তামান্না তাসনীম : এবার অপরাধীরা ভিন্ন মাত্রার এক অপরাধের দিকে পা বাড়াচ্ছে। তারা এমন এক ধরণের অস্ত্র তৈরি করছে যেটা মেটাল ডিটেক্টরে সনাক্ত হচ্ছে না। থ্রি ডি প্রিন্টারে তৈরি নতুন ধরণের এই অস্ত্র নিয়ে পুলিশ প্রসাশন উদ্বিগ্ন।
গত কয়েক বছর ধরেই সন্ত্রাসীরা যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের আরও অনেক দেশে নিজেদের ঘরে বসেই নতুন ধরনের এক অস্ত্র তৈরি শুরু করে। থ্রি ডি প্রিন্টারে তৈরি এই অস্ত্র বানাতে সময় কম লাগে, আর খরচও বহুগুনে কম। তৈরি করা যায় নিজের ঘরে বসেই। ফলে পুলিশের হাতে ধরার পড়ার ভয় কম। থ্রি ডি প্রিন্টারে তৈরি প্লাস্টিকের এসব অস্ত্র আসল অস্ত্রের মতোই কাজ করে। অরিজিনাল গুলি এর থেতরে ঢুকিয়ে গুলি করলে কার্যকারিতা একই। অপরাধীরা যে এই থ্রি ডি প্রিন্টারে কেবল হালকা অস্ত্রই তৈরি করছে তা নয়। তারা হেভি ধরনের অস্ত্রও তৈরি করছে এই প্রিন্টারে। যার মধ্যে রয়েছে এ্যাসল্ট রাইফেল বা তার কাছাকাছি ধরনের অস্ত্র।
এরই মধ্যে পুলিশ গত ৯ মার্চ ব্রæকলিন থেকে থ্রি ডি প্রিন্টারে তৈরি একটি অস্ত্রসহ একজনকে গ্রেফতার করেছে। তার কাছ থেকে আরও অনেকগুলো অস্ত্র তৈরির যন্ত্রাংশ উদ্ধার করা হয়েছে। যেগুলো দিয়ে কমপক্ষে আরও সাতটি ছোট আগ্নেয়াস্ত্র বানানো যেতো।
এর আগে ২০১৯ সালেও এ ধরণের ৪৭ টি, ২০২০ সালে ১৫০ টি এবং চলতি বছরে এ পর্যন্ত প্রায় ৮৫ টি এ ধরণের অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এসব অস্ত্র জীবনঘাতি হলেও তিন থেকে চারশ টাকায় তৈরি করে এক থেকে দেড় হাজার ডলারে বিক্রি হচ্ছে কালো বাজারে। পুলিশ প্রশাসন এটাকে ‘ গোস্ট গান’ বা ভৌতিক অস্ত্র বলে আখ্যায়িত করছে।
গোয়েন্দা প্রধান টম গালাটি এ ব্যাপারে বলেন, এসব গোস্ট গানের কোনো সিরিয়াল নম্বর নেই। ট্রেস করা কঠিন, অল্প সময়ে বানানো যায়, খরচ কম কিন্তু জীবনঘাতী। তাদের মতে, এসব অস্ত্র ট্রেস করা খুবই দূরহ। ফলে এসব দিয়ে অপরাধী এবং ‘গ্যাং’ সদস্যরা সহজেই অপরাধ করার সুযোগ পাচ্ছে। এ কারণে এই অস্ত্রের জনপ্রিয়তাও দিনদিন বাড়ছে।
‘গোস্ট গান’ নিয়ে ইন্সপেক্টর কোর্টনি নিলান বলেছেন, ‘এটা পুলিশ প্রশাসনের মাথাব্যাথার নতুন কারণ। সোস্যাল মিডিয়াতে থ্রি ডি অস্ত্র নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, ¯œ্যাপচ্যাট এবং ফেসবুকেও এই অস্ত্র নিয়ে মাতামাতি হচ্ছে। তার মতে, অনেক যুবক এখন এর সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে।
ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড টেরোরিজম জন মিলার এটার ভয়াবহতার চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, সময় নষ্ট না করে আমাদেরকে এখন প্লাস্টিকের তৈরি অস্ত্রের দিকে নজর দিতে হবে। যেটা কিনা ঘরেই তৈরি হচ্ছে।
উল্লেখ্য থ্রি ডি প্রিন্টারে তৈরি অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা গত বছরের চেয়ে ৩২৫ ভাগ বেড়েছে এ বছরের প্রথম তিন মাসেই। ফলে এটা সহজেই অনুমান করা যায় এই অস্ত্র এখন কতটা বিপজ্জনক অবস্থার দিকে যাচ্ছে।