কানাডার মাটিতে শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার ঘটনায় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার জড়িত থাকার অভিযোগকে আবারও ‘গুরুতর’ উল্লেখ করে এর ‘পূর্ণাঙ্গ তদন্ত’ চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তারা অতীতে কানাডাকে তদন্তে সহায়তার জন্য প্রকাশ্যে ও গোপনে ভারত সরকারকে বলেছে। এ প্রেক্ষাপটে কানাডা ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের তিক্ততা আরও বেড়েছে। চলতি সপ্তাহে কানাডার আরও ৪১ কূটনীতিককে দিল্লি থেকে সরিয়ে নিতে বলেছে ভারত।
শিখ নেতা হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার মধ্যে গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফর করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। বুধবার ইন্ডিয়া টুডে জানায়, বৈঠকে তাদের মধ্যে শিখ নেতা নিজ্জার হত্যাকান্ড নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
পরে বৈঠক প্রসঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের কৌশলগত যোগাযোগবিষয়ক সমন্বয়ক জন কিরবি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের স্বার্থে বিষয়টি আলোচনার জন্য তাদের ওপর ছেড়ে দিয়েছি।’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি পরিষ্কার অভিযোগ গুরুতর। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত। আমরা আগেও বলেছি, তদন্তে সক্রিয়ভাবে ভারতের উপস্থিতি আমরা চাই।’
পৃথক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, তারা অতীতে প্রকাশ্যে ও গোপনে ভারত সরকারকে কানাডার তদন্তে সহায়তার জন্য বলেছেন। তিনি বলেন, ‘ভারত যুক্তরাষ্ট্র কোয়াডসহ বিভিন্ন জোটের অংশীদার। গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে আমরা ভারত এবং ওই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করে যাব। তবে আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার। অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর এবং এ জন্য আমরা শুধু আমাদের কানাডীয় অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করব না, ভারতকে বলব তারা যেন সহযোগিতা করে।’
গত ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সারেতে একটি গুরুদুয়ারার বাইরে গুলিতে নিহত হন খালিস্তানপন্থি শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার। তাঁর মৃত্যু কানাডা ও ভারতের মধ্যে নজিরবিহীন কূটনৈতিক দ্বন্দের জন্ম দেয়। গত মাসে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পার্লামেন্টে দাবি করেন, তাদের কাছে বিশ্বস্ত প্রমাণ আছে যে নিজ্জার হত্যায় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং বা ‘র’ জড়িত। ভারত এ অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে।
বুধবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশ আগে থেকেই পশ্চিমের দেশগুলোতে সক্রিয় ‘র’। ভারতের এ পররাষ্ট্র গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য আতঙ্কের নাম। এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নাক গলানো এবং সহিংসতা ঘটানো অবৈধ গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ করেছে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল।
‘র’-এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এমন দু’জন এবং অবসরপ্রাপ্ত আরও চার গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার পর সংস্থাটিকে আরও শক্তিশালী আন্তর্জাতিক ভূমিকা পালনের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে। ওই হামলায় ১৬৬ জন নিহত হয়েছিলেন। কর্মকর্তারা বলেন, তখন থেকে ‘র’ পশ্চিমের দেশগুলোতে তাদের কার্যক্রম বাড়াতে শুরু করে।
সংস্থাটিতে কর্মরত এক কর্মকর্তা বলেন, ‘র’-এর অত্যাধুনিক সংকেত ও গোয়েন্দা প্রযুক্তি রয়েছে। অন্যদিকে পশ্চিমের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখনও তাদের অভিযানের জন্য মানবপ্রদত্ত তথ্যের ওপর নির্ভরশীল। পাঁচ কর্মকর্তা বলেন, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সব খাতে প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বেড়েছে
কানাডায় শিখ নেতা হত্যার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চায় যুক্তরাষ্ট্র
৬৯
previous post