দেশে দেড় বছর ধরে ডলারের সঙ্কট চলছে। বর্তমানে ডলারের সে সঙ্কট চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ১৮ বিলিয়ন ডলারের নীচে নেমে এসেছে। গত দেড় বছরে ডলার সঙ্কটে বার বার টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। এর প্রভাবে দেশে খাদ্য, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ঘন ঘন বৃদ্ধি পাওয়ায় শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ছোট ছোট ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে এবং কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এমনকি কোনো উৎস থেকে ডলার আশা করার সুযোগও নেই। বিদেশি ঋণের ছাড়, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই, রফতানি কিংবা প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) কোনো উৎস থেকেই নেই সুখবর। ডলারের সব উৎসে চলছে ভাটা।
প্রবাস থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানো কমে গেছে বহুগুনে। ডলারের দাম আগামী এক মাসে দ্বিগুণ হতে পারে বলে অনেকেই প্রবাস থেকে টাকা পাঠানো বন্ধ রেখেছে।
অন্যদিকে বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হচ্ছে আগের চেয়ে ঢের। এ ঋণে সুদের হারও এখন বেশি। একে তো ডলার আসছে কম, আবার পরিশোধ করতে হচ্ছে বেশি। এ দ্বিমুখী পরিস্থিতি রিজার্ভ সঙ্কটের চাপকে আরো অসহনীয় করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক নিয়মে আইএমএফ’র হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, সবশেষ ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলার। অবশ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন গতকাল বলেছেন, ব্যালান্স অব পেমেন্টে বা লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি তৈরি হওয়ায় রিজার্ভ হ্রাস পাচ্ছে। তার মতে, এখন বৈদেশিক মুদ্রার নিট মজুদ কমে ১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে যেসব সমস্যার মুখে পড়েছে, এর মূলে রয়েছে মার্কিন ডলারের সঙ্কট। নীতিনির্ধারকরা মনে করেছিলেন, ডলারের সঙ্কট এবং এর দাম বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা সাময়িক। তারা দীর্ঘদিন ধরে বলছেন, অচিরেই এর সমাধান হবে। কিন্তু সেই ‘অচিরেই’ আর আসছে না। ডলার সঙ্কট ও দর বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন, বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এর ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। জিনিসপত্রের বাড়তি ব্যয় মেটাতে মানুষের কষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতি অর্থনীতিকে বিপদে ফেলছে। এর মধ্যে গত রোববার আরো উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে বড় ধরনের ধস নেমেছে। এ মাসে বৈধ পথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশের প্রবাসী আয়ের এ অঙ্ক গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এর চেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছিল ১০৯ কোটি ডলার, যা বৈদেশিক মুদ্রা কমতে থাকা রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, দেশে এখন ডলারের তীব্র সঙ্কট চলছে। অনেকেই রাজনৈতিক উত্তেজনার আশঙ্কায় ডলার জমিয়ে রাখছে। তিনি বলেন, নানা কারণে প্রবাস থেকে রেমিট্যান্স আসাও কমে গেছে। তার আশঙ্কা নভেম্বরে প্রতি ডলার ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মাঝে কয়েক বছর বিশ্ববাজারে ঋণের সুদহার অনেক কমেছিল। ওই সময়ে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ অনেক বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। এর সঙ্গে প্রতি বছরই রফতানি ও রেমিট্যান্সেও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেক বেড়ে ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়ায়। রিজার্ভ বাড়তে থাকায় তখন এতটাই আত্মতুষ্টি দেখা দেয়, রিজার্ভ থেকে শ্রীলঙ্কাকে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়া হয়। মালদ্বীপকে ২০০ মিলিয়ন ঋণের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এমনকি রিজার্ভ থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঋণ ও উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়। ২০২১ সালের শেষ দিকে অর্থনীতিতে করোনা-পরবর্তী বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। তখন আমদানির চাহিদা বাড়ে। অন্যদিকে, রেমিট্যান্স কমে যায়। এর প্রভাবে কমতে থাকে রিজার্ভ। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অর্থনীতিতে নতুন সঙ্কট সৃষ্টি করে। সঙ্কট কাটাতে কঠিন শর্তে আইএমএফের ঋণ নিতে হয় সরকারকে। প্রথম কিস্তি পেলেও এখন নানাবিধ শর্ত পূরণ করতে না পারায় আইএমএফ’র দ্বিতীয় কিস্তির অর্থছাড় নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল গত জুনে প্রকৃত (নিট) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকতে হবে ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার। শর্ত অনুযায়ী সেই পরিমাণ রিজার্ভ রাখতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফ’র প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক এ সময় রিজার্ভের শর্ত পূরণে ব্যর্থতার কথা জানান। তিনি বলেন, আইএমএফ ঋণ অনুমোদনের সময় আমাদের কিছু শর্ত দিয়েছিল। এর মধ্যে রিজার্ভ কিছু কম আছে। রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে।
তবে অনেক কিছু বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
ডলারের দর কৃত্রিমভাবে অনেক দিন ৮৪ থেকে ৮৬ টাকার মধ্যে ধরে রেখেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে দেড় বছর আগে সঙ্কট শুরুর পর দর বেড়ে যাওয়ার চাপ তৈরি হয়। এর পরও বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে হস্তক্ষেপ করে দর কমিয়ে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। এতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়। আবার বাজারে প্রচুর ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত দুই বছরে ২ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর পরও সঙ্কট থামানো যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ব্যাংকগুলোর কাছে ১১০ টাকা দরে ডলার বিক্রি করছে। গত বছরের এ সময়ে বিক্রি করেছিল ৯৫ টাকা দরে। যদিও বর্তমানে খোলা বাজারে ১১৭-১২০ টাকায় ডলার বিক্রি হচ্ছে। অবশ্য বাড়তি দামেও খোলা বাজারে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। আবার ব্যাংক থেকেও মিলছে না ডলার। এতে বিপাকে পড়েছে উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশগামী শিক্ষার্থীরা। বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া এবং ভ্রমণপিপাসুসহ প্রয়োজনীয় ডলার না পেয়ে বিপাকে পড়েছে। এদিকে ডলার সঙ্কটে বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট বন্ধ করতে যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমান সংস্থা ইতিহাদ এয়ারওয়েজ। এছাড়া আয় আটকে থাকায় ইতোমধ্যে ফ্লাইটের সংখ্যা সীমিত করেছে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো। দিন দিন ফ্লাইটের সংখ্যা কমাচ্ছে তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ডলার সঙ্কটের কারণে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমেছে। এতে করে শিল্প-বাণিজ্যে সমস্যা হচ্ছে এবং কর্মসংস্থান কমছে। ডলার বাজারে অস্থিরতার কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলছে। বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিদেশ থেকে ঋণ নেয়ার খরচ বেড়েছে। এখান থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় ডলারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। আর এ জন্য বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে রেমিট্যান্স কমছে হুন্ডি চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে। প্রবাসীরা হুন্ডিতে পাঠালে বেশি দর পান। আবার ব্যাংকের চেয়ে দ্রুত সুবিধাভোগীর কাছে টাকা পৌঁছে দেয়। যেখানে কাজ করে সেখান থেকে অনেক দূরে গিয়ে অর্থ পাঠাতে হয়। এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে।
বিপিসির বকেয়া ৬৭০ মিলিয়ন ডলার
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) কয়েক মাস ধরে জমে থাকা বকেয়া আমদানি বিল নিষ্পত্তির জন্য জরুরিভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা চেয়েছে জ্বালানি বিভাগ। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সরবরাহকারীদের কাছে বিপিসির বকেয়া পেমেন্ট দাঁড়িয়েছে ৬৭০ মিলিয়ন ডলারে। এ অর্থ পরিশোধে বিলম্ব হলে সরবরাহকারীদের জরিমানা আরোপ করার সম্ভাবনা আছে।
এর আগে চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসের শুরুতে ডলার সঙ্কটের কারণে বিপিসি আমদানি বিল পরিশোধ করতে হিমশিম খায়। সে সময় কিছু সরবরাহকারী পেমেন্ট পাওয়ার আগে চট্টগ্রাম বন্দরে তেল আনলোড করতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর বিপিসি অর্থ পরিশোধ করলে একজন সরবরাহকারী বন্দরে তেল আনলোড করে। এরপর থেকে বিপিসি আমদানি বিল পরিশোধের চেষ্টা করছে। কিন্তু ডলারের অভাবে আগস্টের মাঝামাঝিতে পরিস্থিতি আবার খারাপ হয়।
এলএনজি আমদানি ডলারের খোঁজে পেট্রোবাংলা
ডলার সঙ্কটের কারণে দেশে উৎপাদিত গ্যাস এবং আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না পেট্রোবাংলা। তবে আগস্ট থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে মার্কিন ডলার ছাড় করার পর বকেয়া বিলের আংশিক পরিশোধ করেছে সংস্থাটি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এখন যে ডলার পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়ে গ্যাস ও এলএনজির বকেয়া বিল এবং জরিমানা পরিশোধ করা হচ্ছে। এলএনজি আনতে চলতি বছর ৭৩৪ মিলিয়ন ডলার বা ৮ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। এ অবস্থায় দেশে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনতে মার্কিন ডলারের খোঁজ করছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) কাছে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ চেয়েছে।
স্থবির বাপেক্সের কূপ খনন ও সংস্কার কার্যক্রম
দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের উত্তোলন, কূপ খনন ও সংস্কারের লক্ষ্যে পাঁচটি রিগ (কূপ খননযন্ত্র) মেরামত ও আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। দুই বছর আগে নেয়া প্রায় ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে ডিসেম্বরে। কিন্তু রিগ মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে ডলারের সংস্থান না হওয়ায় সময়মতো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারেনি কোম্পানিটি। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে প্রকল্পটির কার্যক্রম।
এফডিআই কমেছে ২৯ শতাংশ
বিদেশি মুদ্রার অন্যতম একটি উৎস বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ বা এফডিআই। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে এফডিআই কমেছে ২৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। মোট ৬২ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের এফডিআই এসেছে এ সময়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এফডিআইয়ের সার্বিক পরিস্থিতির সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সেপ্টেম্বরে রফতানি কমেছে ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা
বিদেশি মুদ্রার সবচেয়ে বড় উৎস রফতানি আয়। এ উৎস থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৫০০ কোটি ডলার পাওয়া যায়। প্রবণতা বিশ্লেষণে দেখা যায়, আগের মাসের চেয়ে সেপ্টেম্বরে রফতানি কম হয়েছে ৪৭ কোটি ডলার বা প্রায় ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে পণ্য রফতানি থেকে এসেছে ৪৩১ কোটি ডলার। আগস্টে এর পরিমাণ ছিল ৪৭৮ কোটি ডলার। রফতানি খাতের সবচেয়ে বড় পণ্য তৈরী পোশাক। সমজাতীয় পণ্যসহ মোট রফতানি আয়ের ৮৬ শতাংশের মতো আসে এ খাত থেকে।
ফ্লাইট বন্ধ হচ্ছে ইতিহাদের
বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট বন্ধ করতে যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমান সংস্থা ইতিহাদ এয়ারওয়েজ। এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি মাস শেষে ঢাকা থেকে আর ফ্লাইট পরিচালনা করবে না তারা। এয়ারলাইন্সটির কর্মকর্তারা জানান, গ্রীষ্মকালীন শিডিউল শেষ হবে আগামী ২৮ অক্টোবর। নতুন শিডিউলের আগেই ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে ইতিহাদ কর্তৃপক্ষ। মার্কেটিং বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যেসব যাত্রী নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বর মাসের টিকিট কেটেছেন, তাদের টাকা ফেরত দেয়া হবে। আর যারা রিফান্ড নিতে আগ্রহী নন, তাদের কোড শেয়ারিং পার্টনার এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইটে সমন্বয় করা হচ্ছে। এর আগেও ১২ বছর কার্যক্রম চালানোর পর ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করে দিয়েছিল ইতিহাদ। এদিকে ডলার সঙ্কটে আয় আটকে থাকায় ইতোমধ্যে ফ্লাইটের সংখ্যা সীমিত করেছে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো। দিন দিন ফ্লাইটের সংখ্যা কমাচ্ছে তারা। বাংলাদেশ হয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটে সপ্তাহে সাধারণত ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করত টার্কিশ এয়ারলাইন্স। বাংলাদেশ থেকে তুরস্কগামী ফ্লাইটের টিকিট বিক্রির ২৪ মিলিয়ন ডলার স্থানীয় মুদ্রা-টাকায় দেশের ব্যাংকগুলোতে রেখেছে তারা। টিকিট বিক্রির এ আয় পাঠাতে না পারায় আকাশপথে যাত্রীবাহী সংস্থাটি গত নভেম্বর থেকে সপ্তাহে মাত্র ৭টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। টার্কিশ এয়ারলাইন্সের মতোই সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, মালিনদো এয়ার, কুয়েত এয়ারওয়েজ এবং ক্যাথে প্যাসিফিকের মতো বেশির ভাগ বিদেশি এয়ারলাইন তাদের বাংলাদেশগামী ও বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়া ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়েছে একই কারণে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে ডলার সঙ্কটের সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। কারণ, যে পদ্ধতিতে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে, তা সময়োপযোগী নয়। যখন অনেক বেশি রিজার্ভ থাকে এবং তা দিয়ে মাসের পর মাস যোগান নিশ্চিত করা যায়, তখন ডলারের দাম বেঁধে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি সেই পর্যায়ে নেই। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সরকার যেখানে ডিম-আলুর মতো পণ্যের দাম বেঁধে দিয়ে সেটি কার্যকর করতে পারছে না, সেখানে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত ডলারের বাজার কীভাবে দাম বেঁধে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তা বোধগম্য নয়। ডলারের চলমান সঙ্কট মোকাবিলা করতে হলে এই মুদ্রার দাম পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ দেন এ অর্থনীতিবিদ।