৮১
নানা কারণে চলতি বছরের অক্টোবর মাসটিই হতে পারে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য টার্নিং পয়েন্ট। ১৫ বছর টানা ক্ষমতা ধরে রাখলেও আওয়ামী লীগ যা প্রত্যাশা করেনি তার অনেক কিছুই ঘটতে পারে এই মাসে। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে কিংবা কার অধীনে হবে, খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে কিনা, হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে কিনা তার সবকিছুই জানা যাবে এই মাসের মধ্যেই। দেশের একাধিক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অক্টোবর মাসের মধ্যেই দেশের রাজনীতিতে বড় ধরণের পরিবর্তনের আভাস পাচ্ছেন তারা। সরকার সমর্থিত রাজনৈতিক নেতারা সেটা প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও দেশী-বিদেশী একটা প্রচ্ছন্ন চাপ যে রয়েছে সেটা তাদের কথায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মুখে মুখে তারা কিছু হবে না বললেও নিজেদের মধ্যে একটা প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে। আর সরকারবিরোধীরা প্রাণপনে বিশ্বাস করছে অক্টোবর মাসের মধ্যেই অনেক অমিমাংসিত দাবির সমাধান হয়ে যাবে। তার মধ্যে রয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা অথবা একই আদলে তৈরি কোনো নির্বাচনী সরকার, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার। এরই মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যাবে। তিনি অক্টোবর মাসকে লক্ষ্য করেই বলেন, ‘দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে আসবে কিনা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব থাকবে কিনা কিংবা জনগন ভোটের মাধ্যমে তাদের নেতা নির্বাচিত করতে পারবেন কিনা সেটা আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই নির্ধারিত হয়ে যাবে।’ বরাবরের মতোই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ এই অক্টোবরেও ক্ষমতায় আছে, আগামী অক্টোবরেও থাকবে। তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘জনগন এখনও হাসিনাকেই চায়। সুতরাং আমরা ক্ষমতা কেনো ছেড়ে দেবো ? ক্ষমতা ছেড়ে দেবার কোনো কারণ দেখছি না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারেরও কোনো প্রয়োজন নেই বলে জানান তিনি। দুই দলের এই দুই নেতা মুখে যাই বলুন না কেনো উভয় পক্ষেই যে নির্বাচনী প্রস্তুতি রয়েছে সেটাও জানা যায় বিভিন্ন মাধ্যমে। আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে ভোট প্রার্থনা শুরু করলেও বিএনপি সেটা এখনও করেনি। তবে প্রস্তুতি রয়েছে। অতীতে যেমনই হোক আগামী নির্বাচন যে হাসিনা সরকারের অধীনে হচ্ছে না সেটা বিএনপি মোটামুটি নিশ্চিত। বিগত ১৫ বছরে বিএনপি নানা জুলুম, নির্যাতন আর মামলা-মোকদ্দমার মধ্য দিয়ে পার করলেও তৃণমূলে যে তারা আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী সেটা তারা বারবার প্রমাণ করেছে বলে তাদের ধারণা। কারণ শত বাঁধা বিপত্তির মধ্যেও বিগত এক বছরের সবগুলো সভা-সমাবেশই নেতা-কর্মিদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। বিপুল সমর্থন নিয়েও সরকার পতনে বাধ্য করতে না পারলেও সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের কঠোর অবস্থান সরকারবিরোধীদের সাহস যুগিয়েছে। মুখে স্বীকার না করলেও একের পর এক স্যাঙ্কশনে সরকার খুব একটা শক্ত অবস্থানে নেই এটা নিশ্চিত। সবশেষ দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের স্যাঙ্কশনে কারো নাম প্রকাশ না করা হলেও সরকারের মন্ত্রী, এমপি, আমলা, সাংবাদিকসহ অন্তত ছয় শতাধিক ব্যক্তির নাম রয়েছে। এরই মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞায় পড়ে বিমান বাহিনীর ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তার ছেলেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে যেতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের সময়ে নতুন ঘোষিত স্যাঙ্কশনের কারণে প্রধানমন্ত্রীর বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারেননি। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডন সফর শেষে দেশে ফিরে শেখ হাসিনা অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে পদত্যাগের ঘোষণা না দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলে বাংলাদেশের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হতে পারে। এ বিষয়ে শেখ হাসিনাকে অবহিতও করা হয়েছে। ফলে অক্টোবর মাসটিই হতে পারে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য টার্নিং পয়েন্ট।