Home Featured নিউইয়র্ক সিটির অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এন্টি ক্রাইম ইউনিট

নিউইয়র্ক সিটির অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এন্টি ক্রাইম ইউনিট

ক্রাইম জোনে পরিনত হচ্ছে জ্যাকসন হাইটস

Mukto Chinta
০ comment ৪০৫ views

অনুরাধা বিশ্বাস : নিউইয়র্ক সিটি কি আবারও আশির দশকে ফিরে যাচ্ছে? আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যারোমিটার দিন দিন নিচের দিকেই নেমে যাচ্ছে। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়ে চলেছে। সাধারণ মানুষ মনে করছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এখনই ‘এন্টি ক্রাইম ইউনিট’ নামানো দরকার। সাবওয়ে অরক্ষিত এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এই অবনতি অব্যাহত থাকলে আগামী গ্রীষ্মে পর্যটকের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা অবনতি প্রতিরোধে এ সপ্তাহের শুরুতেই রাস্তায় নামতে পারে এন্টি ক্রাইম ইউনিট। এদিকে, বাংলাদেশী ব্যবসায়ী এলাকাখ্যাত জ্যাকসন হাইটস ধীরে ধীরে ক্রাইম জোনে পরিনত হতে যাচ্ছে বলে অনেকের আশঙ্কা।

গত কয়েকদিনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পরিসংখ্যান বলছে, দিনদিন অবস্থার দ্রæত অবনতি ঘটছে। চলতি বছরের শুরুতেই সব ধরনের অপরাধের ঘটনা বেড়েছে বহুগুন। এই সংবাদ লেখা পর্যন্ত চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই সিটিতে গুলির ঘটনা ঘটেছে ২১৫ টি। অনান্য অপরাধের ঘটনা বেড়েছে ১৯ ভাগ। এই সংখ্যা এরই মধ্যে ৩ হাজার ৪২৪ গিয়ে দাড়িয়েছে। বিশেষ করে সাবওয়ের ভেতরে অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে ভয়াবহভাবে। সাবওয়েতে গত বছরের তুলনায় ১৮৪ ভাগ বেড়েছে অপরাধ। যাত্রীরা এখন এতই ভীত সন্ত্রস্ত যে বহু যাত্রী এখন আর সাবওয়ে ব্যবহারই করছেন না। যাত্রীসংখ্যাও কমে গেছে বহুগুনে।


এ বিষয়ে সাংবাদিকরা সিটির পুলিশ কমিশনার কিচেন্ট শেওয়েলের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ‘যদি এই অবস্থা চলতে থাকে তাহলে আগামী গ্রীষ্মে পর্যটকরা ভয়ে নিউইয়র্ক সিটিতে ঘুরতে আসবেন না। এই অবস্থায় নিউইয়র্কের অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে না। তাহলে এ নিয়ে আপনাদের কি পরিকল্পনা আছে ? জবাবে শেওয়েল বলেন, ‘ আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছি। আশা করি সুফল আসবে।’ তবে তার কথায় তেমন আশার বাণী ছিলো না। অন্য একটি বক্তব্যে তিনি বলেছেন, তারা এন্টি ক্রাইম ইউনিট নামানোর চিন্তা করছেন। তবে অবশ্যই তারা সাদা পোষাকে থাকবেন না। তাদের ইউনিফর্ম থাকবে। একইসাথে তিনি বলেছেন, ‘এই টিমের সবাইকে প্রয়োজনীয় ট্রেনিং দেয়া হয়েছে। যাতে করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা না ঘটে। এই ইউনিট নিয়ে যাতে কোনো প্রশ্ন না উঠে।’ আজ ( সোমবার ) থেকে এন্টি ক্রাইম ইউনিট সুনির্দিষ্ট কিছু এলাকায় তাদের কার্যক্রম শুরু করবে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে যে সব এলাকায় বেশি গুলির ঘটনা ঘটে সেই সব এলাকায় তারা দায়িত্ব পালন করবে।


উল্লেখ্য এর আগে এনওয়াইপিডি’র ৬০০ সদস্যের একটি এন্টি ক্রাইম ইউনিট ছিলো। যারা সাদা পোষাকে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করতেন। সেই ইউনিট অবশ্য গত বছর বন্ধ করে দেয়া হয়। অনেকেই বলেছেন, তারা ছিলো সন্ত্রাসী এবং অপরাধীদের জন্য আতঙ্ক। এই টিম শান্তিপ্রিয় মানুষের জন্য কোনো সমস্যা ছিলো না। কিন্তু তাদের কঠোর ভ‚মিকার কারণেই ইউনিটটি বন্ধ করে দেয়া হয় বলে জানা যায়।
লক্ষ্য করা গেছে সাম্প্রতিক সময়ে মেয়র এরিখ এ্যাডামস এবং সিটি পুলিশ কমিশনার যতবারই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে লাইভ করেছেন ততবারই বহু সংখ্যক মানুষ ‘এন্টি ক্রাইম ইউনিট’ ফিরিয়ে আনার দাবি তুলেছেন।
শহরজুড়ে গত কয়েকদিনে বহু অপরাধের ঘটনা ঘটেছে যা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে সাধারণ মানুষের মনে। সাবওয়েতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া, হাতুড়ি দিয়ে পিটানো, ঘুষি মেরে রক্তাক্ত করা এমনকি পুলিশের কাছ থেকে আগ্রেয়াস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
গত ১২ মার্চ ম্যানহাটনের মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট’এ একজন সন্ত্রাসী কাউন্টার টপকিয়ে দুজনকে ছুরি মেরে গুরুতর আহত করে অনেক মানুষের সামনে। এ নিয়ে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ম্যানহাটনের এই মিউজিয়াম পর্যটকদের কাছে খুবই প্রিয় একটি জায়গা। অথচ ছুরি মারার এই খবর এখন বিশ্ববাসী জানে।
এর আগে ১১ মার্চ ম্যানহাটনের হাডসন মার্কেট ডেলির সামনে একজন অফ ডিউটি পুলিশ অফিসারকে মারধর করে তার অস্ত্রটি ছিনিয়ে নিয়ে যায় চার যুবক।
নিউইয়র্ক সিটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এই অবনতিতে গত তিনমাসে একাধিকবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন সিটি মেয়র এরিখ এ্যাডামস এবং পুলিশ কমিশনার কিচেন্ট শেওয়েল। বিশেষ করে মেয়র বারবার বলার চেষ্টা করেছেন, সাবওয়ে এবং অনান্য জায়গাতে যারা অপরাধ সংঘঠিত করছেন তারা হোমলেস অথবা মানসিক রোগী। এ কথা গভর্নর কেথি হকুলও বলেছেন। তারা একাধিকবার হোমলেসদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচির কথাও বলেছেন। কিন্তু হোমলেসরা এ ধরণের অপরাধ করতে পারে কিনা তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন আছে। আর সেই প্রশ্ন এখন সামনে চলে এসেছে গত দুই দিনে একাধিক হোমলেসকে গুলি করে হত্যার মধ্য দিয়ে।
১২ মার্চ শনিবার যেদিন ম্যানহাটন মিউজিয়ামে ছুরি দিয়ে হামলা চালানো হয় ওই দিনই ম্যানহাটনের ‘সোহ’ এলাকায় রাস্তার পাশে ঘুমন্ত একজন হোমলেসকে গুলি করে এক ব্যক্তি। হাসপাতালে এখনও সে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে। প্রায় একই সময়ে ‘সোহ’ এলাকার ১৫ বøক দূরে আরো একজন হোমলেসকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেও ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলো। পুলিশ সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে জানতে পারে একই ব্যক্তিই দুজনকে গুলি করেছে। ১৩ মার্চ রোববার নিউইয়র্কের ট্রাইবেকা নেইবারহুড চিপোটলে রেস্টুরেন্টের সামনে সন্ধ্যায় আরও একজন হোমলেসকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে নাকি অন্যভাবে সেটা এখনও পুলিশ জানায়নি। তবে শরীরে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সোমবার তার ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়া গেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এর আগে মার্চের ৩ তারিখে ওয়াশিংটন ডিসি’র নিউইয়র্ক এভিনিউয়ে একজন হোমলেসকে একইভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়।

হোমলেসদের এসব মৃত্যুর ঘটনায় এনওয়াইপিডি এবং ওয়াশিংটন ডিসি মেট্রো পুলিশ এক যুক্ত বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘একজন ব্যক্তি অস্ত্র নিয়ে ঘুমন্ত হোমলেসদের খুব কাছে গিয়ে গুলি করে হত্যা করছে। ’ তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য এনওয়াইপিডি ১০ হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
এদিকে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের প্রানকেন্দ্র জ্যাকসন হাইটস এ চুরি, ছিনতাই এবং ডাকাতির ঘটনা আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। গত কয়েকদিকে একের পর এক এসব ঘটেই চলেছে। পুলিশ কোনো কুল কিণারা করতে পারছে না। জ্যাকসন হাইটস এর ডাইভারসিটি প্লাজা এমনিতেই হোমলেসদের ‘নিরাপদ আস্থানা’ হিসেবে পরিচিত। ডাইভারসিটি এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে দেখা গেছে গত দুই সপ্তাহে সেখানে হোমলেসদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। তবে বিগত দুই বছর সেখানে যেসব হোমলেস ছিলো তাদের মধ্যে বয়স্ক হোমলেসই বেশি ছিলো। যুবক বয়সের যে কয়জন সেখানে অবস্থান করতো তাদের শারীরিক সুস্থতা তেমন ভালো ছিলো না। সেই বিবচনায় তারা মানুষের কাছে অর্থ দাবি করলেও কারো কাছ থেকে ছিনতাই করার মতো শক্তি তাদের ছিলো না বলেই অনেকে মনে করেন। কিন্তু ওই এলাকায় জনা দশেক নেপালী নাগরিকের বিরুদ্ধে দিন-রাতের অধিকাংশ সময়ই মদ-গাঁজা খেয়ে মাতলামি এবং পথচারীদের মারপিট করার অভিযোগ ছিলো। তাদেরকেও এখন খুব একটা দেখা যায় না। কিন্তু তারপরও জ্যাকসন হাইটস এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো অঘটনের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৭৪ স্ট্রিটের একাধিক সোনার দোকানে চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে গত কিছুদিনের মধ্যে। কয়েকটি দোকানে তালা ভেঙ্গে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাইভারসিটি প্লাজার একটি সেল ফোন স্টোর থেকে ফোন ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে কয়েকদিন আগে। ৭৪ স্ট্রিট থেকে পিস্তলের মুখে এক বাংলাদেশীর সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে গত বুধবার। এই ঘটনায় চার যুবক জড়িত ছিলো বলে ভুক্তভোগী ব্যক্তি জানিয়েছেন। এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, কুইন্সে পুলিশ এমন চার ব্যক্তি খুঁজছে যারা একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাকারী চক্রের সদস্য। তারা একই গ্রæপে কাজ করে।
এ ব্যাপারে জ্যাকস হাইটস বিজনেস এসোসিয়েশন কি করছে এমন প্রশ্নের জবাবে জেবিবিএ’ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলম নমী বলেছেন, তারা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই ডাইভারসিটি প্লাজায় একটি পুলিশ বক্স বসানোর জন্য পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করবেন। তার মতে, এখানে পুলিশের উপস্থিতি থাকলে অপরাধ অনেকটাই কমে যাবে।

 

You may also like

Leave a Comment

Muktochinta

Multochinta is a famous news media from New York. 

Subscribe my Newsletter for new blog posts, tips & new photos. Let's stay updated!

All Right Reserved. 2022 emuktochinta.com