মানুষ ও পশু-পাখির মধ্যে গভীর বন্ধন নতুন কিছু নয়। রূপকথা, কথকতা বা প্রচলিত গল্পেও এ ধরনের সম্পর্কের কথা শোনা যায়। কিন্তু তা যখন ঘটে বিশেষ কোনো প্রেক্ষাপটে, তা বিশেষ মাত্রা পায়।
সম্প্রতি ভারতের উত্তর প্রদেশের কানপুর চিড়িখানায় এক ব্যক্তির কাছ থেকে একটি সারস নিয়ে আসা হয়। বনবিভাগের দাবি ছিল, মানুষের কাছে থাকলে বিপন্ন প্রজাতির পাখিটি আরও বিপন্ন হবে। তাকে প্রাকৃতিক পরিবেশে রাখতে হবে।
চিড়িয়াখানায় আনার পর সারসটিকে একটি খাঁচায় রাখা হয়। এরপর খবর আসতে থাকে, সেখানে নয়নাভিরাম ওই পাখিটি ভালো নেই। পাখিটি সেখানে তেমন কিছু খাচ্ছে না। সারাক্ষণ মন খারাপ করে বসে থাকে।
এনডিটিভি জানায়, এমন খবর পেয়ে সারসটির পালক আরিফ খান মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) কানপুর চিড়িয়াখানায় যান। আরিফকে দেখা মাত্রই খাঁচাবন্দি সারসটির মধ্যে চনমনে ভাব তৈরি হয়। সারসটি পুরা খাঁচায় দৌড়াতে থাকে। পাখা ঝাপড়াতে শুরু করে। উড়াল দেওয়ার পথ খুঁজতে থাকে।
এই দৃশ্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর বিজিপির লোকসভার এমপি বরুণ গান্ধী সারসটিকে আরিফের কাছে ফেরত দাওয়ার দাবি জানান।
বুধবার (১২ এপ্রিল) এক টুইটে তিনি লেখেন, তাদের ভালোবাসা একদম নিখাদ। এমন একটি সুন্দর পাখি খাঁচায় থাকবে কেন? পাখিটি তো মুক্তভাবে ওড়ে বেড়াবে। পাখিটিকে মুক্ত আকাশে ছেড়ে দেওয়া হোক। ফিরিয়ে দেওয়া হোক তার স্বাধীনতা ও বন্ধু।
বরুণ গান্ধীর মন্তব্যের আগে সারসের পালক বন্ধু আরিফ খানের সঙ্গে দেখা করেন উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব।
উত্তর প্রদেশের বনবিভাগ ও বিজেপির সমালোচনা করে অখিলেশ যাদব বলেন, বিজেপি প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসাকে পছন্দ করে না। এটা মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা হোক, কিংবা মানুষ ও পাখির মধ্যে ভালোবাসা হোক। যারা অন্যকে কষ্ট দিয়ে সুখ পায় প্রকৃত বিচারে তারা কখনই সুখি হতে পারে না।
জানা গেছে, এক বছরেরও বেশি সময় আগে বিপন্ন অবস্থায় সারসটিকে উদ্ধার করেন আরিফ খান। এরপর আদর-যত্ন করে সেটাকে লালন করেন। সারসটিকে মুক্ত অবস্থায় রাখা হলেও এখন তা আরিফকে ছেড়ে কোথাও যায় না।
শুধু তাই নয়। সারসটি আরিফের এত ভক্ত হয়ে গেছে যে, সে যে দিকে যায়, সারসটিও সে দিকে যায়। আরিফ মোটরসাইকেল চালালে সারসটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে সঙ্গে যায়।
সারস ও আরিফের এ গভীর বন্ধনের অনেক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি