাদের সহযোগিতা না করার অভিযোগ, যেসব নেতা সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে সুবিধা ভোগ করছেন তাদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সভা-সমাবেশ করে নেতাকর্মীদের চাঙা রাখা, স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া প্রভৃতি।
আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় আলোচিত আরও যেসব বিষয়কে সরকার আমলে নিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলের কোনো সিদ্ধান্ত যেন দলকে প্রভাবিত করতে না পারে, প্রতিটি ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ের মেম্বারদের সঙ্গে মতবিনিময় করা, সরকার পতনের একদফা আন্দোলনকে সার্থক করতে রোডম্যাপ তৈরি করা, ১০ দফা এবং ২৭ রূপরেখা ব্যাপকভাবে প্রচার করা, ফেসবুককেন্দ্রিক নেতাদের শনাক্তের জন্য মনিটরিং সেল গঠন করা, আন্দোলনের জন্য সাবেক ছাত্র নেতাদের সক্রিয় করা, যারা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে তারা যেন দলীয় নমিনেশন পায়, আন্দোলন করতে গিয়ে যারা মামলা-হামলার শিকার হন তাদের সহযোগিতা করতে বিশেষ সেল গঠন. দলের ভেতর ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি কার্যকর করা, যারা এলাকায় না থাকে তাদের স্থানীয় কোনো কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ না দেওয়া এবং সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দলে সম্পৃক্ত করার ব্যবস্থা করা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গোয়েন্দাদের সুপারিশের মধ্যে রয়েছে তারেক রহমানের নেতৃত্বে থাকা তরুণ গ্রুপের নেতাদের গতিবিধি ও কার্যক্রম নিবিড় গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা দরকার। তারেক রহমান যেন ইন্টারনেট ও বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের সহিংস কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে না পারে, সেজন্য সাইবার প্যাট্রোলিং কার্যক্রম আরও জোরদার করা উচিত।
তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা আগামী দিনে সরকারবিরোধী কী ধরনের কর্মসূচি পালন করতে পারে, সে ব্যাপারে অগ্রিম তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এর পাশাপাশি নজরদারি বাড়িয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে আরও সক্রিয় করতে হবে। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসনকে আরও কৌশলী হতে হবে।