মুক্তচিন্তা রিপোর্ট : নির্বাসিত সাংবাদিক ড. কনক সারওয়ারের বোন নুসরাত শাহরিন রাকা’র নিঃশর্ত মুক্তির আহবান জানিয়েছে ১৫টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। গত ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বরাবর সংগঠনগুলোর যৌথভাবে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের সঙ্গে সরকারের আচরণ পর্যবেক্ষণ করছে পুরো বিশ্ব। একইসাথে তারা বলেছে, “নির্বাসিত সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্য এবং সমালোচকদের সঙ্গে যে প্রতিশোধমূলক নীতি বাংলাদেশ সরকার অবলম্বন করছে সে জন্য তাদের সতর্ক হওয়া উচিত। পুরো বিশ্ব তাদের আচরণ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।” কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) তাদের প্রকাশিত এক রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, “র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের বিরুদ্ধে গুম, নির্যাতন এবং বিচারবর্হিভূত হত্যার যে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ প্রকাশ পেয়েছে তাতে করে আমরা শুধু রাকার মুক্তির বিষয়টিই নয় বরং তার নিরাপত্তার বিষয় নিয়েও উদ্বিগ্ন।আমরা বিচারকার্য শুরু করার আগে রাকার জেল থেকে মুক্তি এবং কনক সারওয়ারের ওপর বিচারিক হয়রানি বন্ধ করার আহবান জানাচ্ছি।”
যৌথ চিঠিতে রাকার মুক্তির আহবান জানিয়ে বলা হয়, “আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারি ১৫ গণমাধ্যম এবং মানবাধিকারের পক্ষে কাজ করা সংগঠন নির্বাসিত সাংবাদিক কনক সারওয়ারের বোনের জামিনের বিরোধীতা না করা, তার আইনজীবিদের সহায়তা দেয়া এবং সংশ্লিষ্ট আদালত যেন দ্রæত মুক্তির ব্যবস্থা করে দেয় সে আহবান জানাচ্ছি।” সাংবাদিকদের মুক্তমত প্রকাশের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের অন্যতম বিতর্কিত ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিলের তাগাদা দিয়ে চিঠিতে বলা হয়, “আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং মুক্ত মতপ্রকাশের নীতি সংশোধন না করার পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার যেন ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিল করে।”
আরও বলা হয়, রাকার গ্রেফতার ও মানসিক নির্যাতন এ বার্তাটাই দিচ্ছে যে, বাংলাদেশে কিংবা দেশের বাইরে যেখানেই হোক গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে সহিংস যেকোন উপায়েই কর্তৃপক্ষ তা দমন করবে। সাংবাদিক কনককে সরকারের হয়রানির বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়, “নির্বাসনে থেকেও রিপোর্টিং করার কারণে সাংবাদিক কনক সারওয়ারকে ভয় দেখানো এবং হয়রানি করতে বাংলাদেশ সরকারের যে নগ্ন আচরণ দেখা গেছে তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।”
চিঠিতে গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় কাজ করা যেসব সংস্থা স্বাক্ষর করেছে তারা হচ্ছে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ , রিপোটার্স উইদাউট বর্ডারস , ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ জার্নালিস্টস , কোয়ালিশন ফর হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ , রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস , একসেস নাউ, অ্যান্টি ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক , আর্টিকেল নাইনটিন, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, ক্যাপিটাল পানিশম্যান্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, পেন বাংলাদেশ এবং পেন আমেরিকা।
উল্লেখ্য গত বছরের অক্টোবর মাসের তিন সন্তানের জননী নুসরাত শাহরিন রাকাকে মিথ্যা মামলায় তার বাসা থেকে র্যাব ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে। একটি ফেসবুক আইডি থেকে রাকা সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছিলো বলেও সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিলো। অথচ ফেসবুক কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সাথে সাথেই বাংলাদেশ সরকার এবং গনমাধ্যমকে জানিয়েছিলো যে, ওই ফেসবুক আইডি রাকার’র না। এবং রাকা কখনোই ওই আইডি ব্যবহার করেননি। প্রকৃতপক্ষে ওটা ছিলো একটা ভ‚য়া আইডি। যেটি তৈরি করা হয়েছিলো কনক সারওয়ারের উপর প্রতিশোধ নিতে তার বোনকে নাজেহাল করার জন্য। রাকা’র গ্রেফতার নিয়ে দেশ-বিদেশে নিন্দার ঝড় উঠলেও বাংলাদেশের সবগুলো মিডিয়া সরকারের রোষানল থেকে বাঁচতে র্যাব এবং পুলিশের দেয়া তথ্যগুলোই পত্রিকায় এবং টিভিতে প্রকাশ করেছে। যার সাথে বাস্তবতার কোনোই মিল নেই। কনক সারওয়ারকে মানসিক চাপে রাখতে তার বোন রাকাকে বারবার রিমান্ডে নেয়া হয় মামলার কোনো ভিত্তি না থাকার পরেও।