মুক্তচিন্তা রিপোর্ট : নিউইয়র্কের অনেক গ্রোসারীতে হালাল ঘোষণা দিয়ে হারাম মাংস বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে জ্যাকসন হাইটস ও জ্যামাইকার অনেক গ্রোসারীতে অধিক মুনাফার লোকে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির তোয়াক্কা না করে অন্যায়ভাবে হারাম মাংস বিক্রি করছে।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জ্যামাইকার হিলসাইড এলাকার প্রিমিয়াম সুপার মার্কেটে রফিকুল ইসলাম শুভ নামের এক ব্যক্তি মুরগির মাংস কিনতে আসেন। ক্রেতার কাছে মুরগীর মাংস বিক্রির সময় বিক্রেতা যখর বাক্স খুলছিলো তখন দেখা যায় সেটা ‘টাইসন’ কোম্পানীর নাম লেখা। ক্রেতা রফিকুল ইসলাম শুভ এ বিষয়ে জানতে চায় ‘এটা কি হালাল ? এ সময় যে ব্যক্তি মাংস কেটে বিক্রি করছিলেন সে ওই কাগজের বাক্সের একটা অংশ এনে ক্রেতার হাতে দিয়ে বলে এটা ‘হালাল’ কিন্তু ক্রেতা পুরোটা পড়ার পরে জানায় এটা হালাল না।
এ সময় এক গ্রোসারীতে কর্মরত একজন মহিলা এসে জানায় ‘ আমরা হালাল মিট বিক্রি করি।’ কিন্তু ক্রেতারা এ নিয়ে চ্যালেঞ্জ করে গ্রোসারীতে কর্মরত ওই মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বলে ‘ আপনি হিজাব পরে এ ধরনের কাজ করতে পারেন না।’ জবাবে হিজার পরা ওই মহিলা জানান ‘ আমি যা চাই তাই করতে পারি।’ একইসাথে তিনি বলেন সমস্যা হলে ৩১১ কল করতে পারেন। ’ এ সময় ওই মহিলা জানান, ‘আমাদের হালালের সাইন আছে।’ এ সময় তর্ক-বিতর্ক হলে ওই মহিলা নিজেকে ম্যানেজমেন্টের লোক বলে দাবি করেন। ক্রেতারা বলতে থাকেন ‘টাইসন’ কোম্পানী হালাল চিকেন বিক্রি করে না।
ওদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে টাইসন হালাল কোনো মিট বিক্রি করে না। তবে গ্রোসারী বা অন্য কোনো রেস্টুরেন্টে কেউ যদি হালাল ঘোষণা দিয়ে হারাম বিক্রি করে তাহলে সেটা বেআইনী বলে জানা গেছে। মাংস হালাল হলে অবশ্যই তার গায়ে ‘হালাল’ লেখা থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে অনেক গ্রোসারী মালিক সেটা না মেনে অপকর্ম করছে বলে জানান কেউ কেউ । বেশিরভাগ গ্রোসারীতে মেয়াদ উত্তীর্ণ জিনিস নতুন তারিখ প্রিন্ট করে সেই পণ্য বিক্রি করারও অভিযোগ আছে। বিশেষ করে কোনো কোনো গ্রোসারীর মালিক ধর্মীয় অনুভুতিকে কাজে লাগিয়ে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে। এরা খুব চালাকীর সাথে স্টোরের নাম রাখে মক্কা স্টোর, মদীনা গ্রোসারী, আল্লাহর দান রেস্টুরেন্ট, বিসমিল্লাহ কাবাব ইত্যাদি।
আলী আকবর নামের এক ব্যাক্তি অভিযোগ করে বলেন, হিলসাইডের একটি গ্রোসারী থেকে তিনি ৩০ পাউন্ড হাঁড় ছাড়া গরুর মাংস কিনে নেন। বাসায় গিয়ে দেখেন সেখানে অর্ধেকের বেশি হাঁড়। পরে এ নিয়ে ওই গ্রোসারীর বিক্রেতাকে জানালে তাকে জানায় পরবর্তীতে এটা পুষিয়ে দিবে। এটা অনিচ্ছাকৃত ভুল বলেও জানান। একই ধরনের অভিযোগ মিনা হোসেন ও সোলায়মান মিয়ারও। তারা একাধিকবার মাংস কিনে প্রতারিত হয়েছেন বলে জানান। অনেক গ্রোসারীতে পঁচা শাকসব্জি এবং মেয়াদউত্তীর্ন জন্য বিক্রির অভিযোগ আছে। একই জিনিস তারা বছরের পর বছর নিজেরাই স্টিকার প্রিন্ট করে লাগিয়ে নতুন বলে বিক্রি করেন। এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, জ্যাকসন হাইটস’র নামকরা এক গ্রোসারী থেকে তিনি দুই সপ্তাহ আগে কলা কিনেছেন। সেই কলা এখনও কাঁচা রয়েছে। অনান্য ফলমূল বিক্রিতেও ধোঁকাবাজি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য ‘টাইসনের’ এই হারাম মুরগীর মাংসের ভিডিও রফিকুল ইসলাম শুভ সোস্যাল মিডিয়ায় আপলোড করলে হাজার মানুষ সেটা শেয়ার করে এবং এই ভিডিও নিয়ে কমিউনিটিতে আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই হারাম এবং হালাল মাংস বিক্রির বিষয়ে আরও স্বচ্ছতার দাবি জানিয়েছেন।
অনেক ক্রেতা অভিযোগ করেছেন, নিউইয়র্কের অনেক গ্রোসারীতেই বিক্রি হচ্ছে ‘হারাম মাংস। কিন্তু বলা হচ্ছে হালাল।’