৫৫
খালিস্তানপন্থি শিখ নেতা হত্যাকান্ডের ঘটনায় চলছে জোরসোর তদন্ত। এ ঘটনায় ভারতকে সরাসরি দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো (৫১)। তবে বরাবরই নিজেদের সম্পৃক্ততাকে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ভারত। এতে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে দেখা দিয়েছে চরম তিক্ততা। চলমান এ টানাপোড়েনের মধ্যেই এবার হরদীপ সিং নিজ্জর (৪৫) হত্যাকান্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে। মঙ্গলবার ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অজ্ঞাত পরিচয়ের দুজন লোক ৫০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে নিজ্জরের শরীরে। নিজ্জরের হত্যাকান্ডের ভিডিওটি গুরুদুয়ারের সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে। ইতোমধ্যেই তদন্তকারীদের হাতে ৯০ সেকেন্ডের ভিডিওটি স্থানান্তর করা হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টের দাবি, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ভিডিওটিতে দেখা যায়, একটি ধূসর পিকআপ ভ্যান গুরুদুায়ারের কাছে পার্কিং থেকে বের হচ্ছে। সেই পিকআপে অবস্থান করছিলেন নিজ্জর। এ সময় সাদা একটি গাড়িও কাছাকাছি দেখা যায়। পরে সেটি হরদীপের পিকআপের পাশাপাশি চলতে থাকে। এরমধ্যে থেকে দুজন বেরিয়ে পিকআপটির দিকে যায়। এরপর পার্কিং থেকে সাদা গাড়িটি বের হয়ে দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যায়। বন্দুকধারী দুজনও একই দিকে দৌড়ে যায়। তদন্তকারীদের মতে, নিজ্জরকে লক্ষ্য করে ৫০টি গুলি ছোড়ে আততায়ীরা। এর মধ্যে ৩৪টি গুলিই তার শরীরে বিদ্ধ হয়। হরদীপকে হত্যার পর প্রথমে তার পিকআপের কাছে পৌঁচেছিলেন ভূপেন্দরজিৎ। এ প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গাড়ির কাছে গিয়েই তিনি চালকের পাশের দরজা খোলেন। সেখানে হরদীপ ছিলেন। তিনি তার কাঁধে হাত দেন। বুঝতে পারেন যে তিনি আর শ্বাস নিচ্ছেন না। ভূপেন্দরজিৎ সিং আরও বলেন, ‘চারপাশে রক্ত ও ভাঙা কাচ পড়ে ছিল। মাটি বুলেটে বিচ্ছুরিত ছিল। এর পরপরই গুরমিত সিং নামে মন্দিরের আরেক নেতা পিকআপ নিয়ে সেখানে আসেন। ভূপেন্দরজিৎ ওই পিকআপে ওঠার পর তারা বন্দুকধারীদের ধরতে বেরিয়ে পড়েন। মন্দিরের কমিটির আরেক সদস্যের নাম মালকিত সিং। হরদীপকে হত্যার সময় তিনিও ফুটবল খেলছিলেন। মাথা ঢাকা পোশাক পরা দুজনকে কাছের কুগার ক্রিক পার্কের দিকে দৌড়ে যেতে দেখেছিলেন তিনি। মালকিত সিং বলেন, দুজনকে দেখে শিখ বলেই মনে হয়েছে তার। একজনের উচ্চতা পাঁচ ফুটের সামান্য বেশি ও স্থূলকায়। আরেকজন ছিলেন চার ফুট লম্বা ও রোগা-পাতলা। দৌড়ে গিয়ে তারা একটি রুপালি গাড়িতে ওঠেন। ওই গাড়িতে আরও তিনজন অপেক্ষা করছিলেন। তাদের কারও চেহারা দেখতে পাননি তিনি। এরপর গাড়িটি সেখান থেকে চলে যায়। কানাডার কাছে শিখ নেতা হত্যার তথ্য চেয়েছে ভারত। শিখ নেতা হত্যাকান্ডে কানাডার কাছে ‘সুনির্দিষ্ট’ তথ্য থাকলে তা ভারতকে জানাতে বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে এক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন। জয়শঙ্কর বলেন, ভারত সরকার কানাডাকে বলেছিল, তারা হত্যার বিষয়ে যেকোনো প্রাসঙ্গিক অভিযোগ তদন্ত করতে প্রস্তুত এবং এই হত্যার পেছনে দিল্লির কোনো ভূমিকা নেই বলেও জোর দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কানাডিয়ানদের বলেছি বিচারবহির্ভূত হত্যা ভারতের নীতি নয়। যদি আপনাদের কাছে নির্দিষ্ট এবং প্রাসঙ্গিক প্রমাণ থাকে তবে তা আমাদের জানান। আমরা এটি তদন্ত করে দেখব। গত কয়েক বছরে কানাডায় অনেক সংগঠিত অপরাধ দেখা গেছে, যা বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি ও উগ্রপন্থার সঙ্গে জড়িত। কানাডায় জঙ্গি অপরাধ করছে। গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আপনারা যদি কোনো নির্দিষ্ট তথ্যের বিষয়ে কথা বলেন আমরা বহু তথ্য দিয়েছি।’