মুক্তচিন্তা রিপোর্ট : এনওয়াইপিডি’র পুলিশ অফিসার সজলের বিরুদ্ধে তার সাবেক স্ত্রী রোকসানা আক্তারের দায়ের করা মামলা খারিজ করে দিয়েছেন বিচারক। এই খবর এখন পুরনো। কিন্তু এখন কি করবেন সজল ? মামলায় সজলের ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক যে ইমেজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সেটা কি তিনি ফিরে পাবেন ? তিনি কি রোকসানা আক্তার বা তার পেছনে যারা ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে ক্ষতিপুরণ মামলা করবেন ? সে সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া এখন সম্ভব না। সেটা জানার জন্য হয়তো অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছু সময়।
রোকসানা আক্তার যিনি রোকসানা মির্জা নামে অধিক পরিচিত কমিউনিটিতে। এই রোকসানার সাথে ভালোবাসার পরিনতিতে পরিনয়ে আবদ্ধ হন এনওয়াইপিডি’র পুলিশ অফিসার সজল রায়। রোকসানাও কমিউনিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান করেন। সজল গান করেন, পিয়ানো বাজাতে পারেন, গিটারও বাজান। গানও লিখেন। পরিচয় এবং আলাপ আলোচনার এক পর্যায়ে একে অপরকে ভালোবেসে ফেলেন। ধর্ম তাদের বাধা হয়ে দাড়াতে পারেনি। বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন তারা। এরপর ২০১৭ সালের শেষের দিকে বিয়ে করেন । সজল আগে বিবাহিত ছিলো না।
বিয়ের পর তাদের ভালোবাসার আয়না ভেঙ্গে যেতে বেশি সময় লাগেনি। যে আয়নায় তারা দুজন দুজনকে দেখতেন। মাত্র আড়াই বছরের মাথায় ২০২০ সালের জুন মাসে সজল ডিভোর্স ফাইল করলে তাদের ডিভোর্স কার্যকর হয় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে। কিন্তু তার আগে ২০২০ সালে ১৪ মে স্ত্রী রোকসানা তাকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে সজলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে ১৫ মে সজল গ্রেফতার হয়।
সজলের বিরুদ্ধে স্ত্রী রোকসানার মামলাটি কেবল একটি মামলা হিসেবে খালি চোখে দেখা গেলেও এর পেছনেও ঘটেছে অনেক কিছু।
মামলা চালাতে গিয়ে সজল এখন অনেকটাই নিঃস্ব। কারণ রোকসানা আক্তারকে মামলা চলাকালীন ভরণপোষন, রোকসানার আইনজীবির ফি, নিজের আইনজীবির ফি ছাড়াও দিতে হয়েছে দুই দফায় ৪২ হাজার পাঁচশ ডলার এবং ৪০ হাজার ডলারের দুটি চেক।
সজলের মা স্বরস্বতি মন্ডল জানিয়েছেন, তার ছেলের ডিভোর্সের ঘটনাকে কেন্ত্র করে এই বৃদ্ধ বয়সে বাংলাদেশে তাকে নানাভাবে নাজেহাল করা হয়েছে। তার অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে তার বাড়িতে অকারণে তল্লাশী চালিয়েছে। এর পেছনে কে ছিলো এবং কোন ক্ষমতাবলে তার কথায় দূতাবাসের কর্মকর্তা এ কাজ করিয়েছেন সেটা এখনও অজানা। তবে ওই কর্মকর্তার বিষয়ে নারীঘঠিত বহু অভিযোগ রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, নানাভাবে তার কাছে টাকার জন্য চাপ দিয়েছে একটি মহল। একইসাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য সজলের বৃদ্ধা মাকে অস্ত্র ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলো। অথচ সজলের বৃদ্ধা মা একজন সরকারী গেজেটেড কর্মকর্তা। সজলের মা জানিয়েছেন, ‘তিনি যখন নিউইয়র্কে বেড়াতে এসছিলেন তখন সজলের গুলিবিহীন পিস্তল হাতে একটি ছবি তুলেছিলেন রোকসানা। সেই ছবিটি দেখিয়েই প্রমান করার চেষ্টা করা হয় যে, ‘সজলের মা অস্ত্র ব্যবসায়ী।’ তিনি বলেন, সেই সময়ে আরও কিছু মানুষ কোনো কারণ ছাড়াই সজলের বিরুদ্ধে নানা কিছু বলে বেড়ায় এবং এক তরফা সংবাদ প্রচার করে।
মামলায় খালাস এবং পরবর্তী কোনও পদক্ষেপ আছে কিনা জানতে চাইলে সজল রায় জানান, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। যা বলার আমার এ্যাটর্ণী বলবেন।’ তিনি এর বেশি কিছু বলতে রাজী হননি। ক্ষতিপুরনের মামলা করবেন কিনা তাও জানাতে চাননি।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, যেদিন রোকসানাকে খুন করতে চেয়েছিলো বলে অভিযোগ করা হয়েছিলো সেদিন সজল ডিউটিতে ছিলেন। সেই তারিখ পাল্টিয়ে যখন অন্য তারিখের কথা বলা হয় সেদিন সজল সিনেমা হলে ছিলেন। এরপর আবার তারিখ বদল করা হয়। সজলের পরিবার ও বন্ধুরা বলেছেন, সজলকে হয়রানী করার জন্যই এ মামলা দায়ের করা হয়েছিলো।
এ বিষয়ে সজলের আইনজীবি স্টড লন্ডন জানিয়েছেন, একটা মিথ্যা অভিযোগে সজল গ্রেফতার হয়েছিলো। যেটা আদালতের রায়ে বুঝা যায়। কিন্তু এই কারণে সজলের যে আর্থিক ও সামাজিক ক্ষতি হয়েছে সেটা কিভাবে পুষাবে সেটা ভেবে দেখছেন।
উল্লেখ্য রোকসানা আক্তার গত বছর ওয়াশিংটন ডিসিতে ফোবানা কনভেনশনে লিবার্টি রেনোভেশনের সিইও মোহাম্মেদ এ আজাদের সাথে আংটি বদল করেন বলে সোস্যাল মিডিয়া ও সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়। এর পর থেকে তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিজেদের স্বামী-স্ত্রী বলে পরিচয় দিচ্ছেন। মিডিয়াতেও তাই লেখা হচ্ছে। অথচ নিউইয়র্ক শহরেই আজাদের স্ত্রী এবং ৬ এবং ৭ বছরের দুটি শিশু সন্তান রয়েছে। তাদের একজন ছেলে অন্যজন মেয়ে। ২০১১ সালে তাদের বিয়ে হয়েছিলো।
আগের স্ত্রীর সাথে ডিভোর্স হয়েছে কিনা এ বিষয়ে জানার জন্য মোহাম্মেদ এ আজাদকে ফোন করলে তিনি ফোনে এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। ডিভোর্স দিয়েছেন কি দেননি এই প্রশ্নের কোনো উত্তরও তিনি দেননি। অন্যদিকে নিউইয়র্কে বসবাসরত তার স্ত্রীর খালা জানিয়েছেন তারা কোনো ডিভোর্স লেটার হাতে পাননি। অথচ ২০২১ সাল থেকে মোহাম্মেদ আজাদের সাথে তার স্ত্রী ও সন্তানদের কোনো যোগাযোগ নেই। তারা কোনো ভরণ-পোষণও পান না।