মুক্তচিন্তা ডেস্ক : ক্যালিফোর্নিয়ার ডিষ্ট্রিক্ট-১০ থেকে স্টেট সিনেটর পদে নির্বাচন করছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকান জামাল খান। আগামী ৭ জুন এই আসনের প্রাইমারী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি ইতিমধ্যেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। তার পক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায়ও চলছে ব্যাপক প্রচারণা। বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড ল’ স্কুলের গ্র্যাজুয়েট জামাল খান একাধারে আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও লেখক। এ পর্যন্ত তার লেখা পাঁচটি বই গ্রকাশিত হয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়া থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, জামাল খান ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বারকেলি থেকে হাই অনার্স এবং ভ্যালিডিকট্ররিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স হাইস্কুল থেকে হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েশন করেন। পাশাপাশি তিনি প্রেসিডেনশিয়াল ম্যানেজমেন্ট ফেলো, ক্যালিফোর্নিয়ায় লাইসেন্সড অ্যাটর্নি হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি, বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও মেয়র সাম রিকার্ডোর পক্ষে বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনে কাজ করেছেন। তার অভিজ্ঞতার আলোকে এবার তিনি নিজেই প্রার্থী হচ্ছেন। খবর ইউএনএ’র
নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে জামাল খান মিডিয়া-কে বলেন, ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির প্রতি আগ্রহী ছিলাম। সব সময় চেষ্টা করেছি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে। সে জন্য ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়ই রাজনীতিবিদদের সাথে কাজ করেছি, তাদের অফিসে ইন্টার্নশিপ করেছি। আমি বারাক হোসেন ওবামার প্রশাসনের হোয়াইট হাউসের সাথে কাজ করেছি। ন্যান্সি পেলোসি যখন নির্বাচন করেন, তখন তার সানফ্রান্সিসকো অফিসে নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে কাজ করেছি। কমল হ্যারিস যখন সিনেটর পদে রান করেন, তখন তার ক্যালিফোর্নিয়ার নির্বাচনী ক্যাম্পে কাজ করেছি। আমাদের সিটি মেয়রের নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে কাজ করেছি। তাদের নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে কাজ করতে গিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেসব অভিজ্ঞতা থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। এসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে জয়লাভের চেষ্টা করব।
জামাল খান আরো বলেন, আমি চাই আরো অধিক সংখ্যায় বাংলাদেশী-আমেরিকানরা আমেরিকার নির্বাচনে অংশ নিক। আমাকে দেখে অন্য বাংলাদেশীরাও যাতে উৎসাহ পান, সেটাও আমার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অন্যতম কারণ।
নির্বাচনী ক্যাম্পেইন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় বাংলাদেশী-আমেরিকানসহ বিভিন্ন কমিউনিটির ভোটার আছেন, তাদের সাথে কথা বলছি, যোগযোগ হচ্ছে, ফ্লায়ার দিচ্ছি। কথাবার্তা বলে অনেক কিছু আইডেন্টিফাই করছি। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি বলেন, নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভোটারদের নানা প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে। তাদের ভালো রেসপন্সও পাচ্ছি।
জামাল খান জানান, আসন্ন প্রাইমারী নির্বাচনে আমরা ছয়জন প্রার্থী হয়েছি। এর মধ্যে একজন রিপাবলিকান। বাকি সবাই ডেমোক্র্যাট। আমাদের এখানে আগে নির্বাচনের ভিন্ন নিয়ম ছিল। এখন নতুন নিয়ম করা হয়েছে। সেই নিয়মে সবাই নির্বাচনে অংশ নেব। অর্থাৎ ডেমোক্র্যাট, রিপাবলিকান এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রার্থীরা সবাই অংশ নেবেন। এর মধ্যে একজন ডেমোক্র্যাট ও একজন রিপাবলিকান জয়ী হবেন। পরে এই দুজন প্রার্থী জেনারেল নির্বাচনে অংশ নেবেন। এর মধ্যে যিনি সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হবেন, তিনিই সিনেটে যাবেন। সেই হিসেবে নির্বাচনে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি হবে।
নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী জামাল খান বলেন, আমার ডিস্ট্রিক্টে প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ বাস করেন। এর মধ্যে হাফ মিলিয়নের বেশি মানুষ ভোটার। এখানে বাংলাদেশী, ভারতীয়, পাকিস্তানী ছাড়াও বিভিন্ন দেশের মুসলিমসহ অনেক দেশের ভোটার রয়েছেন। আমি প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ জন ভোটারের সাথে সরাসরি কথা বলছি। এ ছাড়া অনেক ভোটারকে মেইল করছি। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও যোগাযাগ করছি। সব মিলিয়ে আমি ভোটারদের সাথে যোগাযোগ করছি, যাতে তারা আমাকে ভোট দেন। তিনি বলেন, এর আগেও আমি সিটি কাউন্সিলে একবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলাম। ওই সময়ে আমি চারজনের সাথে প্রার্থী ছিলাম। সেই সময়ে আমার ফাইল করতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। তাই আশানুরূপ ফল পাইনি। তবে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা এবার কাজে লাগাতে পারব। আমি আশা করছি, ভোটাররা আমাকে ভোট দেবেন এবং জয়ের ব্যাপারে তাই আমি আশাবাদী। এ ছাড়া আমার ডিস্ট্রিক্টে ২০ শতাংশ রিপাবলিকান এবং ৮০ শতাংশ হচ্ছে ডেমোক্র্যাট ভোটার রয়েছেন। সেই হিসেবে বলা যায়, এটি ডেমোক্র্যাট ডিস্ট্রিক্ট। তাই একজন ডেমেক্র্যাটিক প্রার্থী হিসেবে জয়ী হতে পারব বলে আমার বিশ্বাস।
নির্বাচিত হলে কোন কোন বিষয়ে অগ্রাধিকার দেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে জামাল খান বলেন, আমি ক্যালিফোর্নিয়াতেই থাকি। এর মধ্যে দুটি ফেলোশিপের জন্য ওয়াশিংটন ডিসিতে দুই বছর ছিলাম। হোয়াইট হাউসে ডিসি অফিসের সাথে কাজ করেছি। ফ্রি এবং রিডিউস প্রাইসের লাঞ্চ প্রোগ্রামেও কাজ করছি। এ ছাড়া হার্ভার্ডে পড়ার সময় চার বছর ছিলাম সেখানে। বাকি সময়টা ক্যালিফোর্নিয়াতে থেকেই কেটেছে, সেখানেই ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছি। আমি এখানে থেকে দেখেছি মানুষের কী কী সমস্যা হচ্ছে। নির্বাচিত হলে প্রাধান্য দিয়ে যেসব কাজ করব। এর মধ্যে রয়েছে অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং, হোমলেসনেস, হেলথ কেয়ার, এডুকেশন, পাবলিক সেফটি, হেইট ক্রাইমস, ফিজিক্যাল রেসপন্সেবিলিটি, গান ভায়োলেন্স প্রিভেনশন প্রভৃতি। এসব বিষয়ে যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করব এবং সমাধান করব। তিনি আরো বলেন, এখন ফুলটাইম সময় দিচ্ছি নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে। ভবিষ্যতে ডেটা প্রাইভেসি এবং ইন্ট্রালেকচুয়াল প্রপার্টি নিয়ে কাজ করারও ইচ্ছা আছে।
ক্যালিফোর্নিয়া থেকে স্টেট সিনেটর পদে নির্বাচন করছেন জামাল খান
২৭৫
previous post