Home অর্থনীতি রোলেক্সের দাম কেনো এত বেশি?

রোলেক্সের দাম কেনো এত বেশি?

Mukto Chinta
০ comment ৮৪ views

অর্থনীতি ডেস্হাক : বিশ্তবে বিলাশবহুল ঘড়ির জগতে অন্যতম নাম রোলেক্স। ১৯০৫ সালে যাত্রা শুরু করা কোম্পানিটি বিশ্বে প্রথম ওয়াটারপ্রুফ বা পানিরোধী ঘড়ি প্রস্তুত করে। রোলেক্সের দামি ঘড়িগুলো সব কোটি টাকার ওপরে। আর সবচেয়ে কম দামি ঘড়িটির দামও বাংলাদেশি মুদ্রায় দুই লাখ টাকার বেশি।
রোলেক্সের সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়। তবে বর্তমানে বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে রোলেক্সের ৪ হাজারের বেশি ঘড়ির কারিগর এবং ১ হাজার ৮০০-এর বেশি অনুমোদিত খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ধনী ও অভিজাত পরিবারের সদস্য ছাড়াও গলফ, টেনিস, মোটর স্পোর্টসসহ ক্রীড়া ও বিনোদনজগতে রয়েছে রোলেক্সের ব্যাপক ব্যবহার।


রোলেক্স তার নিয়ন্ত্রিত উৎপাদন ও বিতরণ প্রক্রিয়ার জন্য পরিচিত; অর্থাৎ তারা ঘড়ি উৎপাদনের ক্ষেত্রে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য রাখে। তা সত্ত্বেও প্রতিবছর প্রায় আট লাখ রোলেক্স ঘড়ি তৈরি হয়। সব মিলিয়ে বর্তমানে ব্র্যান্ডটির সম্পদমূল্য ৭৯০ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ৮৫ হাজার ৩২০ কোটি টাকা।
রোলেক্সের প্রতিষ্ঠাতা হ্যানস উইলসডর্ফ। জার্মানিতে জন্ম নেওয়া এই উদ্যোক্তা শুরুতে সুইজারল্যান্ডের একটি ঘড়ির কোম্পানিতে কাজ করতেন। এ সময় ঘড়ি উৎপাদন ও বিপণন সম্পর্কে ভালো ধারণা পান তিনি। পরে তিনি যুক্তরাজ্যে স্থানান্তরিত হন। সেখানেই ১৯০৫ সালে নিজের শ্যালক আলফ্রেড ডেভিসকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘উইলসডর্ফ অ্যান্ড ডেভিস’ নামের ঘড়ি তৈরির কোম্পানি।
নাম নিয়ে উইলসডর্ফের মনে খুঁত খুঁত ছিল। তিনি আরও আকর্ষণীয় ও সব ভাষার লোকের জন্য সহজবোধ্য একটি নাম খুঁজছিলেন। পরে ১৯০৮ সালে তিনি কোম্পানির নতুন নাম দেন ‘রোলেক্স’। ব্রিটিশ সরকার ১৯১৫ সালে ঘড়ি রপ্তানিতে ৩৩ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলে লন্ডন থেকে সুইজারল্যান্ডে রোলেক্সের সদর দপ্তর সরিয়ে নেন উইলসডর্ফ।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতেও পকেটঘড়ির খুব প্রচলন ছিল। কিন্তু উইলসডর্ফ মনে করতেন দ্রুতই মানুষেরা পকেটঘড়ির পরিবর্তে হাতঘড়ির দিকে ঝুঁকবেন। সেই লক্ষ্যে উন্নত মানের নান্দনিক সব হাতঘড়ি বানাতে শুরু করে রোলেক্স। তার লক্ষ্য ছিল, সাশ্রয়ী মূল্যে উচ্চ মানের ঘড়ি তৈরি করা।
রোলেক্সের সাফল্যের যাত্রায় অন্যতম পালক যুক্ত হয়েছিল ‘পানিরোধী’ বা ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি তৈরির মাধ্যমে। রোলেক্সই বিশ্বে প্রথম এ ধরনের ঘড়ি তৈরি করে। ১৯২৭ সালে পানিরোধী ঘড়ির পেটেন্ট করার পর দীর্ঘ সময় একচেটিয়া ব্যবসা করে রোলেক্স। ১৯৪৫ সালে উইলসডর্ফ নিজের নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে রোলেক্সে থাকা তার শতভাগ মালিকানা সেখানে দিয়ে দেন। রোলেক্সের আয়ের বেশির ভাগ দাতব্য ও সামাজিক কাজে ব্যয় করা হয়।
বিভিন্ন সময়ে সাবমেরিনার, ডেটজাস্ট, টুডোর, জিএমটি মাস্টার, ডে-ডেট, মিলগাউসসহ বহু মডেলের ও বিশেষ উদ্দেশ্যে তৈরি ঘড়ি উপহার দিয়েছে রোলেক্স। এসব ঘড়ি বেশ জনপ্রিয় ছিল। যেমন ১৯৬২ সালে ‘রোলেক্স সাবমেরিনার’ নামের বিশেষ ডাইভিং ঘড়িটি পরে জেমস বন্ড সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন অভিনেতা শন কনরি। আবার জিএমটি মাস্টার ঘড়িটি আলাদা টাইম জোনে সময় ঠিক রাখতে উপযোগী করে তৈরি করা হয়। এটি পাইলট, নেভিগেটর ও আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের জন্য বিশেষ নকশায় তৈরি।
আইকনিক নকশা ও উন্নত মানের উপকরণ দিয়ে তৈরি রোলেক্স ঘড়িগুলো বিশ্বের ঘড়ির বাজারে অন্যতম বেঞ্চমার্ক হিসেবে বিবেচিত হয়। এসব ঘড়ি শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, একই সঙ্গে টেকসইও। রোলেক্স ঘড়ি তৈরিতে স্বর্ণ, হিরে, তামা ও প্ল্যাটিনামের মতো উন্নত মানের বিভিন্ন ধাতু ব্যবহৃত হয়।
রোলেক্সের বর্তমান সংগ্রহের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মডেলের একটি রোলেক্স জিএমটি মাস্টার টু আইস ঘড়ি। এটি ১৮-ক্যারেট সাদা সোনা ও প্রায় ৩০ ক্যারেটের হিরে দিয়ে তৈরি; যার দাম শুরু হয় ৫ কোটি টাকার ওপরে।
রোলেক্সের অভিজাত সব ঘড়ির দামই কোটি টাকার ওপরে। তবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ দামে বিক্রীত হয়েছে পল নিউম্যান ডেটোনা ঘড়িটি। ২০১৭ সালে এটি ১ কোটি ৭৮ লাখ ডলার বা প্রায় ১৯২ কোটি ২৪ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
রোলেক্সের কম দামি ঘড়িগুলোর দামও দুই লাখ টাকার ওপরে। যেমন রোলেক্সের ওয়েস্টার পারপেচুয়াল ডেট মডেলের ৩৪ মিলিমিটার ভিন্টেজ ঘড়ির দাম ২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার বা প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। আবার রোলেক্স ডেটজাস্ট মডেলের ৩১ মিলিমিটার ঘড়ির দাম ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা। সবকিছু মিলিয়ে রোলেক্স ঘড়ি যেন আভিজাত্য প্রকাশের পরিপূরক হিসেবে বিবেচিত হয়। এসব কারণেই রোলেক্স ঘড়ির দামও আকাশছোঁয়া।
তথ্যসূত্র: ফোর্বস, ব্রিলিয়্যান্স জুয়েলস, দ্য ওয়াচ কোম্পানি, মিলিয়েনারি ওয়াচেস ও রোলেক্সের ওয়েবসাইট।

You may also like

Leave a Comment

Muktochinta

Multochinta is a famous news media from New York. 

Subscribe my Newsletter for new blog posts, tips & new photos. Let's stay updated!

All Right Reserved. 2022 emuktochinta.com