হুমায়ুন কবির, ইউক্রেন : ইউক্রেনে গত বৃহস্পতিবার রাশিয়ার হামলা শুরু হবার পর থেকেই একটি প্রশ্ন বারবার সামনে চলে আসে। সেটা হচ্ছে, ‘তবে কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হচ্ছে?’ বিশ্বজুড়ে রাজনীতি সচেতন মানুষের মনে যখন এই শঙ্গা সেই সময়ে স্বত্তির একটা বিষয় লক্ষ্য করা যায় তাৎক্ষনিকভাবে। ইউক্রেনের মিত্রশক্তি বা ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জানিয়ে দেয় তারা এই যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিচ্ছে না। আর যুক্তরাষ্ট্র এটা স্পষ্ট করে দেয় যেখানে জাতীয় নিরাপত্তার কোনো বিষয় নেই সেরকম একটি ইস্যু নিয়ে তারা কারো জন্য অস্ত্র হাতে নিবে না। যুদ্ধ শুরুর পরদিনই এটা স্পষ্ট হয়ে যায় রাশিয়ার সাথে এই যুদ্ধে ইউক্রেন একা। নীতিগত সমর্থন ছাড়া আর কোনোভাবে সহযোগিতা পাবার কোনো আশাই নেই ইউক্রেনের। তবে ১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে এটাই সবচেয়ে বড় যুদ্ধ বলে মনে করা হচ্ছে। এতদিনকার ন্যাটো বন্ধুদের নানা উস্কানীতে ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেও এখন প্রেসিডেন্ট জেলনস্কি মনে করছেন, ন্যাটো দেশগুলো তাকে সমর্থন দিতে বা ন্যাটোর সদস্য করতে ভয় পাচ্ছে। সে কারণে তিনি খুব অসহায় বোধ করছেন।
যুদ্ধ থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পদক্ষেপ
বৃহস্পতিবার ভোরে ইউক্রেনে হামলার পরদিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বøাদিমির পুতিন বলেছেন, পূর্ব ইউক্রেন তথা লুহানস্ক ও ডোনেটস্কের নাগরিকের সুরক্ষার জন্যই এই সামরিক অভিযান। অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমর জেলোনস্কির অভিযোগ, রাশিয়ার এই হামলা সভ্যতা ধ্বংসের চেষ্টা, যার জন্য দায়ী থাকবে রাশিয়া।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়াার সামরিক অভিযান ঠেকাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সর্বোচ্চ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। রাশিয়া যে ইউক্রেনে সামরিক হামলা চালাবে সেটা অনেক আগে থেকেই বলে আসছিলো যুক্তরাষ্ট্র। এবং হামলা ফেরাতে বহু চেষ্টা তারা ক‚টনৈতিকভাবে করেছে। এমনকি যুদ্ধ শুরু করলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে বলেও আগে থেকেই বলে আসছিলো যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সব হুমকি আর নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালায়।
রাশিয়া যে ইউক্রেনে হামলা করবে সেটা বুঝতে পেরে বারবার তাদেরকে সতর্ক করে আসছিলো হামলা না করতে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, রাশিয়ার আচরণ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। কিন্তু তারপরও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়ে দিয়েছিলেন, ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা করলেও তারা সেখানে সৈন্য পাঠঅবে না। ইউক্রেনে অবস্থানরত সামরিক উপদেষ্টা এবং পর্যবেক্ষকদের আগেই ফিরিয়ে আনা হলেও বেসামরিক নাগরিক যারা ইচ্চঅকৃতভাবে সেখানে অবস্থান করবে তাদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য কোনো সৈন্য পাঠানো হবে না বলেও আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র নীতিগতভাবে ইউক্রেনকে সমর্থন করলেও নানা কারণে সেখানে যুদ্ধে জড়ানোর পক্ষে নয় তারা। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার চরম বিরোধী হলেও এই যুদ্ধে না জড়ানোর অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যদিও বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর এটাই নবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক ক‚টনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
যে কারণে যুদ্ধে সেনা পাঠাবে না যুক্তরাষ্ট্র
গত কয়েকমাস ধরেই ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলো যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো। সবাইর ক‚টনৈতিক প্রচেষ্টা ও অনুরোধ উপক্ষো করে রাশিয়া যখন এই হামলা চালায় তখন যুক্তরাষ্ট্র কেবল রাশিয়া এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ছাড়া আর কোনো স্বশস্ত্র পদক্ষেপে অংশ না নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র অতীতেও কখনোই তার রাষ্ট্রয়ি স্বার্থ ছাড়া কোনো দেশেই সৈন্য পাঠানোরও কোনো ইতহাস নেই। যেভাবেই হোক সেখানে সৈন্য পাঠালে বা যুদ্ধে অংশ নিলে দেশের স্বার্থটাকেই বড় করে দেখা হয়। কিন্তু ইউক্রেনে সে সরকম কোনো সরাসরি স্বার্থের বিষয় নেই। যদিও নানাভাবেই ইউক্রেনকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গত শুক্রবারও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনেরে প্রেসিডেন্ট জেলোনস্কির সাথে প্রায় ৪০ মিনিট টেলিফোনে কথা বলেছেন।
টেলিফোনে কথা বলে নানাভাবে দূর থেকে সহায়তা দেয়ার কথা বললেও যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে সরাসরি যাবে না। কারণ ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সীমান্তবর্তী দেশ নয়। ওই দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বড় কোনো বাণিজ্যও নেই। সেখানে নেই কোনো তেলের মজুদ। যে তেল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নিরাপদ রাখা জরুরী। অথবা ইউক্রেনের আশেপাশের কোনো দেশেও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি নেই। ফলে ইউক্রেনে হামলা মানবিক বিপর্যয় হলেও সেটা কৌশলগত কোনো নিরাপত্তার জন্য হুমনি নয় কলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে। যদিও এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক প্রেসিডেন্ট এমন অনেক যুদ্ধে জড়িয়েছেন, যেখানে তারা অন্যদেশের পক্ষে অনেক রক্ত এবং সম্পদ ক্ষয় করেছেন। যুগোশ্লাভিয়া ভেঙে যাওয়ার পর ১৯৯৫ সালে যে যুদ্ধ হয়েছিলো সেই যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করেছিলেন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন। ২০১১ সালে লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে একইভাে যুদ্ধে জড়িয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। কিন্তু সে সময় তিনি বলেছিলেন, মানবতা ও মানবাধিকার রক্ষার জন্যই সেখানে আমেরিকান সৈন্যদের প্রয়োজন ছিলো। ১৯৯০ সালে ইরাক কর্তৃক কুয়েত দখলের পর সেখানে জর্জ ডাবিøউ বুশ সৈন্য পাঠিয়েছিলেন। সেই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও তার মিত্ররা অংশ নিয়েছিলো। ওই দেশগুলেঅতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সীমানা না থাকলেও সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের নিজের এবং মিত্র দেশগুলেঅর স্বার্থ জড়িত ছিলো। তা ছাড়া ওই সব দেশ কোনো পরাশক্তি না। কিন্তু ইউক্রেনের সীমান্ত দেশ রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি। রাশিয়ার কাছে গিয়ে যে কোনো দেশের জন্য যুদ্ধ করে জয়লাভ করা শুধু কঠিন না এটা প্রায় অসম্ভব। রাশিয়ার আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে সেখানে অন্য দেশের যুদ্ধে জয়লাভ অসম্ভব বিষয়। ফলে ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধ করার চেয়ে তারা ক‚টনৈতিক সমাধানকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।
রাশিয়া যেসব বাধার মুখে পড়বে
যেহেতু ইউক্রেনের সমর্থক রাষ্ট্রগুলো সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে না সে কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নানা ধরণের অর্থনৈতিক অবরোধের পাশাপাশি আরও কিছু বিকল্প ভেবে দেখছে পশ্চিমা দেশগুলো। পশ্চিমাবিশ্ব মনে করছে যুদ্ধের চেয়ে বেশি ভয়াবহ হবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সর্বাত্বক অর্থনৈতিক অবরোধ গড়ে তোলা। সেটা হলে এমনিতেই বিনা রক্তক্ষয়ে রাশিয়াকে শায়েস্তা করা সম্ভব। আর সেদিকেই বেশি নজর দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। বিশ্ব মহামারি করোনা পরবতৃী এই সময়ে আপাতত কোনো যুদ্ধে জড়াতে চাচ্ছে না বাইডেন প্রশাসন। তাছাড়া বর্তমান প্রেসিডেন্টের যুদ্দ নিয়ে অনেক তিত্ক অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই অভিজ্ঞতাগুলো এখনও তার রাজনৈতিক জীবনের জন্য একটা বিষাদময় অধ্যায়। ৯০ এর দশকে বলকান অঞ্চলে জাতিগত যে যুদ্ধ চলছিল, সেই যুদ্ধে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সমর্থন ছিলো। ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধেও তিনি সমর্থন দিয়েছিলেন। যে যুদ্ধের শেষ পরিনতীর কথা সবাই জানে। বিশ্ব রাজনীতির অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ প্রেসিডেন্ট বাইডেন অতীত যুদ্ধের ফলাফল নিয়ে এখন আর নতুন করে কোনো দেশের বরিুদ্ধে যুদ্ধ করতে আগ্রহী নন।
সাবেক জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট বাইডেন যখন লিবিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেন, বাইডেন তখন তার বিরোধীতা করেছিলেন। আফগানিস্তানে আমেরিকানদের যুদ্ধে জেতা যখন কঠিন হয়ে পড়ে তখনও তিনি অতিরিক্ত সৈন্য পাঠানোর বিরোধীতা করেছিলেন। পরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে তিনি সেখান থেকে সৈন্য ফেরত আনার সিদ্ধান্ত নেন। যার পলে সেখানে আবারও নৈরাজ্যকর পরিস্থিরি সৃস্ঠি হলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। কিন্তু তারপরও যুদ্ধ যে শান্তি বয়ে আনতে পারে না সেই কথা মাথায় রেখেই তিনি সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়ে তার সিদ্ধান্তের প্রতি অটল থাকেন। এ নিয়ে তার অনেক সমালোচনাও হয়েছে। তবুও প্রেসিডেন্ট বাইডেন সব সমালোচনা মাথা পেতে নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থাকে চাঙ্গা করে অভ্যন্তরীন সমস্যা কাটিয়ে নিজের দেশকে আরও সমৃদ্ধিশালী করতেই বেশি আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। আর সে কারণেই সৈন্য পাঠিয়ে অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ না করে ’ বিকল্প ক‚টনৈতিক যুদ্ধ’ চালাতেই বেশি আগ্রহী বাইডেন প্রশাসন। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র শক্তিদের দ্বারা নানামুখী অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হবে রাশিয়াকে।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা শান্তি চায়
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা নিজেদের দেশের নিরাপত্তা প্রশ্ন ছাড়া আর যুদ্ধে জড়াতে আগ্রহী না। তারা মনে করে অন্যের জন্য যুদ্ধে গিয়ে নিজের দেশের সৈনিকদের ঝুঁকির মধ্যে না ফেলে বরং নিজেদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার দিকে সরকারের নজর দেয়া উচিত। এপি-এনওআরসি’র পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখো গেছে, ৭২ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন, রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের এই সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও ভূমিকাই নেয়া উচিত না। সরাসরি যুদ্ধ না করে মানবিক সাহায্য করা এবং অবরোধের মতো ক‚চনৈতিক যুদ্ধ করা যেতে পারে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে দ্রæব্যুল্যের উর্দ্ধগতি এখন আমেরিকানদের জন্য বড় সমস্যা। এর মধ্যে নতুন করে কোনো যুদ্ধে জড়ালে এই অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে। তাছাড়া শদ্যবর্তী নির্বাচনে জনগন কি চায় সে দিকেও বাইডেনের নজর রয়েছে। তবে এ মুহুর্তে যে আমেরিকানরা কোনো যুদ্ধের পক্ষে নয় সেটা সুষ্পষ্ট। শুধুমাত্র জনগনই নয়, রিপাকলিকানদের অনেক নেতাও এরই মধ্যে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, তারা এই মুহুর্তে যে কোনো যুদ্ধে বিরুদ্ধে। আর সেটা যদি আমেরিকানদের জড়িত থাকার ব্যাপার হয়, তাহলে সেটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। তাছাড়া রাশিয়া বিশ্বের পরাশক্তির অন্যতম একটি। যদি এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়ে তাহলে তার মিত্র শক্তিরাও অংশ নিবে। সেক্ষেত্রে একাধিক পরাশক্তির এই যুদ্ধ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের রুপ নিতে সময় লাগবে না।
অসহায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট
ন্যাটোর সদস্য না হয়েও দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেন তার দেশে ন্যাটোর স্বার্থপন্থী অনেকগুলো প্রকল্প পরিচালনা করে আসছে। ন্যাটোর সদস্যরাষ্ট্র বিশ্বের শক্তিশালী ৩০ টি দেশ নানাভাবে ইউক্রেনকে সাহস যুগয়েছে। তারা এমনভাবে কথা বলেছে তাতে মনে হয়েছে ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা করলে ন্যাটো ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হবার আগে ন্যাটোর হাতে গোনা দুতিনটি দেশ কিছু গোলাবারুদ আর হেলমেট পাঠিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতিতে ীঘ ঢেলেছে। কিন্তু যেদিন ইউক্রেনে হামলা হয়, তার পরদিন ইউক্রেনের প্রেডিন্টে জেলোনস্তি ন্যাটোর অন্তত ২০ জন রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের সাথে কথা বলেছেন। কিন্তু তাদের কথায় জেলোনস্তি হতাশ হয়ে, টুইটারে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে বলেন, ‘ এখন সবাই ইউক্রেনকে নাটোর সদস্য করতে ভয় পাচ্ছ্”ে তার এই কথার অর্থ ছিলো মূলত এখন রাশিয়াকেই ভয় পাচ্ছে ন্যাটো। বাস্তবতাও এখন সেটাই প্রমান করছে। কারণ ন্যাটোর অনেক রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান ইউক্রেনেনের প্রেসিডেন্টকে শান্তনা দেয়া ছঅড়া আর কোনো প্রতিশ্রæতিই দেননি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নিজেকে অসহায় বলে জানিয়েছেন। জেলনোস্তি চাচ্ছিলেন, যুদ্ধ শুরুর আগেই ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করা হোক। কারণ ন্যাটোর সামরিক চুক্তি অনুযায়ী সদস্য কোনো রাষ্ট্রে কেউ হামলা করলে সেটাকে নিজের দেশে হামলা বলে বিবেচনা করার কথা বলা রয়েছে। আক্রান্ত দেশকে অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলো সামরিক সহযোগিতা দিতে অঙ্গিকারাবদ্ধ। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর মুহুর্তে তারা সবাই নিরব ছিলো এবং ইউক্রেন এখনও ন্যাটোর সদস্য নয় বলে কেউ আর তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে যেতে পারছে না। ন্যাটো সামরিক জোটে ইউক্রেনেরে অন্তর্ভূক্তি অনিশ্চত হলে প্রেসিডেন্ট জেলোনস্তি হয়তো তার দেশে ন্যাটোর কোনো কর্মকান্ডই পরিচালনা করতেন না। আর সেটা না করলে রাশিয়াও ভয় পেয়ে আগে ভাগেই সে দেশে হামলা করার কারণ ছিলো না।
যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে শেষ হবে
রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার মধ্য দিয়ে যে যুদ্ধের শুরু করেছে সেই যুদ্ধ কি সহজেই শেষ হবে ? এই ফ্র¤œ এখন সামনে চলে এসেছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে তার দেশের সৈন্য না পাঠঅনোর বিষয়টি নিশ্চিত করলেও ইউরোপে এরই মধ্যে সৈন্য পাঠিয়েছে পূর্ব সতর্কতার অংশ হিসেবে। কারণ ইউক্রেন ও রাশিয়ার সাথে সীমান্ত রয়েছে অথচ ন্যাটোর সদস্য এমন বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র রয়েছে। ন্যাটোর চুক্তি অনুযায়ী কোনো সদস্য রাষ্ট্রে কেউ হামলা করলে সেখানে ন্যাটো রাষ্ট্রগুলো হস্তক্ষেপ করবে এবং সামরিক ব্যবস্থা নিতে হবে। রাশিয়া যদি মনে করে ইউক্রেনের পর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্য যেসব রাষ্ট্র ন্যাটোর সদস্য রয়েছে তাদের উপরেও হামলা করবে তাহলে কি হবে ? কারণ রাশিয়া চায় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের যেসব রাষ্ট্রকে ন্যাটোর সদস্য করা হয়েছে তাদেরকে ন্যাটো থেকে বের করে দিতে হবে। কারণ এটা রাশিয়ার জন্য হুমকি। ন্যাটো যাতে তার নতুন কোনো সদস্য রাষ্ট্র না করতে পারে সে জন্যই মূলক ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার এই হামলা। সুতরাং রাশিয়া ইউক্রেন তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলে নতুন করে সাবেক সোভিয়েনভ‚ক্ত কোনো ন্যাটো রাষ্ট্রে হামলা করতে পারে। আর সেটা হলে যুক্তরাষ্টসহ অন্য ন্যাটো রাষ্ট্রগুলোও যুদ্ধে জড়াতে বাধ্য হবে। সেই যুদ্ধ হবে দীর্ঘস্থায়ী।
যুদ্ধ নিয়ে এখন যা হচ্ছে
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমনের পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্নস্থানে যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদ সমাবেশ হচ্ছে প্রতিদিনই। কিন্তু ইউক্রেনে এখন রাশিয়ার ব্যাপক হামলায় একাধিক ম শহর ব্যাপক ক্ষগ্রিস্থ হয়েছে। ইউক্রেনের সর্বত্র এখন অস্ত্রহাতে মানুষ। বিশ্ষে করে ইউক্রেনকে রক্ষা করতে সে দেশের বহু মানুষ অস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। অন্যদিকে রাশিয়ান সৈন্যরাও দেশটির বহু রাস্তায় সামরিক যান নিয়ে টহল দিচ্ছে।