Home বাংলাদেশ অপরাধ করিনি, শঙ্কিত হবার কারণ নেই-ড. ইউনুস

অপরাধ করিনি, শঙ্কিত হবার কারণ নেই-ড. ইউনুস

Mukto Chinta
০ comment ৫৯ views

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা একটি দুর্নীতির মামলায় বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের ‘অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের’ অভিযোগে দায়ের করা মামলার বিষয়ে জানতে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করে। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিকদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগের ভিত্তিতে কলকারখানা পরিদপ্তর থেকে তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে দুদক মামলা দায়ের করেছিল।
সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আইনজীবীসহ দুদক কার্যালয়ে হাজির হন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ডক্টর ইউনূস তার স্বভাবসুলভ হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে দুদক কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করেন। বেলা সোয়া এগারোটার দিকে দুদক কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। বের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি কোনো অপরাধ করিনি। আর তাই এই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমি শঙ্কিত নই।’
ড. ইউনুসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন এ সময় সাংবাদিকদের বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই অধ্যাপক ইউনূস দুদকে হাজির হয়েছেন। তিনি তাদের সব কথার বা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তবে ড. ইউনুসের মুখেই কথা শুনতে চান সাংবাদিকরা। এ নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে তার আইনজীবিদের সামান্য বাক-বিতন্ডাও হয়। তবে ড. ইউনুসের হস্তক্ষেপে দুই পক্ষই শান্ত হয়।
দুদকের ভয়ে আপনি শঙ্কিত কী না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ইউনুস বলেন “আমি তো অপরাধ করি নাই, শঙ্কিত কেন হবো? শঙ্কিত হবার কোন কারণ আমি দেখছি না।” সাংবাদিকরা এ সময় আরও অনেক প্রশ্ন করেন তাকে। তবে তিনি বেশিকিছু বলতে রাজী হননি। তিনি বলেন, এটা একটা আইনগত বিষয়। তাই আমার আইনজীবি প্রশ্নগুলোর উত্তর দিলে ভালো হবে।
ড. ইউনুসের আইনজীবি আব্দুল্লাহ আল মামুন এ সময় বলেন, গত ৩০শে মে গ্রামীণ টেলিকম থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। দুদকের উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিং এর অভিযোগ এনে সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি করেন। এর আগে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ সংবলিত একটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠায়।
ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ২০২২ সালের ২৮শে জুলাই অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের কথা জানায় দুদক। অভিযোগগুলো ছিল অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ অর্থ লোপাট, শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধকালে অবৈধভাবে অ্যাডভোকেট ফি ও অন্যান্য ফির নামে ছয় শতাংশ অর্থ কর্তন, শ্রমিক কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দ করা সুদসহ ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩ টাকা বিতরণ না করে আত্মসাৎ। এছাড়া কোম্পানি থেকে দুই হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ।
ড. ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা তুলে ধরে বলেন, “গ্রামীণ টেলিকম একটি সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যার লক্ষ্য শিল্প কারখানা গড়ে তুলে বেকারত্ব দূর করা এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা। তাতে বলা আছে কেউ কোন মুনাফা নেবে না। এই মুনাফা উন্নয়নের জন্য একের পর এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য ব্যবহার করা হবে।”
কোম্পানি আইনের ২৮ ধারার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “আইনানুযায়ী যারা সমাজের কল্যাণের জন্য কাজ করবে তাদের কোন মুনাফা দেয় নিষিদ্ধ। তাই এই গ্রামীণ টেলিকম, কোম্পানি আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী একটি সিদ্ধ প্রতিষ্ঠান। এটা লেবার আইনে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি নয়, কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কোম্পানি আইনে।” গত সপ্তাহে এক চিঠির মাধ্যমে ড. ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে দুদকে তলব করা হয়।
ড. ইউনূসকে লেখা চিঠিতে বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদসহ ১৩ জন আসামির বিরুদ্ধে ২৫ দশমিক ২২ কোটি টাকা মানি লন্ডারিং মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আপনার বক্তব্য শোনা ও লিপিবদ্ধ করা প্রয়োজন। এ জন্য বৃহস্পতিবার ৫ অক্টোবর দুদক কার্যালয়ে উপস্থিত হবার জন্য অনুরোধ করা হয়।
ড. ইউনূস ছাড়াও অন্য যাদের তলব করা হয়েছে- তারা হলেন গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভিন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও এস. এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী। ট্রেড ইউনিয়ন মামলা দায়েরের পর, ২০২২ সালের ২৭শে এপ্রিল গ্রামীণ টেলিকম তাদের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরণের জন্য গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সঙ্গে একটি চুক্তি করে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, কর্মচারীদের লভ্যাংশ বিতরণের আগেই তাদের প্রাপ্য অর্থ আসামিরা আত্মসাৎ করেছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মো. নাজমুল ইসলামসহ গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ডের সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ই মে গ্রামীণ টেলিকমের ১০৮তম বোর্ডের সভায় ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের গুলশান শাখায় একটা ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত হয়। বোর্ড সভার হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত ৯ই মে হলেও হিসাব খোলা হয় একদিন আগে ৮ই মে। সূত্র: বিবিসি।
ওই সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টের শর্ত অনুযায়ী ও বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গ্রামীণ টেলিকম বিভিন্ন সময় ওই ব্যাংক হিসাবে ২৬ কোটি ২২ লাখ ছয় হাজার ৭৮০ টাকা স্থানান্তর করে। এরমধ্যে অ্যাডভোকেট ফি হিসাবে হস্তান্তর করা হয় এক কোটি টাকা। বাকি ২৫ কোটি ২২ লাখ ছয় হাজার ৭৮০ টাকা গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টরা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এরপর ২০২২ সালের ২৮শে জুলাই কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের চার অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এসব অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ড. ইউনূসের আইনজীবী বলেন, “গ্রামীণ টেলিকমের নিজস্ব কোন কার্যক্রম নাই। গ্রামীণ পল্লি ফোন কার্যক্রম, নোকিয়া হ্যান্ডসেটের বিক্রয়োত্তর সেবা দিয়ে তারা চলেন, তিন বছরের চুক্তি মাধ্যমে। শ্রমিকদেরও তিন বছরের চুক্তি দেয়া হয়। আমাদের পার্মানেন্ট স্ট্রাকচার নাই তাই তারা শ্রমিক কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিল পাওয়ার অধিকারী না।” তিনি আরও বলেন, “মামলার পর বাধ্য হয়ে আমরা শ্রমিকদের সাথে একটি সমঝোতা চুক্তি করে তাদেরকে পাঁচ শতাংশ দেয়ার কথা বললাম। চুক্তিতে সাত দিনের মধ্যে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে বলা হল। এই সময়ে কোম্পানির বোর্ড মিটিং ডাকা সম্ভব হয়নি। এই চুক্তি হয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশনায়, হাইকোর্টের অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়ে। অর্ডারটি নয় তারিখ প্রকাশ হবে। তাই বাধ্য হয়ে আট তারিখে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয় কোন টাকা জমা দেয়া ছাড়া। এরপর নয় তারিখ বোর্ডের সাথে ভার্চুয়াল মিটিং করে সব বলা হয়। অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতার ভিত্তিতেই দুদক গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সাত জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীরা কলকারখানা অধিদফতরে একটি অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগ তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে কলকারখানা অধিদফতর প্রতিবেদন পাঠায় দুদকে। অভিযোগগুলোর কিছু বিষয় দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ায় মামলার তদন্ত করেছে দুদক। তদন্তের অংশ হিসেবেই দুদক তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
তিনি জানান, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মাধ্যমে গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির শ্রমিক-কর্মচারীরা অভিযোগ দিয়েছেন। এখানে তদন্ত চলছে, আইনগতভাবে এখানে হয়রানির কোন সুযোগ নেই।। এ কারণে দুদকের বিরুদ্ধে ওঠা হয়রানির অভিযোগ সঠিক নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মাহবুব হোসেন আরও জানান, “দুদকের সিস্টেম হল তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযুক্তদের অবস্থান পরিস্কার করার জন্য, যেন ন্যয়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয় এজন্য তাদের চিঠি দিয়ে আহ্বান জানায়। তাদের সম্পৃক্ততা আছে কি নাই এটা তারা তাদের মতো বলেন। আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তা বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করবেন, তদন্তের শেষ পর্যায়ে প্রতিবেদন দেবেন। তদন্ত শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত মামলা কোন পর্যায়ে আছে সেটা জানার সুযোগ কোনোভাবেই নেই।”

You may also like

Leave a Comment

Muktochinta

Multochinta is a famous news media from New York. 

Subscribe my Newsletter for new blog posts, tips & new photos. Let's stay updated!

All Right Reserved. 2022 emuktochinta.com