আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গত শনিবার ৭ আগস্ট ইসরাইলের উপর হামাসের আক্রমনের পর এখন সেখানে চলছে ভয়াবহ যুদ্ধ। পাল্টা প্রতিশোধ নিতে ইসরাইলের লাখ লাখ সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে সীমান্তে। সেখান থেকে তারা ফিলিস্তিনের উপর একের পর এক বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে কোনো বিরতি ছাড়াই। গাজায় সব ধরনের বৈদ্যুতিক সংযোগ, গ্যাস, পানির লাইনও বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। ফলে ফিলিস্তিনে এক অসহনীয় অবস্থা বিরাজ করছে। শত শত আহত শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসাও দিতে পারছে না। বিশ্বনেতারা এখন দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। অনেকেই সমর্থন করছে ইসরাইলকে। আবার অনেকেই সমর্থন করছে ফিলিস্তিনীদের। সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, আল জাজিরা
ইসরায়েলে হামলা নিয়ে নতুন তথ্য
হামাসের উপনেতা সালেহ আল-আরুরি বলেছেন, শনিবার ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশ করার পর সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। বেসামরিক জনগণের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনী মিশে যায়।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যখন ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটি ভেঙে ফেলা হয় তখন দখলদার বাহিনী বিস্মিত হয়। তারা পুরোপুরি হতবাক হয়ে যায়। বিপুল সংখ্যক মানুষ, পুরুষ ও মহিলা, সশস্ত্র এবং নিরস্ত্র এক হয়ে যায়। ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
তিনি বলেন, এ জন্য আমরা কিববুতজিম ও অন্যান্য অবৈধ বসতিগুলোতে যাই। বেসামরিক নাগরিকদের সাথে কিছু নিরাপত্তা রক্ষী এবং সৈন্য এই কিববুতজিমের ভেতরে ছিল। এই কারণেই অনেক বেসামরিক নাগরিকের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
গাজায় আক্রমণ অব্যাহত রাখতে চায় ইসরাইল
ইসরায়েল জানিয়েছে, শনিবার থেকে গাজায় ৩৬০০ লক্ষ্যবস্তুতে তারা হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের বিমান বাহিনী এর আগে বলেছিল, ঘনবসতিপূর্ণ ছিটমহল গাজায় তারা ৬ হাজার বোমা ফেলেছে। ইহুদি বিমান বাহিনী এক্সে (আগের নাম টুইটার) বলেন, যতদিন প্রয়োজন হবে আমরা শক্তভাবে এবং নিরলসভাবে আক্রমণ চালিয়ে যাব।
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজা উপত্যকায় মানুষ গণহারে বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার বিমান হামলা ও বৃষ্টির মতো বোমাবর্ষণে বিপর্যস্ত সেখানকার মানুষ। প্রাণভয়ে ইতিমধ্যে প্রায় ৩ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন।
ইসরাইলী সেনা প্রধানের ব্যর্থতা স্বীকার
ইসরায়েলের সব প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে শনিবার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস হামলা চালায়। এরপর প্রশ্ন ওঠে ইসরায়েলের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে। অবেশেষে হামাসের হামলা ঠেকাতে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যর্থতার দায় স্বীকার করলো ইসরায়েলি সেনা প্রধান।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি বলেন, দেশ ও নাগরিকদের রক্ষার দায়িত্ব সেনাদের, কিন্তু সেটা ওই দিন সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমরা বিস্তারিত জানবো ও তদন্ত করবো। কিন্তু এখন সময় যুদ্ধের।
এদিকে হামাসের হামলায় এখন পর্যন্ত এক হাজার ৩০০ এর বেশি ইসরায়েলি নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। হামাসের হামলা ঠেকাতে ভূমি থেকে হামলা পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী। অন্যদিকে সংঘাত দীর্ঘ করতে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে হামাস।
গাজায়ও নিহতের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। সেখানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪০০ ছাড়িয়েছে।
গাজায় সেনা পাঠালে ইসরায়েলকেও চরম মূল্য দিতে হবে
গাজা সীমান্তের কাছে ব্যাপক সেনা, ট্যাংক ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র জড়ো করেছে ইসরায়েল। যে কোনো সময় উপত্যকাটিতে তারা হামলা চালাতে পারে। ইহুদিবাদী ইসরায়েল বলছে, হামলার প্রতিশোধ নিতে হামাসকে পৃথিবী থেকেই নিশ্চিহ্ন করে দেবে তারা।
তবে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ সাররাম আকবরজাদেহ বলেছেন, ইসরায়েল গাজায় সেনা পাঠালে তাদেরকে চরম মূল্য দিতে হবে। স্থল হামলার মাধ্যমে হামাস-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের কার্যত কোনো সমাধান আসবে না।
মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক এ বিশেষজ্ঞ অস্ট্রেলিয়ার ডেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক-প্রফেসর হিসেবে কাজ করেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল গাজায় স্থল অভিযান চায় না। গাজা থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর ইসরায়েল গাজা থেকে দূরত্ব রাখার চেষ্টা করছিল। তারা সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণ করেছে এবং এটি অবরুদ্ধ করেছে।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের জন্য গাজাকে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই ব্যয়সাধ্য। গাজায় সেনা পাঠানোর অর্থ হলো বাড়ি-বাড়ি যুদ্ধ। আর এ বিষয়টির জন্য সবাইকেই- ইসরায়েলি সেনা ও সাধারণ ফিলিস্তিনিদের চরম মূল্য দিতে হবে। বিষয়টি এমন নয় যা ইসরায়েল চায়। যদি তারা হামাসকে ধ্বংস করার লক্ষ্য ঠিক করে- তাহলে তাদের সেখানে সেনা পাঠানো ছাড়া কোনো উপায় নেই।
মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক এ বিশেষজ্ঞ আরও বলেছেন, হামাস হলো ফিলিস্তিনিদের একটি প্রতিক্রিয়া, সেসব মানুষের প্রতিক্রিয়া যারা যুগ যুগ ধরে দখলদারিত্বের মধ্যে আছেন। হামাস তাদের এবং স্বাধীন ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্ব করে। সংগঠন হিসেবে হয়ত হামাসকে ধ্বংস করা যাবে। কিন্তু তাদের জায়গায় চলে আসবে আরেক গোষ্ঠী।
সীমান্তে তিন লাখ সেনা মোতায়েন ইসরায়েলের
ইসরায়েল যে কোনো সময় গাজার ভেতর ঢুকে স্থল হামলা শুরু করতে পারে। এজন্য গাজা সীমান্তের কাছে তিন লাখ সেনা জড়ো করেছে তারা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী গাজায় হামলা চালাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। গাজার কাছে তারা সেনা ছাড়াও অসংখ্য ট্যাংক, কামান ও সামরিক বুলডোজার জড়ো করেছে।
তবে হামাস নেতা গাজী হামাদ বলেছেন, ইসরায়েল সেনাদের জড়ো হওয়া এবং গাজায় সম্ভাব্য হামলা নিয়ে তারা শঙ্কিত নয়। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, আমরা ভয় পাই না। আমরা শক্তিশালী মানুষ। এই অভিযান অব্যাহত রাখতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমাদের অনেক যোদ্ধা এবং সমর্থক আছেন; যারা আমাদের সহায়তা করতে চান।
তিনি আরও বলেন, এমনকি জর্ডান সীমান্ত, লেবানন এবং সব জায়গার মানুষ এখানে আসতে চায় এবং আমাদের জন্য লড়াই করতে চায়। গাজা কোনো (ফুলের) বাগান নয়। তারা যদি কোনো হামলা চালায় তাহলে এটি তাদের জন্য খুবই ব্যয়বহুল হবে।
গাজাভিত্তিক হামাসের এই নেতা আরও বলেন, অভিযান শুরুর পর আমরা ইসরায়েলে ১ হাজার ২০০ যোদ্ধাকে পাঠিয়েছি। যারা ইসরায়েলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে সমর্থ হয়েছে। ইসরায়েলের নিরাপত্তা, ইসরায়েলের গোয়েন্দা তথ্য এবং ইসরায়েল যে একটি সুপার পাওয়ার সেই ভাবমূর্তি নষ্ট করতে সমর্থ হয়েছে।
নেতানিয়াহু-ব্লিঙ্কেন যৌথ সংবাদ সম্মেলন
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তেল আবিবে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেছেন। নেতানিয়াহু ব্লিঙ্কেনকে তার সফরের জন্য ইংরেজি এবং হিব্রু উভয় ভাষায় ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ব্লিঙ্কেনকে নেতানিয়াহু বলেন, আপনার সফর ইসরায়েলের প্রতি আমেরিকার দ্ব্যর্থহীন সমর্থনের আরেকটি বাস্তব উদাহরণ। নেতানিয়াহু বলেন, সপ্তাহান্তে হামলার মাধ্যমে, হামাস নিজেকে সভ্যতার শত্রু হিসেবে দেখিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন বলেন, ইসরায়েলকে আরও সামরিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সেগুলো ইসরায়েলের পথে রয়েছে। ইসরায়েলকে আরও সহায়তা করার জন্য কংগ্রেসে একটি ‘প্রবল’ দ্বিদলীয় সমর্থন রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ইসরায়েলে আক্রমণ করার জন্য যেকোনো রাষ্ট্র বা অ-রাষ্ট্রীয় অভিনেতাদের সতর্ক করেন তিনি।
ইসরাইলের জনগন নেতানিয়াহুকে চায় না
হামাস যোদ্ধাদের ব্যাপক অনুপ্রবেশ এবং ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে শত শত মানুষ নিহতের জন্য সরকার ও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দায়ী বলে মনে করেন ইসরায়েলের প্রতি পাঁচজন ইহুদি নাগরিকের মধ্যে চারজন। ইসরায়েলে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত জরিপে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
জরিপ অনুসারে, জোটের ৭৯ শতাংশ সমর্থকসহ ৮৬ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, গাজা থেকে আকস্মিক হামলা দেশটির নেতৃত্বের ব্যর্থতা। অন্যদিকে ৯২ শতাংশ বলেছেন, যুদ্ধ উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।
অধিকন্তু, উত্তরদাতাদের প্রায় সবাই (৯৪%) বিশ্বাস করেন যে, নিরাপত্তা প্রস্তুতির অভাবের জন্য সরকারের দায়বদ্ধতা রয়েছে। ৭৫ শতাংশের বেশি বলেছেন, বেশিরভাগ দায় সরকারের।
সারা দেশ থেকে ৬২০ জন ইসরায়েলি ইহুদির ওপর এই জরিপ পরিচালিত হয়। এতে দেখা গেছে, বেশিরভাগ উত্তরদাতা মনে করেন, অপারেশন শিল্ডস অব আয়রন শেষ হওয়ার পর নেতানিয়াহুর পদত্যাগ করা উচিত।
৫৬ শতাংশের কিছু বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠ বলেছেন, যুদ্ধ শেষে নেতানিয়াহুকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। জোট সরকারের সমর্থক ২৮ শতাংশ ভোটার এই দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একমত।
ইসরাইলে হামাসের হামলা ছিলো নজীরবিহীন
গত শনিবার ভোরে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ঢুকে অভিযান শুরু করে গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের যোদ্ধারা। এতদিন ইসরায়েলের বিপক্ষে শুধুমাত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়েছে ফিলিস্তিন। শনিবারই প্রথমবারের মতো আগে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। ২০২১ সালের জুন মাসের যুদ্ধবিরতির পর প্রায় ২ বছর ধরে প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা শেষে এই হামলা চালায় হামাস।
প্রথমে মুহুর্মুহু রকেট ইসরায়েলে আঘাত হানে। এতে হতভম্ব হয়ে যায় ইসরায়েল। আর এই হামলা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটিকে খুব সহজেই ফাঁকি দিয়ে।
ইসরায়েল-গাজা সীমান্ত দেয়ালকে বলা হয় ‘স্মার্ট ফেন্স’,। বাংলায় অর্থ করলে দাঁড়ায় অত্যাধুনিক বেড়া বা নিরাপত্তা বেষ্টনি। অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তিতে সজ্জিত এই দেয়াল স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা লঙ্ঘনের কোনো চেষ্টা দেখলেই তা শনাক্ত করতে পারে। তবে সবকিছু ফাঁকি দিয়ে হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা।
এরই মধ্যে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল যুদ্ধ। বৃহস্পতিবার ষষ্ঠ দিনে প্রবেশ করেছে এই সংঘাত। অনতিবিলম্বে ইসরায়েলও পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। তারা ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। পাল্টা আক্রমণে দেশটি গাজায় মুহুর্মুহু বোমা বর্ষণ করছে। এরই মধ্যে ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২০০ জনে দাঁড়িয়েছে। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।
এছাড়াও ইসরায়েলের হামলায় পাঁচ হাজার ৬০০ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলে নিহত ছাড়িয়েছে ১৩০০। এর মধ্যে ২২০ সেনা সদস্য রয়েছে। আহত হয়েছে তিন হাজার ৩০০।
হামলার পরপরই নানা দিক থেকে অভিযোগ উঠতে শুরু করে, হামাসের এই হামলায় সহায়তা করেছে ইরান। তবে আসলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের হামলা দেখে ইরান নিজেই হতবাক হয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংগ্রহ করা গোয়েন্দা তথ্যে এমন তথ্যই উঠে এসেছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলা দেখে ইরানের প্রধান প্রধান নেতারা বিস্মিত হয়ে গেছেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংগ্রহ করা গোয়েন্দা তথ্যে প্রকাশ পেয়েছে।
যদিও এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে হোয়াইট হাউস তাৎক্ষণিকভাবে কোনো জবাব দেয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। অবশ্য হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান গত মঙ্গলবার বলেন, হামাসের এই হামলার সাথে ইরানের যোগসূত্রের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখনও নিশ্চিত নয়।
তিনি বলেন, “আমরা ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই প্রশ্নটি নিয়ে প্রতিদিন কথা বলছি। আমরা আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করছি যে, আমাদের কাছে এই বিষয়ে আরো কোনো তথ্য আছে কিনা।”
এছাড়া ইসরায়েলে হামাসের ভয়াবহ হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ নিজেও অস্বীকার করেছে ইরান।
পানি-জ্বালানি সংযোগের বিনিময়ে জিম্মিদের মুক্তি চায় ইসরাইল
ইসরায়েলের জ্বালানি মন্ত্রী ইসারয়েল কাটজ বৃহস্পতিবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, জিম্মিদের মুক্তি না দিলে গাজায় কোনো মানবিক সহায়তা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তু পৌঁছাবে না। কাটজ বিবৃতিতে বলেছেন, ইসরায়েলি অপহৃতদের ঘরে ফিরিয়ে না দিলে গাজায় কোনো বিদ্যুতের সুইচ অন হবে না, চলবে না কোনো পানির কলও। ইসরায়েলের দেড়শ’ নাগরিককে অপহরণ করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস যোদ্ধারা। গত শনিবার হামাসের চালানো হামলায় ইসরায়েলের ১২শ’ মানুষ নিহত হয়েছে। সেই হামলার পরই গাজাকে পুরোপুরি অবরুদ্ধ করার ঘোষণা দেয় ইসরায়েল।
শুক্রবার ফিলিস্তিনী নেতা মাহমুদ আব্বাসের সাথে বৈঠক ব্লিঙ্কেনের
ইসরায়েলে পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন জানাতে বৃহস্পতিবার তিনি সেখানে পৌঁছান। শুক্রবার ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ব্লিংকেন। প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের নির্বাহী কমিটির মহাসচিব হুসেইন আল-শেখ এ কথা জানিয়েছেন। মাহমুদ আব্বাসের ফাতাহ পার্টি ও গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী হামাসের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে। জর্ডানের বাদশা আব্দুল্লাহর সঙ্গেও মাহমুদ আব্বাসের সাক্ষাতের কথা রয়েছে বলে জানান ফিলিস্তিনি এক কর্মকর্তা। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ইসরায়েলের নেতাদের সঙ্গে বর্তমান সংঘাতের অবসানের বিষয় নিয়ে কথা বলবেন ব্লিংকেন। তবে তিনি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাননি।
ব্লিংকেনের পরিষ্কার বার্তা হলো, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে রয়েছে, সেটা আজ, আগামীকাল এবং ভবিষ্যতেও। হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার ও দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করে যাবে। তবে সেই সঙ্গে যুদ্ধে নিয়মকানুন রক্ষা ও বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ইসরায়েলকে তাগিদ দেবে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের যে নাগরিকদের হামাস জিম্মি করে রেখেছে, তাদের মুক্তির বিষয়ে ব্লিংকেনের আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাবে। তবে কীভাবে তাদের উদ্ধার করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
বাইডেনের মন্তব্যের সত্যতা মিলেনি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছিলেন, ইসরায়েলি শিশুদের শিরচ্ছেদ করছে হামাস এমন ছবি দেখেছেন তিনি। তবে দিন গড়াতেই তার সেই মন্তব্যের উল্টো তথ্য দিচ্ছে হোয়াইট হাউস। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এই ধরনের কোনো ছবি দেখেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বরং ইসরায়েলের সরবরাহ করা তথ্য থেকে এ মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
বুধবার বিকালে ইহুদি নেতাদের সঙ্গে এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন বাইডেন। শিশুদের শিরচ্ছেদের ছবি দেখেছেন, এমন নিশ্চয়তা দিয়ে তিনি বলেন, সত্যিই ভাবিনি যে আমি এটা দেখতে পাবো।
সোশ্যাল মিডিয়া ও কিছু সংবাদ প্রতিবেদনে এই ধরনের ছবি ছডড়য়ে পড়েছে। তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী তা নিশ্চিত করতে পারেনি।
জো বাইডেনের মন্তব্যের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। তখন হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, বাইডেন এ ধরনের কোনো ছবি দেখেননি। তিনি ইসরায়েলের প্রতিবেদনের উল্লেখ করেছিলেন।
জাতিসংঘের তথ্য: গাজায় লাখ লাখ মানুষ গৃহহারা
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলা ও বোমাবর্ষণে বিপর্যস্ত সেখানকার মানুষ। এরই মধ্যে প্রাণভয়ে প্রায় তিন লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ জন মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর দ্য কোঅর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় মানুষ গণহারে বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭৫ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ জন গৃহহারা হলেন।
গত শনিবার হামাসের আক্রমণের জবাবে প্রায় ২৩ লাখ জনবসতিপূর্ণ গাজা উপত্যকার বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করে ইসরায়েল। গাজায় বৃষ্টির মতো বোমাবর্ষণ করে যাচ্ছে ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহতের সংখ্যা এক হাজার ৪১৭ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ৪৪৭ শিশু ও ২৪৮ জন নারী রয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সিএএন জানায়, গাজায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৬ হাজার ২৬৮ জন।
অন্যদিকে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে প্রায় এক হাজার ৩০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন বলে গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে।
পাল্টাপাল্টি হামলায় নিহত মানুষের বেশির ভাগই বেসামরিক। ওসিএইচএ বলছে, বাস্তুচ্যুত মানুষের মধ্যে দুই লাখ ২০ হাজার বা দুই–তৃতীয়াংশ জাতিসংঘ পরিচালিত বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। আরও ১৫ হাজার মানুষ বাড়িঘর থেকে পালিয়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পরিচালিত বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। বাকি এক লাখের মতো মানুষ আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, গির্জা ও গাজা সিটির অন্যান্য আশ্রয়কেন্দ্রে গেছেন।
ইসরায়েলের বোমা হামালায় প্রায় দুই হাজার ৫৪০টি বাড়িঘর বিধ্বস্ত বা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এর বাইরে ২২ হাজার ৮৫০টি বাড়িঘর মোটামুটি বা হালকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বোমা হামলায় এভাবে বেসামরিক মানুষের অসংখ্য বাড়িঘর ধ্বংসের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
বিবৃতিতে ওসিএইচএ জানায়, বেপরোয়া বোমা হামলায় পয়নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নোংরা পানিতে সড়ক ডুবে গেছে। এতে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।
ইসরাইলি তথ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ
গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস-ইসরাইল যুদ্ধের মধ্যেই ইসরাইলের তথ্যমন্ত্রী গালিত ডিসতেল অ্যাতবারিয়ান বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেছেন। দৃশ্যত তার মন্ত্রণালয়ের হাতে কোনো ক্ষমতা না থাকার ক্ষোভে তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। তবে তিনি পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে কাজ করে যাবেন। উল্লেখ্য, লিকুদ পার্টির সদস্য গালিতকে চলতি বছরের প্রথম দিকে ওই পদে নিয়োগ করা হয়েছিল। তিনি লিকুদ পার্টির সদস্য। তার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিল বিশ্বের সাথে ইসরাইলের অবস্থান ব্যাখ্যা করার। কিন্তু তাকে তেমন কোনো দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এমনকি সপ্তাহখানেক আগে হামাসের সাথে যুদ্ধ শুরু হলে তার কাছ থেকে আরো কিছু দায়িত্ব কেড়ে নেয়া হয়।
তিনি বৃহস্পতিবার এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, তার মন্ত্রণালয় এখন ‘সরকারি অর্থের অপচয়ের’ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। তিনি তার মন্ত্রণালয়ের অর্থ দক্ষিণ ইসরাইলের নাগরিকদের দিয়ে দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এই অফিস দেশের জন্য, দেশের কল্যাণের জন্য কিছু করতে পারছে না।’