ঢাকা অফিস: কুমিল্লায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি মহানগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ধাওয়া দিলে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় মিছিলটি। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লা নগরের নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তিনজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা।
উল্লেখ্য, সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাসকে নিয়ে মুন্সিগঞ্জের মেয়র ফয়সাল বিপ্লবের ‘সাম্প্রদায়িক গালিগালাজ’, কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনের ‘দুর্গাপূজাকে কটাক্ষ করে মন্তব্য’, কুড়িগ্রামের চারণ কবি রাধাপদ রায়ের ওপর হামলা এবং বিভিন্ন জায়গায় পূজার প্রাক্কালে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে এ প্রতিবাদে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেছিল হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
ঐক্য পরিষদের কুমিল্লা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তাপস বকশী গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে প্রথমে পুলিশ বাধা দেয়। পরে মহানগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের মিছিলে ধাওয়া করে। এতে এক নারীসহ অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন। সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন দুর্গাপূজায় মদ খাওয়া নিয়ে কটূক্তি করায় আমরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ করতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে।’
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে কুমিল্লা মহানগর যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কোনো নেতার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার সকাল ১০টায় নগরের নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকার রাজস্থলী মন্দির এলাকায় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের জেলা সভাপতি চন্দন রায়। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অংশগ্রহণকারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরের কান্দিরপাড় পুবালী চত্বরে আসছিল। এ সময়ে পুলিশ নগরের নজরুল অ্যাভিনিউ সড়কের কর ভবনের সামনে বাধা দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ সময় নগরের কান্দিরপাড় পুবালী চত্বর থেকে মহানগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অন্তত পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী মিছিলকারীদের ধাওয়া করে।
এতে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর মিছিলকারীরা রানীর বাজার ও মহানগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কান্দিরপাড় পুবালী চত্বরে অবস্থান নেন।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমদ সঞ্জু মোর্শেদ বলেন, সংঘাত এড়াতে পুলিশ মিছিলটিকে কান্দিরপাড়ের পুবালী চত্বরে যেতে দেয়নি। কারণ, কান্দিরপাড়ে মহানগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান করছিলেন। আকস্মিক তারা মিছিল নিয়ে এসে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করেন। পরে আমরা পরিস্থিতি সামাল দিই।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পূজা উদযাপন নিয়ে এক সভা হয়। এ সময় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনের ‘মদমুক্ত পূজা’ করার আহ্বান জানিয়ে দেয়া একটি বক্তব্য নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৮ই অক্টোবর বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের দপ্তর সম্পাদক মিহির রঞ্জন হাওলাদার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনের বক্তব্যকে ‘সাম্প্রদায়িক উক্তি’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার কুমিল্লা টাউন হল মিলনায়তনে মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের ব্যানারে সভা হয়। পরিষদের সভাপতি শিব প্রসাদ রায়ের সভাপতিত্বে ওই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন। তিনি দাবি করেন, তার বক্তব্যকে বিকৃতভাবে ছাপিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। কেন্দ্রীয় নেতাদের বিবৃতিতে তিনি হতবাক হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত নগরের কান্দিরপাড় পুবালী চত্বরে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ অবস্থান নেবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
কুমিল্লায় হামলার প্রতিবাদে শাহবাগে অবস্থান হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের
কুমিল্লায় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদ ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন পরিষদের নেতা-কর্মীরা। শুক্রবার শাহবাগ থানার সামনে তারা এই কর্মসূচি পালন করেন। এদিন বিভিন্ন দাবিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালন করেছে পরিষদ।
ঐক্য পরিষদের পূর্বঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে হচ্ছিল। কর্মসূচি চলাকালে ঐক্য পরিষদের শীর্ষ নেতারা মুঠোফোনে কুমিল্লায় হামলার খবর পান বলে জানান। কুমিল্লায় স্থানীয় সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহারের অনুসারীরা এই হামলা চালিয়েছেন বলে জানায় পরিষদের নেতারা। পরে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগে যান পরিষদের নেতাকর্মীরা। শাহবাগ মোড়ে কিছু সময় অবস্থান করেন তারা। সেখানে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান ও বক্তব্য দেন। পরে পুলিশের অনুরোধে তারা শাহবাগ মোড় ছেড়ে দিয়ে শাহবাগ থানার ফটক থেকে কয়েক গজ দূরে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। শাহবাগে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছেন পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।
তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ফয়সাল বিপ্লব আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাসকে সাম্প্রদায়িক গালি দেন।
মৃণাল কান্তির বিরুদ্ধে জনসমক্ষে আরও নানান সাম্প্রদায়িক কটূক্তি করেন তিনি। সেদিনের ঘটনার তারা নিন্দা-প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। ফয়সালের বিরুদ্ধে অবিলম্বে সাংগঠনিক, আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছিলেন তারা। ৪ঠা অক্টোবর কুমিল্লা জেলা পরিষদ কার্যালয়ে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা নিয়ে একটি সভা হয়। সেখানে স্থানীয় সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহার নানা আপত্তিকর মন্তব্য করেন। তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের লাখ লাখ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছেন। ঐক্য পরিষদ প্রতিবাদ জানালে তিনি প্রতিহতের ঘোষণা দেন। অন্যদিকে কুড়িগ্রামে চারণকবি রাধাপদ রায়কে আহত করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের দাবির মুখে মূল হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পরিষদের এই নেতা আরও বলেন, তাদের ভোটে যারা সংসদ সদস্য হন, গাড়ি পান, আজকে তারাই তাদের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। দুর্গাপূজা সামনে রেখে তারা বলে আসছিলেন, এই উৎসব যাতে শান্তিপূর্ণভাবে না হতে পারে, সে জন্য মহলবিশেষ চেষ্টা করছে। সাম্প্রদায়িক গালিগালাজ, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, দুর্গাপূজার প্রাক্কালে মন্দিরে হামলা-ভাঙচুরের প্রতিবাদ, দুর্গাপূজার ছুটি তিন দিন করাসহ নানা দাবিতে পরিষদ সারা দেশে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছিল। কর্মসূচি চলাকালে তারা কুমিল্লায় হামলার খবর পেলেন। আজকে তারা যন্ত্রণায় কাতর, তাদের অন্তর জ্বলছে। কুমিল্লায় হামলার ঘটনায় যতক্ষণ পর্যন্ত অন্তত একজন গ্রেপ্তার না হবেন, ততক্ষণ তাদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে। কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন পরিষদের নেতা মণীন্দ্র কুমার নাথ, জয়ন্ত কুমার দেব, যুব ঐক্য পরিষদের নেতা শ্যামল দেবনাথ, দিলীপ ঘোষ প্রমুখ।