Home 2nd Featured হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র সফরের পোস্টমর্টেম

হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র সফরের পোস্টমর্টেম

Mukto Chinta
০ comment ৫৩ views
১৫ বছরের রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০ বারেরও বেশি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন শেখ হাসিনা। করোনার কারণে দুই বছর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে না পারলেও অন্যান্যবার তিনি বিশাল বহর নিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন। এবারের সফরেও তার সাথে ছিলেন ১৬৮ জনের দল। রাষ্ট্রের অর্থে এলেও তাদের কোনো কাজে অংশ নিতে দেখা যায়নি। বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যাওয়ার জন্য আইনজীবিদের সাথে পরামর্শ শুরু করে দেন আসার পর থেকেই।

কেনো এত লম্বা সফর

বাংলাদেশে আর মাত্র তিন মাস পরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচন করতে চাইলেও বিএনপি ও সমমনা দলগুলো চাইছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অধীনে নির্বাচন। এ নিয়ে দেশে রাজনৈতিক চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। তার উপরে মানবাধিকার রক্ষা, বাক স্বাধীনতা নিয়েও রয়েছে আন্তর্জাতিক চাপ। সবার কাছে গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধ্য করতে যুক্তরাষ্ট্র একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে। সে সব চাপ মাথায় নিয়েই শেখ হাসিনা কেনো ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের বাইরে থাকছেন তা নিয়ে রয়েছে নানা ব্যাখ্যা। যদিও এই সময়ের মধ্যে জাতিসংঘের অধিবেশনে একটি লিখিত বক্তব্য দেয়া ছাড়া আর কোনো কাজই ছিলো না। তবুও তিনি নিউইয়র্কে ৫ দিন এবং ওয়াশিংটনে একটি বিলাশবহুল হোটেলের অধিকাংশ ভাড়া করে রাখেন ৭ দিন।

প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে লুকোচুরি

প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের কর্মসূচি নিয়ে লুকোচুরি খেলা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি কেউই স্পষ্ট করে বলেননি প্রধানমন্ত্রীর কি কি কর্মসূচি আছে? কবে কি আছে বা কার কার সাথে বৈঠক আছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এবং জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেছেন, ‘আমরা এখন কিছুই বলতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রী জানেন। তবে তারা শুধু বারবার বলার চেষ্টা করেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিশেষ আমন্ত্রণে জাতিসংঘে এসেছেন। অথচ জাতিসংঘে আসার জন্য বাইডেনের আমন্ত্রণের কোনো প্রয়োজনও নেই। এটা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের করারও কথা না।

হাসিনার সফরকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে কোন্দল

ক্ষমতার শেষ সময়ে এসে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এখন কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক গ্রুপ কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সোবহান গোলাপের অনুসারী। আর এক গ্রুপ করেছে সব দুর্নীতিবাজরা মিলে। যারা শেখ হাসিনার সাথে ঘনিষ্টতার সুযোগ নিয়ে নানা আর্থিক দুর্নীতি করে কেন্দ্র থেকে বিতাড়িত। তারাই আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এসে নতুন গ্রুপ তৈরি করে হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত হয়েছিলো। সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঘনিষ্ট বলে পরিচিত বর্তমান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের এক গ্রুপ। আরেক গ্রুপ মহানগর আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র আসার আগে থেকেই দলের কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। শেষ পর্যন্তও অবশ্য সেটা মেটানো যায়নি।

আ্ওয়ামী লীগ নেতারা আতঙ্কে

শেখ হাসিনার সফরের মাঝপথে নতুন স্যাঙ্কশনের খবরে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে হতাশার ছাপ দেখা গেছে। ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে ভাষণ দেয়ার সময় যখন নতুন স্যাঙ্কশনের খবর পাওয়া যায় তখন বাইডেনের সাথে শেখ হাসিনার বিশাল ছবি ঝুলিয়ে ‘মিট দ্যা প্রেস’র আয়োজন চুড়ান্ত। ফলে স্যাঙ্কশন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কঠোর কথা বললেও শেখ হাসিনার পেছনে বাইডেনের ছবি জ্বলজ্বল করছিলো। একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভারতে বাইডেনের নেয়া একটি সেল্ফিকে কেন্দ্র করে ওবায়দুল কাদের দলের নেতা-কর্মিদের যতটা উজ্জীবিত করতে পেরেছিলেন, নতুন স্যাঙ্কশন ততটাই হতাশ করেছে। তারা কল্পনাও করতে পারেননি যে, তাদের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালেই নতুন স্যাঙ্কশনের ঘোষণা শুনতে হবে।

বিলাশবহুল রিজ কার্লটন কেনো ভাড়া করা হলো

রাষ্ট্রের অর্থে ভার্জিনিয়াতে বিলাশবহুল রিজ কার্লটন হোটেল ভাড়া করা হলেও সেখানে থাকেননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি থেকেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বাসায়। ২৩ তারিখ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত টানা ৭ দিন এই হোটেলের বিল গুনতে হয়েছে বিপুল পরিমান অর্থ। যদিও ওয়াশিংটনে ৭ দিন অবস্থানকালে নেতা-কর্মিদের সাথে একটি মত বিনিময় করা ছাড়া আর কোনো অনুষ্ঠানই ছিলো না। তাহলে কেনো এই বিলাসবহুল হোটেলটি ৭ দিন ভাড়া করে রাখা হলো সেই প্রশ্ন তুলেছেন খোদ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।

শুধুমাত্র জন্মদিন পালনের জন্যই ওয়াশিংটনে ৭ দিন

১৯ তারিখ নিউইয়র্কে আসলেও প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন ছিলো ২৮ সেপ্টেম্বর। প্রতি বছর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে জন্মদিন পালন করতে পছন্দ করেন। আর সে কারণেই প্রতি বছরই তিনি জাতিসংঘের অধিবেশন শেষ হলেও অতিরিক্ত ৭ থেকে ১০ দিন ওয়াশিংটনে অবস্থান করেন। অথচ পৃথিবীর আর কোনো দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানরা ৫ থেকে ৭ জনের বেশি সফর সঙ্গি রাষ্ট্রীয় খরচে আনেন না। আবার তারা দু-চারদিনের বেশি থাকেনও না। ব্যতিক্রম কেবল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

ভার্জিনিয়ার গলফ ক্লাবে মায়ের জন্মদিন পালন করেন জয়

প্রতি বছর শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র সফরে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে সব সময়ই তার পাশে দেখা গেছে। কিন্তু এবার ছিলো তার ব্যতিক্রম। গত এক বছর ধরে জয় কোথায় আছে সেটা নিয়ে সবার মনেই আগ্রহ ছিলো। অনেকেই বলছেন জয় সিঙ্গাপুরে পালিয়ে আছে। কেউ কেউ বলছেন তিনি দুবাইয়ে আছেন। অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশের অনেক ব্যক্তির উপর নিষেধাজ্ঞার পর জয় ভয়ে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন। সেই সব সন্দেহকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলে মা’র সাথে তার অনুপস্থিতি। এবারের যুক্তরাষ্ট্র সফরে জয়কে কখনোই কোথাও দেখা যায়নি। বিলাসবহুল রিজ কার্লটন হোটেলেও দেখা যায়নি জয়কে। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, শেখ হাসিনা হোটেলে নয়, তিনি ছিলেন জয়ের ভার্জিনিয়ার বাসায়। জন্মদিনের পরের দিন জয় নিজেই তার ফেসবুক পেজে একটি ছবি শেয়ার করে লেখেন, ‘আমার ভার্জিনিয়ার গলফ ক্লাবে মা’র জন্মদিনে পরিবারের সাথে। সেই ছবিতে দেখা যায় পেছনে জয় দাঁড়ানো। সামনে তার মেয়ে। মাঝখানে মা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার বাঁ পাশে পুতুলের মেয়ে এবং মেয়ের জামাই। যদিও ছবিতে জয়ের স্ত্রী এবং সালমা ওয়াজেদ পুতুলকে দেখা যায়নি। পুতুল গত কিছুদিন ধরেই মায়ের সফরসঙ্গী হিসেবে বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র সফরেও মা শেখ হাসিনার সাথে পুতুলকে দেখা গেছে। জন্মদিনের এই ছবিতে পুতুলকে না দেখা যাওয়ায় ছবিটি গত বছরের বলে অনেকেই মনে করছেন।

প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গিরা কোথায়

প্রধানমন্ত্রীর সাথে সফরসঙ্গী হয়ে এসেছিলেন ১৬৮ জনের প্রতিনিধি দল। প্রধানমন্ত্রীর যে দু’একটি কর্মসূচি ছিলো সেখানে তাদের বেশিরভাগকেই দেখা যায়নি। অনেকেই নিউইয়র্কে নেমেই এখানে থেকে যাওয়ার জন্য আইনজীবির সাথে যোগাযোগ করেন। তাদের অনেকেই জানিয়েছেন, ‘তারা আর দেশে ফিরে যাচ্ছেন না।’ তারা বলেছেন, দেশের এই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রই হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। যারা সফরসঙ্গি হয়ে এসেও আর ফিরে যাচ্ছেন না তাদের মধ্যে বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছেন। এরই মধ্যে অনেকে নিউ ইয়র্ক থেকে অন্য স্টেটেও চলে গেছেন বলে জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রী না হতে পারলে হাসিনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দরজা বন্ধ

এবারে যাদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তাদের মধ্যে শেখ হাসিনার নাম রয়েছে এক নম্বরে। তার পরে শেখ হাসিনা পরিবারের প্রায় সব সদসস্যের নামই রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আগেই প্রস্তুত রাখা হলেও হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে সেটা প্রকাশ না করার চিন্তাই ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের। যুক্তরাষ্ট্র চাইছিলো জাতিসংঘের অধিবেশনে শেখ হাসিনার আগমন নিশ্চিত করা। কারণ জাতিসংঘের ভেতরেই আগামী নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনার মনোভাব শেষবারের মতো জানার ইচ্ছা ছিলো যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের। কিন্তু একটি অস্থায়ী ছোট্ট কক্ষে উজরা জেয়ার সাথে বৈঠকে শেখ হাসিনা তাদের সন্তুষ্ট করতে পারেননি। ফলে তখনই সিদ্ধান্ত হয় স্যাঙ্কশনের বিষয়টি ঘোষণা করার। এই স্যাঙ্কশনের ফলে শেখ হাসিনা পুনরায় প্রধানমন্ত্রী না হতে পারলে ভবিষ্যতে তার যুক্তরাষ্ট্রে আসার পথ বন্ধ হয়ে গেছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

You may also like

Leave a Comment

Muktochinta

Multochinta is a famous news media from New York. 

Subscribe my Newsletter for new blog posts, tips & new photos. Let's stay updated!

All Right Reserved. 2022 emuktochinta.com