মুক্তচিন্তা রিপোর্ট : মিজান চৌধুরী কমিউনিটির অতি পরিচিত একটি নাম। মেইনস্ট্রীম পলিটিক্সের সাথে তিনি বহু আগে থেকেই জড়িত। পেশাগত জীবনে একজন আইটি বিশেষজ্ঞ হলেও রাজনীতিতে হঠাৎ করেই আসেননি। এর আগেও তিনি ২০১৮ সালে কংগ্রেসম্যান পদে নির্বাচন করে প্রথমবারের মতো প্রতিদ্বন্ধিতা করে ২২ শতাংশ ভোট পান। যেটা দেখে অনেকেই অবাক হয়ে যান।
মাঝখানে অনেকটা সময় কেটে গেছে। ব্যক্তিগত জীবনে নানা ব্যস্ততার মধ্যেও ২০২০ সালে করোনা শুরু হলে সবাই যখন ঘরে বসে নানা শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছিলো তখন মিজান চেটৗধুরী চাল, ডাল, সেনিটাইজার, মাস্কসহ নানা ধরণের ফ্রি ফুড ও সামগ্রী নিয়ে ব্যস্ত বিপদগ্রস্থ মানুষের ঘরে পৌছে দিতে। করোনার পুরো সময়টা তিনি ছিলেন কমিউনিটির মানুষের সেবা নিয়ে ব্যস্ত। এরপর নিজের স্ত্রী সোমা সাঈদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ম্যানেজার হিসেবে বিশাল সফলতার ছাপ রাখেন তিনি। সোমা সাঈদ কুইন্স কাউন্সির ডিস্টিক্ট্র জাজ পদে ডেমোক্রেট দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রাইমারীতে এক লাখ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। কিন্তু মিজান চৌধুরী আর বিভিন্ন কমিউনিটির মানুষের অক্লান্ত চেষ্টায় চুড়ান্ত নির্বাচনেও সোমা সাইদ এক লাখ পঞ্চান্ন হাজার ভোট পেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্ধির চেয়ে অনেক বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। সেই ইতিহাসের পেছনের অন্যতম ব্যক্তিটিও মিজান চৌধুরী।
ব্যক্তিগত জীবনে রাজনীতি ও সমাজ সেবার পাশাপাশি ব্যবসা এবং টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত আছেন গত দুই দশক ধরে। মিজান চৌধুরী বলেন, ‘আমি মানুষের জন্য কাজ করতে ভালোবাসি। মানুষের আনন্দ বেদনা আর সুখ-দুঃখে পাশে থাকতে পছন্দ করি। এটা আমার পরিচিত মহলের সবাই জানেন। আর সে জন্যই চলতি বছরের জুন মাসে অনুষ্ঠিতব্য ডিস্ট্রিক্ট ২৪ এর জন্য এ্যাসেম্বলিম্যান পদে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এই নির্বাচনী এলাকার মানুষের কাছে মিজান চৌধুরী একজন নিঃস্বার্থ সমাজসেবক হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। আর সে জন্যই এলাকার সব কমিউনিটি, ধর্ম, বর্ণের মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে তিনি নির্বাচনের সিদ্বান্ত নিয়েছেন বলে জানান। নির্বাচনের জন্য খুব বেশি সময় হাতে না থাকলেও তিনি মনে করেন, এই নির্বাচনী এলাকার সব মানুষ যদি ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন তাহলে একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভ‚দ আমেরিকান হিসেবে তার বিজয়ী হবার সম্ভাবনা শতভাগ। বিশেষ করে তিনি সব বাংলাদেশি ভোটারকে ভোট দেয়ার অনুরোধ করেন। তার মতে অনেক ভোটার আছেন যারা বিগত ১০/১৫ বছরেও ভোটকেন্দ্রে যাননি বা ভোট দেননি। এবার তিনি অনুরোধ করেছেন তাকে ভোট দিয়ে এ্যাসে¤িøম্যান হিসেবে নির্বাচিত করার জন্য। মিজান চৌধুরী জানান, সোমা সাঈদকে বিজয়ী করতে সব বাংলাদেশিরা ভোটকেন্দ্রে গিয়েছেন, অন্যদেরকেও ভোট দেয়ার অনুরোধ করেছেন। একইভাবে তাকেও বিজয়ী করে সবার পাশে থাকার সুযোগ চেয়েছেন।
তার মতে, বাংলাদেশীদের মূলধারার রাজনীতির সাথে আরও বেশি সম্পৃক্ত হবার স্বার্থেই তিনি এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। যদিও এই পদে নির্বাচনের জন্য কোনো ম্যাচিং ফান্ড এর সুযোগ নেই। তবুও সবাইকে সাথে নিয়ে তিনি নির্বাচনী বিজয় ছিনিয়ে আনতে চান। কমিউনিটিতে বাংলাদেশি আমেরিকানদের মূলধারার রাজনীতিতে নের্তৃত্বের অভাবের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদেরকে ডিস্ট্রিক্ট লিডার, জুডিশিয়াল ডেলিগেট, কাউন্টি কমিটি, স্টেটসহ বিভিন্ন পদে বাংলাদেশিদের নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধীরে ধীরে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে লিডারশিপ পাইপলাইন গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। যারা ভোটার হবার যোগ্যতা অর্জন করেছেন অথচ ভোটার রেজিস্ট্রেশন এখনও করেননি, তাদের অতি সত্বর ভোটার রেজিষ্ট্রেশন করারও অনুরোধ জানিয়েছেন মিজান চৌধুরী। তার মতে এই নির্বাচনী এলাকার মানুষ সিটি এবং স্টেটের ফান্ড প্রয়োজন অনুযায়ী পায় না। প্রয়োজনীয় ফান্ড পাবার জন্য এই পদে বাংলাদেশিদের একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি প্রয়োজন। তিনি নিজেই সেই দায়িত্বটা কাঁধে নিতে চান।
মিজান চৌধুরী জানান, এই আসনের উপর আগামীতে ডিস্ট্রিক্ট লিডার, জুডিশিয়াল ডেলিগেট, কাউন্সিলম্যান ইত্যাদি পদগুলো পাওয়াও নির্ভর করবে। নতুন ভোটার ও নতুন প্রজন্মকে তার নির্বাচনী কর্মকান্ডে আরও বেশি সম্পৃক্ত হয়ে তার পক্ষে কাজ করার আহবান জানিয়ে বলেন, কমিউনিটিতে নিজেদের নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকলে অনেকভাবে মানুষ উপকৃত হতে পারে। তিনি এখন যেভাবে কমিউনিটির জন্য কাজ করছেন, নির্বাচিত হলে তা আরও গতি পাবে বলে প্রতিশ্রæতি দেন। একইসাথে সুযোগ সুবিধা পাবার স্বার্থে উপর মহলে যেসব যোগাযোগের প্রয়োজন সেটা তিনি আরও সহজ করবেন বলে জানান। নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকার কারণে কমিউনিটি অনেক পিছিয়ে পড়ছে বলে তার অভিমত। মিজান চৌধুরী বলেন, ডিস্ট্রিক্ট ২৪ নির্বাচনী এলাকায় বিপুল সংখ্যক এশিয়ান, হিস্পানিক ও কৃষ্ণাঙ্গ রয়েছেন যারা চাইলে নিজেরাই নিজেদের কমিউনিটি আরও সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারেন নিজেদের একজন প্রতিনিধি বিজয়ী করার মাধ্যমে। এই বাস্তবতায় মিজান চৌধুরী সবার পক্ষে নির্বাচন করে এসেম্বলিম্যান হিসেবে বিজয়ী হতে চান।
ইতিমধ্যেই মিজান চৌধুরী বিভিন্ন কমিউনিটির লিডারদের সাথে বৈঠক করেছেন। তারা তাকে আশ্বাস দিয়েছেন তার পক্ষে কাজ করার। বাংলাদেশি কমিউনিটিতে নবীন-প্রবীন একাধিক গ্রæপ এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন তার পক্ষে। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে স্বাক্ষর সংগ্রহ শুরু হবে এবং চলতি বছরের জুন মাসের ২১ তারিখে প্রাইমারী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ডিস্ট্রিক্ট ২৪ এ জ্যামাইকা এস্টেট, হলিস, হলিসউড, ব্রায়ারউড, রিচমন্ডহিল, বেলরুজ, কুইন্স ভিলেজ, গ্লেনওকস, জ্যমাইকা হিলস এলাকা অন্তর্ভূক্ত। এই এইসব এলাকায় যারা বসবাস করেন এবং ভোটার হয়েছেন তারা সবাই ভোট দিতে পারবেন।
মিজান চৌধুরী আরও জানান, আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটির এমন একজন প্রতিনিধি দরকার যিনি আমাদের ভাষা বুঝেন, বাংলা ভাষা বুঝেন, আমাদের কথা বুঝেন, আমাদের আনন্দ বেদনার সাথী হতে পারেন। যিনি আমাদের ধর্মকে সম্মান করেন, আমাদের কৃষ্টি, কালচারকে ভালোবাসেন। যদি এই কথাগুলো সবাই বিশ্বাস করেন, তাহলে আমি মনে করি ‘ আমি মিজান চৌধুরীই সেই ব্যাক্তি।” আমি আপনাদের ভাষা, প্রয়োজন, আনন্দ বেদনা, ধর্ম, কৃষ্টি বুঝি। আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করুন, আমি সব সময় আপনাদের পাশে থাকবো।