বিজনেস ডেস্ক : জ্যামাইকার হিলসাইড এলাকায় ছিমছাম সাজানো গুছানো কিউএটেক সলিউশনস’র ক্লাসরুমে বেশকিছু তরুণ ছেলে- মেয়ে মনোযোগ সহকারে লেকচার শুনছে। লেকচার শোনার প্রতি মনোযোগ এত বেশি যে কাঁচঘেরা ক্লাসরুমের বাইরে কেউ দাড়ালেও সেদিকে কারো খেয়াল নেই। আর এসব শিক্ষার্থীদের সুন্দর করে প্রতিটা বিষয় বুঝিয়ে দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মেদ উদ্দিন। বিরতিহীন একঘন্টা ট্রেনিং শেষে স্বল্প সময়ের বিরতি দিয়ে বের হয়ে আসেন তিনি।
কথা হয় মোহাম্মেদ উদ্দিনের সাথে তার অফিসকক্ষে। তিনি জানান, এক সময় সে নিজেও এ রকম ছাত্র ছিলেন। এখনও তিনি এই আইটি ট্রেনিং নিয়ে নিজের চাকুরীর পাশাপাশি একটা ট্রেনিং সেন্টার খুলেছেন। বর্তমানে তিনি একটি আমেরিকান প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। নিজে বহু বছর আইটি সেক্টরে জড়িত রাখলেও একটা বিষয় তিনি খেয়াল করেন। সেটা হচ্ছে, অনেক তরুণের এই পেশার প্রতি আগ্রহ আছে। কারণ আইটি ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে অনেক সুযোগ-সুবিধাসহ এই সেক্টরে প্রচুর জব মার্কেট রয়েছে। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন সঠিক ট্রেনিং। যেটা অনেক ট্রেনিং সেন্টারে হচ্ছে না। তার অভিযোগ বর্তমানে অনেকেই ট্রেনিং সেন্টার খুলে অনেককে ট্রেনিং দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অর্থ খরচ হচ্ছে। তবে তারা সবাই চাকরী পাচ্ছে না সঠিকভাবে তাদের ট্রেনিংটা না দেয়ার কারণে। তার নিজের ক্ষেত্রে এমন খারাপ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘ট্রেনিংয়ের ক্ষেত্রে কোন কোন জায়গায় বেশি যতœবান হওয়া দরকার সেটা তিনি জানেন বলেই তার শিক্ষার্থীরা সহজেই সবকিছু বুঝতে পারে। ’
২০১৬ সালে মোহাম্মেদ উদ্দিন এবং তার অংশিদার রিফাত হালিম মিলে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। রিফাত হালিম প্রেসিডেন্ট হিসেবে রয়েছেন এই প্রতিষ্ঠানে। শুরুর দিকে শিক্ষার্থী পেতে অনেক কষ্ট হলেও এখন আর সেই অবস্থা নেই। কারণ অল্প সময়েই তাদের সুনাম ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানান। ২০২০ সালেও যখন অনেক তরুণ ঘরে বসে সময় কাটাচ্ছিলেন তখনও তারা অনলাইনে ট্রেনিং দিয়েছেন। যাদের অনেকেই এখন ফ্লোরিডা, টেক্সাস বা ভার্জিনিয়ার কোনো ফার্মে অনলাইনেই চাকুরী করছেন। তাদের বেতনও খুব ভালো। সপ্তাহের পাঁচদিন কাজ করে সবাই খুশি। দু’দিন পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পারেন। অনান্য সুযোগ-সুবিধাতো রয়েছেই।
প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মেদ উদ্দিনের মতে কেবল অর্থ উপার্জনটাই তাদের কাছে মুখ্য বিষয় না। তারা মনে করেন প্রবাসে যারা আছেন তাদের বেশিরভাগই একটা উন্নত জীবনের আশায় প্রবাসে আছেন। তারা যাতে নিজের জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারে, আর্থিকভাবে সবাই স্বচ্ছল থাকে সেটাও তারা বিবেচনায় রাখেন। মূলত এটাও একটা বড় কারণ ট্রেনিং সেন্টার খোলার পেছনে।
বর্তমানে তারা কিউএ, বেসিক কম্পিউটিং, বিজনেস এনালিসসহ আরও কিছু প্রোগ্রাম চালু করেছেন। তিনি জানান, যারা ১৪ সপ্তাহ বা সাড়ে তিনমাসের ট্রেনিং শেষ করেন তাদের আবারও পরীক্ষা নেয়া হয়। যারা অন্তত ৮৫ ভাগ নম্বর পান তাদের জন্য ইন্টারভিউ অনেক সহজ বলে তিনি মনে করেন। ট্রেনিং শেষে কিভাবে চাকুরীর আবেদন করতে হবে, বায়োডাটা কিভাবে লিখতে হবে, কোথায় জমা দিতে হবে ট্রেনিং শেষে সবকিছুই তাদের সারাসরি ত্বত্ত¡াবধানে করে দেয়া হয়। তার মতে ইন্টারনাল এক্সাম, ফরমাল গ্রæমিং, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নিয়ে ভালো কোনো শিক্ষা পায় না বলে অনেকেই চাকুরী পায় না। যেটা তারা প্রত্যোক শিক্ষার্থীকে শেখান।
মোহাম্মেদ উদ্দিন আরও জানান, ‘আমরা বিষয়টাকে অত্যন্ত সহজ করে দিয়েছি। আমাদের নিজেদের ওয়েবসাইট রয়েছে, সেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের একাউন্ট লগইন করতে পারেন আলাদা আলাদাভাবে। তারা সব সময় তাদের পারফর্মেন্স দেখতে পারেন। নিজেদের বায়োডাটা নিজেরাই আপডেট করতে পারেন। একইসাথে ইন্টারনাল এক্সামে কে কত নম্বর পেয়েছে সেটা দেখেও তারা চাকুরীরর জন্য ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি নিতে পারেন। চাকুরী না হওয়া পর্যন্ত , এমনকি চাকুরী পাবার পরেও তারা সার্বক্ষনিক সহায়তা করে থাকেন বলে জানান। ’